Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

এখন যেভাবে কাটছে তাদের দিন

বাঁ থেকে- কে এম খালিদ, মোস্তাফা জব্বার, জাকির হোসেন ও মাহবুব আলী।
বাঁ থেকে- কে এম খালিদ, মোস্তাফা জব্বার, জাকির হোসেন ও মাহবুব আলী।
[publishpress_authors_box]

“ভোটের পর পরই আমি প্রফেশনে ফিরে গেছি। প্রফেশনে আছি। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ অ্যাডভোকেট। এখানে সারাদিন ব্যস্ততায় সময় কাটাই। সকালে আসি, রাত সাড়ে ১০টায় বাসায় ফিরি।”

কথাগুলো বলছিলেন মাহবুব আলী। শেখ হাসিনার গত সরকারে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। হবিগঞ্জ-৪ আসনে দুই বার সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। কিন্তু এবার শোচনীয়ভাবে হেরেছেন। ফলে মন্ত্রিসভার পাশাপাশি সংসদেও নেই তিনি।

পারিবারিকভাবেই আওয়ামী লীগে সম্পৃক্ত মাহবুব আলী। তার বাবা মৌলানা আছাদ আলী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহচর, পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন তিনি। হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

তার ছেলে মাহবুব আলী ছাত্রলীগে সক্রিয় হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে নামেন। আইন পেশা বেছে নিয়ে ১৯৮৬ সালে সুপ্রিম কোর্টে ওকালতি শুরু করেন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে প্রথম এমপি হন, একাদশ সংসদেও একই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

এখন মন্ত্রিত্ব ‘মিস’ করেন কি না- জানতে চাইলে মাহবুব আলী বলেন, “মন্ত্রিত্ব আলাদা কিছু বলে মনে করি না। দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করি। সফলতা-ব্যর্থতা আপনাদের ওপর।”

শুধু মাহবুব আলী নয়, শেখ হাসিনার টানা চতুর্থ মেয়াদের সরকারে বাদ পড়েছেন তৃতীয় মেয়াদের মন্ত্রিসভার অনেকে। ২০১৮ সালের সরকারে ৪৫ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ছিলেন। তাদের মধ্য থেকে ১৫ জন মন্ত্রী, ১৪ জন প্রতিমন্ত্রী ও দুজন উপমন্ত্রীসহ ৩১ জন নতুন মন্ত্রিসভায় নেই।

গত সরকারে মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, তাদের মধ্যে মাহবুব আলীর মতো কয়েকজন সংসদ সদস্যই হতে পারেননি এই বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হওয়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে। সংসদ সদস্য হলেও মন্ত্রিসভায় এবার স্থান হয়নি কারও কারও।

আবার গত বার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, তাদের মধ্যে কে এম খালিদ এবার দলের মনোনয়ন না পাওয়ায় নির্বাচনই করেননি। 

ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খালিদ সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ওই আসনে এবার আওয়ামী লীগ যাকে মনোনয়ন দিয়েছিল, সেই আবদুল হাই আকন্দও হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলামের কাছে।

পারিবারিক আবহে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা খালিদ ১৯৮০-১৯৮১ মেয়াদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। ২০০৮ সালে প্রথম সংসদ সদস্য হন তিনি।

এখন মন্ত্রিত্ব কিংবা সংসদ সদস্যপদও নেই, কেমন কাটছে দিন- জানতে চাইলে খালিদ বলেন, “আমাদের পারিবারিক ব্যবসা আছে। সেসব ব্যবসা দেখভাল করছি। ময়মনসিংহে মুক্তাগাছায় সময় কাটাচ্ছি। মাসের অর্ধেক সময় ময়মনসিংহেই কাটাচ্ছি।”

তবে রাজনীতি ছাড়ছেন না তিনি; বললেন, “রক্তে মিশে গেছে রাজনীতি।”

গত সরকারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাকির হোসেন। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িত তিনি। ২০০৮ সালে প্রথম এমপি হন। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর পান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।

খালিদের মতো জাকিরও এবার নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাননি। ফলে তিনিও মন্ত্রিসভা কিংবা সংসদ কোথাও নেই।

এখন সময় কাটে কীভাবে- জানতে চাইলে জাকির বলেন, “জনসাধারণের সঙ্গে আছি। নিজের সংসার, ব্যবসা-বাণিজ্য দেখভাল করে সময় কাটাচ্ছি। পাশাপাশি রাজনীতিটাও করছি।”

দলের সিদ্ধান্তে ভবিষ্যতে যে কোনও দায়িত্ব নিতে তৈরি আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “নেত্রী আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে, সেই দায়িত্ব পালন করেছি। ভবিষ্যতে দায়িত্ব যদি দেয়, কপালে যদি থাকে, তাহলে তো নিতেই হবে।”

গত সরকারে টেকনোক্র্যাট হিসাবে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন মোস্তাফা জব্বার। সংসদ সদস্য কখনোই ছিলেন না তিনি।

নেত্রকোণার সন্তান মোস্তাফা জব্বার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতিও ছিলেন তিনি।

এখন কীভাবে সময় কাটে তার- জানতে চাইলে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “মন্ত্রী যখন ছিলাম তখনও ব্যস্ত ছিলাম, যখন ছিলাম না তখনও ব্যস্ত।”

সেই ব্যস্ততা কী নিয়ে, তা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার প্রতিষ্ঠান দুটি সফটঅয়্যার নিয়ে কাজ করে। বাংলা সফটঅয়্যার। শিক্ষামূলক সফটঅয়্যার। সেগুলো নিয়ে আমাকে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। এগুলো নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়।”

সক্রিয় রাজনীতিতে না থাকলেও মন্ত্রিত্বটা আকস্মিকভাবে এসেছিল মোস্তাফা জব্বারের জীবনে।

সেই সময়টা মনে পড়ে কি না- প্রশ্নে তিনি বলেন, “মিস করার কিছু নাই। মন্ত্রী আমি আকস্মিকভাবে হয়েছিলাম। মন্ত্রী যখন ছিলাম, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। আবারও যদি ডাক পাই, তাহলে দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করে যাব।”

সিলেট অঞ্চলের দুজন এ কে এ আব্দুল মোমেন ও এম এ মান্নান গত সরকারে গুরুত্বপূর্ণ দুটি মন্ত্রণালয় সামলে এসেছিলেন, তবে এবার তারা সংসদ সদস্য হলেও মন্ত্রিসভায় নেই।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই মোমেন ২০১৮ সালে সিলেট-১ আসন থেকে এমপি হওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তার আগে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন তিনি।

এ কে এ মোমেন (বাঁয়ে) ও এম এ মান্নান।

মন্ত্রিত্ব হারিয়ে এখন সংসদ কাজেই ব্যস্ত বলে জানান মোমেন। তিনি বলেন, “যথেষ্ট ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। সংসদে সেশন চলে। সংসদীয় কমিটির মিটিং ডাকতে হয়। মন্ত্রী হওয়ার পর ব্যস্ততার কারণে অনেক লোকের সঙ্গে দেখা হয়নি। তাদের সঙ্গে দেখা করতে হয়।”

পাশাপাশি লেখালেখিও চালিয়ে যাচ্ছেন মোমেন। ‘ফরেন পলিসি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি বই লিখছেন তিনি।

মন্ত্রিত্ব হারানো নিয়ে কোনও খেদ নেই জানিয়ে মোমেন বলেন, “আই অ্যাম প্রাউড অব মাই ক্যারিয়ার। আই হ্যাভ নো রিগ্রেট।”

সাবেক আমলা মান্নান অবসর নিয়ে রাজনীতিতে নেমে ২০০৮ সালে সুনামগঞ্জ-৩ থেকে এমপি হন। ২০১৪ সালের সরকারে তাকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়, দপ্তর পান অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। ২০১৮ সালে পদোন্নতি পেয়ে হন পরিকল্পনামন্ত্রী।

১০ বছর পর মন্ত্রিত্বহীন জীবন নিয়ে মান্নান বলেন, “সারা বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে সময় কাটায়, আমারও সেভাবে সময় কেটে যায়। মন্ত্রী তো ৪০ থেকে ৫০ জন থাকে। বাকি মানুষেরও তো সময় কেটে যায়, তাই না?”

এখন নিজের কাজের ক্ষেত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি সংসদ সদস্য, সংসদে যেতে হয়। তদবির করতে হয়, সুপারিশ করতে হয়। ডিসি সাহেব, ইউএনও এদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। এলাকায় যেতে হয়। মানুষের কথা শুনতে হয়। পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা দিতে হয়।”

পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলোচনা, টিভি টক শোতে যাওয়ার কথা তুলে ধরে মান্নান বলেন, “সারাদিন চলাফেরা করে সময় ভালোই কাটছে।”

সিলেট অঞ্চলের ইমরান আহমদ নেই এবারের মন্ত্রিসভায়। তিনি ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। প্রথমে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি, পরে পূর্ণমন্ত্রী করা হয়েছিল তাকে।

মন্ত্রিত্ব হারিয়ে সময় কাটানো নিয়ে কিছু বলতে চাননি ইমরান।

একই অঞ্চলের মো. শাহাব উদ্দিন গতবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে উঠে আসা শাহাব উদ্দিন মৌলভীবাজার-১ আসন থেকে ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের পর এবারও জয় পেয়েছেন।

মন্ত্রিত্ব হারালেও তা নিয়ে খেদ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আবার যদি দায়িত্ব পান, তা নিতেও তার আপত্তি নেই।

এখন সময় কীভাবে কাটছে- জানতে চাইলে শাহাব উদ্দিন বলেন, “সংসদীয় এলাকায় গিয়ে কাজ করতে হয়। সংসদের দায়িত্ব পালন করতে হয়।”

গত সরকারে প্রথমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং পরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা আশরাফ আলী খান খসরুর ব্যস্ততা কমেনি বলেই জানালেন।

নেত্রকোনা-২ (সদর ও বারহাট্টা) আসনের এই সংসদ সদস্য ২০০৮ সালে প্রথম সংসদে যান। এবারও নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন।

খসরু বলেন, “ব্যস্ততা কম নাই। কাজ করলে কাজ করার জায়গা আছে। এলাকায় ঘুরি। এলাকার মানুষের সঙ্গে সময় কাটাই। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ঢাকা আর নেত্রকোনা নিয়েই আছি।”

নিজের কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সেসব জায়গায় বসি। সময় কেটে যায়। জীবনে তো সব সময় অফিসে কাটানো যায় না। আমি মাঠের মানুষ, মাঠেই আছি।”

হাবিবুন নাহার (বাঁয়ে) ও নুরুল ইসলাম সুজন।

গতবারের রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন নেই নতুন মন্ত্রিসভায়। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে থাকা সুজন ১৯৮০-৮১ মেয়াদে ডাকসুতে মিলনায়তন সম্পাদক ছিলেন। পঞ্চগড়-২ (বোদা-দেবীগঞ্জ) আসনে টানা চারবারের সংসদ সদস্য তিনি।

এখন সময় কাটানো নিয়ে ফোনে কথা বলতে চাননি সুজন। তিনি বলেন, “সামনাসামনি একদিন আসেন, আলাপ করব।”

গত সরকারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ছিলেন হাবিবুন নাহার। বাগেরহাট-৩ আসনে (রামপাল-মোংলা) চতুর্থবার এমপি হয়েছেন তিনিও।

হাবিবুন নাহারের আসনে আগে এমপি ছিলেন তার স্বামী তালুকদার আবদুল খালেক। তিনি খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র হওয়ার পর সেই আসনটি আওয়ামী লীগ দেয় তার স্ত্রী হাবিবুন নাহারকে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া হাবিবুন নাহার পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে।

মন্ত্রিত্ব হারালেও সংসদ সদস্য হিসাবে এলাকায় সময় দিচ্ছেন হাবিবুন নাহার। তিনি বলেন, “সবার যেমন সময় কাটছে, আমারও তেমন কাটছে। সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকায় যাচ্ছি। সংসদ থাকলে ঢাকায় আসছি। এভাবেই সময় কাটছে।”

মন্ত্রিত্ব থাকাকালে এলাকার মানুষকে সময় দিতে পারতেন না জানিয়ে তিনি বলেন, “তখন জনগণ ডাকলে যেতে পারতাম না। এখন জনগণের সঙ্গে আছি। ভালোই যাচ্ছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত