দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অবসর থেকে ফিরিয়ে এনে তাকে দেওয়া হয়েছিল জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবের পদ। এর কিছুদিন পার না হতেই সেই মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের কাঁধে উঠল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়িত্ব।
এর মাধ্যমে প্রায় দেড় মাস পর নতুন চেয়ারম্যান পেল দেশের দুর্নীতি প্রতিরোধের এই সংস্থাটি।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
একই সঙ্গে দুদকের নতুন দুই কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাফিজ আহসান ফরিদ।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮২ ব্যাচের সদস্য আবদুল মোমেন এর আগে গত ১৭ আগস্ট সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন।
তিনি ১৯৮২ সালে সহকারী কমিশনার হিসেবে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগ দেন। কর্মজীবনে তিনি মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এবং কেন্দ্রীয় প্রশাসনের অন্যান্য পদে দায়িত্ব পালন করেন।
আবদুল মোমেন ২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান ও বিমানের এমডি ছিলেন।
তার আগে নব্বইয়ের দশকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন তিনি। এছাড়াও তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০০৯ সালে যুগ্ম সচিব থাকা অবস্থায় তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার তাকে চাকরিতে ফিরিয়ে এনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের দায়িত্ব দেয়।
সেই পদ থেকে গত ৮ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন তিনি। পদত্যাগপত্রে ‘ব্যক্তিগত’ কারণের কথা উল্লেখ করেছিলেন।
এরপর থেকেই গুঞ্জন ওঠে যে, তাকে দুদকের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার সেই গুঞ্জনই সত্যি হলো।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ১৩ ধারার বিধানমতে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের বেতন, ভাতা, অন্যান্য সুবিধা ও পদমর্যাদা সুপ্রিক কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারকের এবং কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী ও হাফিজ আহ্সান ফরিদের বেতন, ভাতা, অন্যান্য সুবিধা ও পদমর্যাদা সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের একজন বিচারকের সমরূপ নির্ধারণ করা হলো।”
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি ক্রমশ জোরাল হয়ে ওঠে।
এরপর ব্যাপক রদবদলের মুখে পড়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা। সেই ধাক্কায় গত ২৯ অক্টোবর পদত্যাগ করেন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ ও দুই কমিশনার সাবেক জেলা জজ জহুরুল হক ও সাবেক সচিব আছিয়া খাতুন।