দেশে এসে মিরপুরে শেষ টেস্টটা খেলতে চান সাকিব আল হাসান। এই কিংবদন্তির সেই স্বপ্ন পূরণ হোক-এমন ইচ্ছে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়াও। তবে এরই মাঝে বাস্তবতাটা স্মরণ করিয়ে দিলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল।
ভারতে সাকিবের পারফর্ম্যান্স আহামরি কিছু ছিল না। এমনকি চোখের সমস্যায় গত এক বছর ব্যাটিংটাও চেনা ছন্দে করতে পারছেন না সাকিব। আজ (শুক্রবার) গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সেটাই স্মরণ করিয়ে দিলেন আশরাফুল।
সাংবাদিকদের আশরাফুল বললেন, ‘‘সাকিব মিরপুরে শেষ টেস্ট খেলতে চেয়েছে। এখন যেহেতু ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন যে তাকে সেই সুযোগটা করে দেবেন, অবশ্যই আমি মনে করি যে দেওয়া উচিত। তার মতো একজন লিজেন্ড ক্রিকেটার দেশের মাঠে এসে সবার সামনে খেলে বিদায় নেবেন এটাই আশা করি। যদি সে এখন খেলতে চায়। কারণ ইন্ডিয়ার সঙ্গে টেস্ট ম্যাচে যে পারফর্ম্যান্স (ভালো ছিল না), সেখান থেকে যদি সে আবারও খেলতে চায় তাহলে তো ভেরি গুড। গত এক বছর ধরে সাকিব স্ট্রাগল করছে। ব্যাটিংয়ে যদি দেখেন যে তার ভিশনের কারণে (চোখের সমস্যায় ভালোভাবে দেখতে না পাওয়া), হেড পজিশনের কারণে যেভাবে আমরা সাকিব আল হাসানকে চিনি সেভাবে কিন্তু আমরা তাকে পাচ্ছি না।’’
নাজমুল হোসেন শান্ত এখন তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক। আর তিন ফরম্যাটে নেতৃত্ব পাওয়ার পর ব্যাটে ধার হারিয়েছেন শান্ত। এটাও বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটা সমস্যা বলে মনে করছেন আশরাফুল, ‘‘আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়েছে তিন ফরম্যাটে শান্তকে নেতৃত্ব দেওয়ার পর বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে আমরা ওর কাছ থেকে ব্যাট থেকে অতটা ভালো পারফর্ম্যান্স পাচ্ছি না। এই জায়গায় একটা বড় সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। লিটনের কাছ থেকেও আমরা যা আশা করি, ভালো করেছে বিশ্বকাপে ফিফটি আছে, ৩০-৪০ আছে-কিন্তু তার কাছ থেকে এর চেয়ে আরও ভালো কিছু আশা করি।’’
সবাই চেনা ছন্দে না থাকাতেই মাহমুদউল্লাহকে বিশ্বকাপের পর বাদ দেননি নির্বাচকরা। তবে ভারত সফরে ভালো কোনে ইনিংস খেলতে পারলে মাহমুদউল্লাহ যে এই ফরম্যাট থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন সেই অনুমানও করছেন আশরাফুল, ‘‘মাহমুদউল্লাহকে আমরা ২০২৩ বিশ্বকাপের পরে অটোমেটিক চয়েজ করে ফেলেছি টি-টোয়েন্টিতে। সে এখনও আছে। যেহেতু সাকিব নেই, শান্ত অতটা ভালো ফর্মে নেই। আমার মনে হয় এজন্য নির্বাচকরা এতটা ঝুঁকি নিতে পারেননি যে মিডলঅর্ডারে একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দিবে। জানি না যে নির্বাচকরা তাকে ২০২৬ বিশ্বকাপে পরিকল্পনা করছে কিনা। তবে অবাক হব না এই সিরিজে কোন একটা ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ ভালো একটা ইনিংস খেলে যদি বাংলাদেশ জয় পায় আর এরপর সে বলে আমি টি-টোয়েন্টি থেকে সরে যাব-এতে আমি অবাক হব না।’’
দলে যথেষ্ট বিকল্প না থাকায় মাহমুদউল্লাহকে নির্বাচকরা বাদ দেননি বলেও মন্তব্য করেছেন আশরাফুল, ‘‘পরের বিশ্বকাপে বয়স ৪০-৪১ হয়ে যাবে বলে মাহমুদউল্লাহকে সরিয়ে দিতে হবে -এমন না। সে যদি প্রতিটা ইনিংসে ভালো স্ট্রাইক নিয়ে খেলে তাহলে সমস্যা নেই। আফগানিস্তানের বিপক্ষে (বিশ্বকাপে) ইনিংসটার পর নির্বাচকরা যদি তার সঙ্গে বসতেন তাহলে হয়ত মাহমুদউল্লাহ সরে যেত। কিন্তু যেহেতু আমাদের বাকি খেলোয়াড়রা পারফর্ম করতে পারছেন না হয়ত ওইভাবে কেউ ডিসকাস করতে পারছে না। মাহমুদউল্লাহর জায়গায় যে ছেলেটা আসবে তাকেও তো পারফর্ম করে আসতে হবে। সেই পারফর্ম্যান্সটা নেই বলেই তো ফিউচারের জন্য আমরা প্রেজেন্ট বন্ধ করে দিতে পারব না। এজন্যই মনে হয় যে তাকে আমরা বিবেচনা করছি।’’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘বয়সটা আমি মনে করি যে ৪১ হবে বলে খেলতে পারবে না, এরকম না। সে যদি ফিট থাকে, পারফর্ম করে দলের চাওয়া পূরণ করতে পারে তাহলে দুই বছর পরে যদি প্ল্যান করে (অবসরের) তাহলে অবশ্যই সে খেলতে পারবে। কিন্তু আমি অবাক হব না এ কারণে বলছি যে টেস্টে আমরা দেখেছি, সে ১৫০ রানের একটা ইনিংস খেলে (হারারেতে) সরে গেছে। সে কিন্তু আরও দুই তিন বছর টেস্ট সহজে খেলতে পারত। কিন্তু ওর মনে হয়েছিল এটাই সময় তাই সরে গেছে। একইভাবে টি-টোয়েন্টিতেও একটা ভালো ইনিংস খেলে সরে যেতে পারে।’’
টেস্ট সিরিজে যাচ্ছেতাই খেললেও তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশের ভালো কিছুর আশা দেখছেন আশরাফুল, ‘‘ভারতের মাটিতে আমরা একটা টি-টোয়েন্টি জিতেছি (২০১৯, দিল্লিতে)। বিশ্বকাপে পারফর্ম্যান্স যাই হোক, আমরা জয়ের আশা করতেই পারি। ভারতের সিনিয়র অনেক খেলোয়াড় নেই এই সিরিজে আর আমাদের তিনজন ছাড়া বিশ্বকাপের দলটাই খেলছে। আশা করছি আমরা ভালো কিছু করতে পারব। আমাদের ব্যাটারদের দায়িত্ব নিতে হবে, যারা সেট হবে তারা যেন বড় ইনিংস খেলেন। শরিফুল যোগ দেওয়ায় বোলিংয়ের শক্তি বেড়েছে। তাসকিন, মুস্তাফিজরা ভালো করছে আগে থেকেই।’’