Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

ঢাকায় বিক্ষোভে ব্যাটারি রিকশার চালকরা

ঢাকার মহাখালীতে বৃহস্পতিবার সকালে রেলগেইট অবরোধ করে ব্যাটারি রিকশার চালকরা।
ঢাকার মহাখালীতে বৃহস্পতিবার সকালে রেলগেইট অবরোধ করে ব্যাটারি রিকশার চালকরা।
[publishpress_authors_box]

হাই কোর্টের আদেশের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভে নেমেছে ব্যাটারি রিকশার চালকরা।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার পর থেকে মহাখালী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর এলাকায় সড়ক আটকে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।

মহাখালী রেল গেইট অবরোধ করায় ঢাকার সঙ্গে প্রায় গোটা দেশের ট্রেন চলাচলও বন্ধ রয়েছে।

প্যাডেল রিকশা মালিকদের এক আবেদনে হাই কোর্ট মঙ্গলবার ঢাকায় ব্যাটারি রিকশা চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধ করার আদেশ দিয়েছিল।

ওই দিন ব্যাটারি রিকশার ধাক্কায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর এই ত্রিচক্রযান বন্ধের পক্ষে অনেকই বলছিলেন; অবশ্য তার আগেই হাই কোর্টের আদেশ আসে।

আদালতের আদেশের পর বুধবার পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জে সড়কে বিক্ষোভ করেছিল ব্যাটারি রিকশার চালকরা। একদিন বাদে তা অন্য অংশেও ছড়িয়েছে।

সকাল ১১টার দিকে মহাখালী রেল গেইটে গিয়ে দেখা যায় কয়েকশ বিক্ষোভকারী রেল লাইনের ওপর অবস্থান নিয়ে আছে। ফলে ওই পথে ট্রেন ও গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল তখন।

ফার্মগেইট থেকে আসা গাড়িগুলো মহাখালী ডিওএইচএসের সামনে আটকে যায়। বনানী থেকে আসা কোনও গাড়ি যেতে পারছিল না ফার্মগেইট কিংবা তেজগাঁওয়ের দিকে। তেজগাঁওর দিকে থেকে কোনও গাড়ি বনানীর দিকেও যেতে পারছিল না।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে মো. সুমন নামে একজনের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাটারি রিকশা বন্ধ করা হচ্ছে বলে তারা জেনেছেন।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বাসে অ্যাক্সিডেন্টে মানুষ মরে না? ট্রেনে অ্যাক্সিডেন্টে মরে না? তাইলে শুধু কেন অটো বন্ধ করতে হবে?

ব্যাটারি রিকশা চলাচলের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “নইলে এতগুলো মানুষ যাবে কই?”

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা ধাওয়া দিয়ে বিক্ষোভকারীদের রেল গেইট থেকে সরিয়ে দেয়। তবে দুপুর সোয়া ১টার দিকে রেল গেইট এলাকায় গিয়ে আবারও বিক্ষোভকারীরা রেল লাইনে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

মহাখালী রেলগেইটে ব্যাটারি রিকশার চালকদের অবরোধের কারণে ট্রেন ও গাড়ি কোনও যানবাহনই চলতে পারছে না।
মহাখালী রেলগেইটে ব্যাটারি রিকশার চালকদের অবরোধের কারণে ট্রেন ও গাড়ি কোনও যানবাহনই চলতে পারছে না।

অনুমোদন না থাকলেও রাজধানীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি রিকশা। এর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ঢাকায় কতজন ব্যাটারি রিকশা চালান, তার কোনও হিসাব নেই। তবে ধারণা করা হয়, ২ লক্ষাধিক ব্যাটারি রিকশা রয়েছে ঢাকা শহরে।

রিকশা চালকসহ মালিক, মেকানিক, গ্যারেজ মালিক, চার্জিংয়ে জড়িত ব্যক্তি, ব্যাটারি ও পার্টস ব্যবসায়ী সবাইকে মিলিয়ে এই খাতের সঙ্গে জড়িত লোকের সংখ্যা ১০ লাখ হবে।

মিরপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকায়ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরা বিভিন্ন সড়কে সকাল থেকে মিছিল করছে বল খবর পাওয়া গেছে। তবে সড়ক অবরোধ করেনি তারা।

মোহাম্মদপুরের কয়েকজন ছাত্রকে মারধর করেছে বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া শিয়ামসজিদ মোড়ে বিক্ষোভকারীরা রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে।

গত মে মাসে ঢাকায় ব্যাটারি রিকশা বন্ধ করতে গিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু চালকরা বিক্ষোভ শুরু করলে তখন সরকার পিছু হটেছিল।

শিয়ামসজিদ মোড়ে বিক্ষোভকারীরা রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

সরকার পরিবর্তনের পর প্যাডেল রিকশার মালিকরা হাই কোর্টে রিট আবেদন করে ব্যাটারি রিকশা বন্ধের আদেশ চেয়ে। সেই আবেদনে মঙ্গলবার হাই কোর্ট তিন দিনের মধ্যে ঢাকার ব্যাটারি রিকশার চলাচল বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়।

প্যাডেল রিকশার চালকদের দাবি, অননুমোদিত ব্যাটারি রিকশার কারণে তাদের জীবিকায় টান পড়েছে।

ব্যাটারি রিকশা সংশ্লিষ্টরা চান, তাদের এই ত্রিচক্রযান বিআরটিএর নীতিমালার আওতায় আনা হোক।

গত মে মাসে ব্যাটারি রিকশা বন্ধের বিরুদ্ধে যখন চালকরা আন্দোলনে নেমেছিল, তখন একটি নীতিমালা তৈরির আলোচনা হয়েছিল। তার আগেও এমন কথা উঠেছিল, তবে তা কখনও আলোর মুখ দেখেনি।

রিকশা ভ্যান ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম নাদিম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “১০ বছরের বেশি সময় ধরে লাইসেন্সের জন্য আন্দোলন করছি। কিন্তু কেউ শোনে না।”

প্যাডেল রিকশার জন্য সিটি করপোরেশন লাইসেন্স দিয়ে থাকে। কিন্তু ব্যাটারি রিকশার অনুমোদন নেই বলে লাইসেন্স নেওয়ার কোনও সুযোগও নেই।

দুর্নীতি টিকিয়ে রাখতেই নীতিমালা হয়নি দাবি করে নাদিম বলেন, “এই রিকশাকে এতদিন লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। মূল কারণ ছিল পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের লুটপাট। প্রত্যেক রিকশায় কার্ড বাবদ মাসে ৭০০-১৫০০ টাকা নিত তারা। আমরা তো ভাবি, এই সরকার এই সমস্যার সমাধান করবে।”

কিন্তু এবার আদালতের আদেশ আসায় আইনি পথও দেখতে হচ্ছে তাদের।

নাদিম বলেন, “আমরা আইনি লড়াইয়ে থাকব। একইসাথে রাজপথেও এই আদেশের বিরুদ্ধে আন্দোলন করব।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত