দুই দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সফরের প্রথম দিনেই তিনি বৈঠক করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ডের সঙ্গে।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ফেরার পর চতুর্থ রাষ্ট্রনেতা নেতা হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলেন মোদী। এর আগে প্রথম সফরটি করেছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তারপর গিয়েছিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিরেরু ইশিবা ও জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ।
রিপাবলিকান ট্রাম্প গত মাসে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ফিরে অভিবাসী ও শুল্ক নিয়ে যে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন, তার জের ভারতকেও টানতে হচ্ছে। সেই কারণ মোদীর এই সফর গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
পাশাপাশি বাংলাদেশ নিয়েও দুজনের কথা বলার কথা রয়েছে। গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক রয়েছে নাজুক অবস্থায়।
এনডিটিভি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার মোদী ওয়াশিংটনে পৌঁছনোর পর বিমানবন্দরে তাকে জানানো হয় উষ্ণ অভ্যর্থনা। তিনি উঠেছেন ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অতিথিশালা ব্লেয়ার হাউজে।
প্রচণ্ড শীত ও হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির মধ্যে মোদীকে অভ্যর্থনা জানাতে ব্লেয়ার হাউজের বাইরে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় আমেরিকানরা। ‘মোদী-মোদী’ রবের সঙ্গে তারা স্লোগান তুলছিলেন- ‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘বন্দে মাতরম’, ওড়াচ্ছিলেন ভারতের পতাকা।
সফরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি ইলন মাস্কের সঙ্গেও আলোচনায় বসবেন মোদী। ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন ধনকুবের মাস্ক।
এনডিটিভি জানিয়েছে, দ্বিপক্ষীয় আলোচনা গুরুত্বের সঙ্গে উঠবে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্ক আরোপ নিয়ে। কেননা, এই শুল্ক আরোপ ভারতের রপ্তানির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
এছাড়া অভিবাসন, বিনিয়োগ, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি খাত নিয়েও আলোচনা করবেন ট্রাম্প ও মোদী।
এশিয়া ও প্রশানন্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হবে, সেখানে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসতে পারে বলে আগেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
সফরের প্রথম দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্সের পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদী। তারা দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নানা দিক নিয়ে কথা বলেন।
সেনেটের অনুমোদনের পর নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পরদিনই তুলসি গ্যাবার্ডের সঙ্গে বৈঠকে বসে তাকে অভিনন্দন জানান মোদী।
৪৩ বছর বয়সী তুলসি গ্যাবার্ড যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের প্রথম হিন্দু সদস্য। এক সময়ের ডেমোক্রেট নেতা গ্যাবার্ড যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতেও কাজ করেছিলেন।
ডেমোক্রেটিক পার্টি ছেড়ে এ বছরের আগস্টে গ্যাবার্ড আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। এরপর অক্টোবরে উত্তর ক্যারোলাইনায় ট্রাম্পের এক সমাবেশে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগদানের ঘোষণা দেন।
ভারত সরকার ও মোদীর সঙ্গে তুলসি গ্যাবার্ডের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। মোদীর সঙ্গে তিনি একাধিকবার দেখাও করেছেন। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে গ্যাবার্ড উত্তর প্রদেশের বারানসিতে ভারত সরকারের বার্ষিক প্রবাসী ভারতীয় দিবসে সম্মানিত অতিথিও ছিলেন।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনট ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন মোদী। ওয়াশিংটন সময় বিকালে হোয়াইট হাউসে এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীর সম্পর্কের রসায়ন বৈশ্বিক রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল চর্চিত একটি বিষয়। এবার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এটা মোদীর দশম যুক্তরাষ্ট্র সফর। ২০১৪ সালে তার প্রথম সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ওয়াশিংটনে এনিয়ে চতুর্থবার মোলাকাত হবে তার।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে মাস্কের সঙ্গে মোদীর বৈঠকের কথা রয়েছে। এছাড়া তিনি ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সভায়ও যোগ দেবেন তিনি।