পুরান ঢাকার সরকারি কবি নজরুল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে রবিবার হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছিল যাত্রাবাড়ীর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) শিক্ষার্থীরা। এর জবাবে সোমবার ডিএমআরসিতে পাল্টা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করেছে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার দুপুর ১২টার পর কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে মোল্লা কলেজে গিয়ে হামলা চালায়। এ সময় মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। এতে কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
অভিজিত হাওলাদার নামে ডিএমআরসির একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর পুরান ঢাকার ন্যাশন্যাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ নভেম্বর মারা যায়। তবে ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ তুলে গত ২১ নভেম্বর ডিএমআরসির শিক্ষার্থীরা ন্যাশন্যাল মেডিকেলে যায় প্রতিবাদ জানাতে।
সেদিন প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের হামলা শিকার হওয়ার অভিযোগ তোলেন ডিএমআরসির শিক্ষার্থীরা।
এর প্রতিবাদে রবিবার ন্যাশনাল মেডিকেল ঘেরাওয়ের ‘সুপার সানডে’ কর্মসূচি দেয় ডিএমআরসির শিক্ষার্থীরা। পূর্বঘোষিত সেই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে রবিবার ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢুকে ব্যাপক ভাংচুর চালায় ডিএমআরসির শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে ঢাকা সিটি কলেজ, ধানমণ্ডি আইডিয়াল কলেজ, দনিয়া কলেজসহ আরও কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরাও হামলা-ভাংচুরে যোগ দেয়।
এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজেও হামলা চালায়। তাদের হামলা-ভাংচুরে রবিবার কলেজদুটি অনেকটা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়।
হামলার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের স্নাতক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা পুরো পরীক্ষা শেষ করতে পারেনি।
সেদিন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে টানা দেড় ঘণ্টা ধরে চলে হামলা ও লুটপাট। দুপুর দেড়টা থেকে ৩টা পর্যন্ত কলেজ দুটির দরজা-জানালার কাচ, আসবাবপত্র, ব্যক্তিগত গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করা হয়। নষ্ট করে দেওয়া হয় বই-খাতা-কাগজপত্র।
রবিবারের ডিএমআরসির শিক্ষার্থীদের ‘সুপার সানডে’ কর্মসূচির জবাবে সোমবার ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সেই ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচি পালনের জন্য সোমবার সকাল ১০টায় সময় নির্ধারণ করা থাকলেও সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কবি নজরুল কলেজের সামনে জড়ো হতে থাকেন কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের পাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুলের শিক্ষার্থীরা জানান, রবিবার তাদের ক্যাম্পাসে হামলার তদন্ত এবং রাষ্ট্রীয় কোনও উত্তর, সোহারাওয়ার্দী কলেজ এবং মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের পক্ষ থেকে সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে কোনও উত্তর না পাওয়ায় আজ (সোমবার) এই কর্মসূচি তাদের। তাদের সঙ্গে সরকারি সাত কলেজের সমর্থন রয়েছে বলেও দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কবি নজরুল সরকারি কলেজের জড়ো হওয়ার পর দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ যেসব কলেজের শিক্ষার্থীরা রবিবারের হামলায় জড়িত ছিল, তাদের বিচার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। দুপুর ১২টার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা যাত্রাবাড়ীতে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ অভিমুখে রওনা হয়।
কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা যাত্রাবাড়ীতে মোল্লা কলেজের সামনে গিয়ে প্রথমে ঢিল ছুড়তে শুরু করে। এতে কলেজ ভবনের সামনের কাচসহ জানালার কাচ ভেঙে যায়। এ সময় মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। এক পর্যায়ে লাঠিসোটা নিয়ে মোল্লা কলেজের ভেতরে ঢুকে পড়ে কিছু শিক্ষার্থী।
দুপুর আড়াইটায় এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলছিল।
ঘটনাস্থলে দেখা যায়, শুরুতে হামলাকারী শিক্ষার্থীরা কোনও প্রতিরোধের মুখে পড়েনি। দুপুর ১টার কিছু আগে তাদের ধাওয়া দেয় মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। তখন সংঘর্ষ শুরু হয়।
সংঘর্ষে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যকে দেখা গেছে। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।
পুলিশের ওয়ারী অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার মফিজুল ইসলাম বলেন, “পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত। আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।”
‘মেগা মানডে’ কর্মসূচি সম্পর্কে সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী আরাফাত রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “গতকাল (রবিবার) ‘সুপার সানডে’ ঘোষণা দিয়ে মোল্লা কলেজসহ অন্যান্য কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের ও কবি নজরুলের ক্যাম্পাসে ভাংচুর ও লুটপাট করে। এর জন্য ক্ষমা চাওয়া দূরের কথা, উল্টো রাতের বেলা তারা তাদের ফেসবুক গ্রুপগুলোতে এই হামলা নিয়ে হাসাহাসি করে, উস্কানিমূলক পোস্ট দেয়। তার প্রতিবাদে আমরা ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচি দিয়েছি।”
এ বিষয়ে কবি নজরুলের শিক্ষার্থী মুনতাসির রহমান বলেন, “ডিএমআরসি আমাদের ওপর হামলা করে চরম অন্যায় করেছে। এর ফল তাদের ভুগতে হবে। যারা হামলার সাথে জড়িত ছিল তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় না আনা হলে ডিএমআরসি আর তাদের জায়গায় থাকবে না। আমাদের এই প্রতিবাদী কর্মসূচি সারাদিনব্যাপী চলবে। তাদেরকে উচিত শিক্ষা দিয়েই আমরা খান্ত হব।”