‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে খুলনা থেকে গাড়িবহর নিয়ে ঢাকায় আসার পথে বাগেরহাটের মোল্লাহাটে আক্রান্ত হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি দল।
মঙ্গলবার দুপুরের ঠিক আগে সেখানে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। তাতে অন্তত ১৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকেও যেতে হয়েছিল সেখানে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অভিযোগ করেছেন, শেখ হাসিনার জেলার পাশের ওই এলাকায় পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
তবে পুলিশ বলছে, ‘সাইড দেওয়া নিয়ে’ একটি বাসের পরিবহনকর্মীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমর্থকদের কথা কাটাকাটির জেরে এই সংঘর্ষ বাধে।
দুপুরের পর সেখানে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। দুই ঘণ্টা বাদে মহাসড়কে গাড়ি চলাচলও পুনরায় শুরু হয়।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক বাগেরহাটের মোল্লাহাট হয়ে গোপালগঞ্জ পেরিয়ে এসেছে। মোল্লাহাটের পর কালীগঙ্গা নদী পেরুলেই গোপালগঞ্জ জেলার শুরু।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা হারিয়ে দেশান্তরী শেখ হাসিনার পৈত্রিক এলাকা গোপালগঞ্জ। ৫ আগস্টের পর তার পক্ষে ওই জেলায় কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলেছিল।
এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মঙ্গলবার বিকালে ঢাকায় শহীদ মিনারে সমাবেশ ডেকেছে। ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ নামের এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে সারাদেশ থেকে জনতাকে আসার আহ্বান জানানো হয়।
সেই সমাবেশে যোগ দিতে খুলনা থেকে বেশ কয়েকটি বাসে চড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সকালে ঢাকার পথে রওনা হয়।
কী ঘটেছিল?
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, ‘মার্চ ফর ইউনিটি’তে যোগ দিতে খুলনা থেকে ২৫টি বাস ঢাকার পথে রওনা হয়েছিল। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মোল্লাহাট উপজেলার মাদ্রাসাঘাট এলাকায় সংঘর্ষ বাধে।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা। এ সময় খুলনা-মাওয়া মহাসড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধীদের বাস মোল্লাহাট মাদ্রাসা ঘাট এলাকায় পৌঁছলে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা গাড়ি লক্ষ করে ইট নিক্ষেপ করে এবং গাড়ি থামিয়ে কয়েকজনকে মারধর করে। পরে শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা। তাতে ২০ জন আহত হয়।
শিক্ষার্থীদের বরাতে তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধীদের গাড়িবহর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোল্লাহাট অতিক্রম করার সময় আগে থেকে প্রস্তুত হয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। থানার সামনে ঘটনা ঘটলেও পুলিশ ছিল নীরব।
কেন ঘটেছিল?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধীদের যে ২৫টি বাস ঢাকায় রওনা হয়েছিল, তার একটি কিছুটা পেছনে পড়ে। ফকিরহাটের নওয়াপাড়া এলাকা থেকে শুরু করে মোল্লাহাটের একটি পাম্প পর্যন্ত ওই বাসটিকে যাত্রীবাহী আরেকটি বাস বারবার চাপ দিচ্ছিল।
“সাইড দেওয়া নিয়ে ওই গাড়ির লোকজনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই গাড়ির লোকজন ও স্থানীয় বাস কাউন্টারের লোকজন গাড়ি থেকে কয়েক শিক্ষার্থীকে নামিয়ে মারধর করেন। শিক্ষার্থীদের বহনকারী সেবা গ্রীন লাইন গাড়িটির কাচ ভাংচুর করেন। এনিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ বাধে।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদনেও সংঘর্ষের একই কারণ লেখা হয়েছে।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, বহরের পেছনে পড়া গাড়ির সঙ্গে অন্য একটি গাড়ির সাইড দেওয়া নিয়ে দুই পক্ষের কথা কাটাকাটি থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত।
কী বলছে বৈষম্যবিরোধীরা?
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন খুলনার সমন্বয়ক জহুরুল তানভীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফ্যাসিবাদীদের দোসররা’ এই আক্রমণ করেছে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুলনা থেকে শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের বহর ঢাকায় যাচ্ছিল। পথে আমাদের উপর হামলা করে আগে থেকে প্রস্তুত হয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা। অনেকে আহত হয়েছে। ফ্যাসিবাদী দোসররা এই আক্রমণ করেছে, স্থানীয়রা তাদের সহযোগিতা করে।”
আরেক সমন্বয়ক মিনহাজুল আবেদীন সম্পদও প্রথম আলোকে বলেন, “পরিকল্পিতভাবে এই হামলা করা হয়েছে। জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
বৈষম্যবিরোধীরা হামলাকারী হিসাবে আওয়ামী লীগকে দায়ী করলেও এই বিষয়ে দলটির কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকিরা অপ্রকাশ্যে রয়েছেন।
পুলিশ কী বলছে?
সংঘর্ষের ঘটনা জানতে যোগাযোগ করলে মোল্লাহাট থানার ওসি শফিকুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মূলত চলতি পথে দুটি বাসের সাইড দেওয়াকে নিয়ে কথাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটেছে। কথা কাটাকাটির মতো ছোট একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় স্থানীয় একটি বাস কাউন্টারের লোকজন।”
সংঘর্ষে ২০ জন আহত হওয়ার খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এলেও ওসি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় বিক্ষিপ্তভাবে আমরা ১৩ জন আহত হওয়ার খবর পেয়েছি।”
দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানান তিনি। সংঘর্ষ থামার পর বৈষম্যবিরোধীরাও ঢাকার পথে রওনা হয়ে যায়।
ওসি বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় কোনও পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়নি।