Beta
মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

হাজার কোটি টাকার বেশি রেমিটেন্স আসছে প্রতিদিন

ডলার
ডলার
[publishpress_authors_box]

অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় থাকা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক রবিবার রেমিটেন্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, নতুন বছরের দ্বিতীয় মাস এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অষ্টম মাস ফেব্রুয়ারির আট দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ৬৭ কোটি ১০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।

বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১২২ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৮ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৮ কোটি ৩৯ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ২৩ কোটি টাকা।

ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনে। মাসের বাকি ২০ দিনে (৯ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৩৪ কোটি ৮৪ লাখ (২.৩৫বিলিয়ন) গিয়ে ঠেকবে।

২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৭ কোটি ৪ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে ছিল ৮৬০ কোটি টাকা।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছিল। টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৩২ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৮ কোটি ৫১ লাখ ডলার; টাকায় ছিল এক হাজার ৩৯ কোটি টাকা।

এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ (২.৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসেছিল গত জুন মাসে, ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ (২.৫৪ বিলিয়ন) ডলার।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন। দ্বিতীয় মাস আগস্টে পাঠান ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার।

চতুর্থ মাস অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার। পঞ্চম মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার।

অর্থবছরের সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) হিসাবে এক হাজার ৫৯৬ কোটি ৭১ লাখ (১৫.৯৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি।

সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের সাত মাস আট দিনে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি) ১৬ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ১ হাজার ২৯৬ কোটি ৪২ লাখ (১২.৯৬ বিলিয়ন) ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল দেশে। পুরো অর্থবছরে (জুলাই-জুন) এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।

২০২২-২৩ অর্থবছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার।

২০২০-২১ অর্থবছরে আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা ছিল অর্থবছরের হিসাবে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স।

২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে জুলাই মাসে রেমিটেন্স কমেছিল। চলতি অর্থবছরের সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) মধ্যে কেবল জুলাই মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের কম রেমিটেন্স এসেছিল দেশে।

পরের ছয় মাসেই (আগস্ট-জানুয়ারি) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা ছয় মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স কখনই আসেনি।

জুলাইয়ের আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করে দেশে রেমিটেন্স না পাঠাতে সোশাল মিডিয়ায় কেউ কেউ প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে মাত্র এক দিন। শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে বিদায়ী সরকার। এরপর ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল।

ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। কয়েক দিন লেনদেন বন্ধের পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়। ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৯ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই বৈধ পথে তথা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে কোনও প্রবাসী আয় আসেনি।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর রেমিটেন্স প্রবাহে আরও ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের; রেমিটেন্স প্রবাহেও গতি ফেরে।

দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি মুদ্রার সংকট চলছে। কোভিড মহামারীর সময়ে আমদানি তলানিতে নামায় একপর্যায়ে দেশে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি খরচ অনেক বেড়ে যায়। একই সাথে প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় রিজার্ভ দ্রুত কমতে থাকে।

সংকট কাটাতে ও রিজার্ভ বাড়াতে প্রবাসী আয়সহ বিদেশ থেকে অর্থ আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত কয়েক মাসে এসব পদক্ষেপের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে এই সূচকে।

রিজার্ভ ২০.২০ বিলিয়ন ডলার

বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস হচ্ছে রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়। এই দুই সূচক বাড়ায় রিজার্ভ আবারও ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

গত ৯ জানুয়ারি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল।

আকুর দেনা শোধের আগে ৮ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

এক সপ্তাহ পর ১৫ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

পরের সপ্তাহে (২২ জানুয়ারি) বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে; গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।

২৯ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।

সবশেষ গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২০ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে, গ্রস হিসাবে যা ২৫ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।

প্রতি সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ‘সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে রিজার্ভ, রেমিটেন্স, রপ্তানি আয়সহ অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর হালনাগাদ তথ্য থাকে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত