কবিতা লিখতেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট তখন কবি-শিল্পী-নির্মাতা-বুদ্ধিজীবিদের মিলনস্থল। দিনরাত সেখানেই তুমুল আড্ডা চলতো। সে ভিড়ে ছিলেন তিনিও। ভিড়ের ভেতর থেকে একা নিজের পথ আবিস্কার করে নিয়েছিলেন।
“যিনি কবিতা লেখেন, তাকে যদি কবিয়াল বলা যায়, তাহলে যিনি ছবি বানান, তাকে ছবিয়াল কেন বলা হবে না?”- এই প্রশ্ন নিয়ে নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘ছবিয়াল’ নিয়ে পঁচিশ বছর আগে নির্মাণে যুক্ত হয়েছিলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
তার সহকারী পরিচালকদের তিনি ডাকতেন ‘ভাই-ব্রাদার’। শুধু একা পথ চলতে চাননি কখনই, চেয়েছেন একঝাঁক নতুন নির্মাণসঙ্গী মিলে নতুন কিছু নির্মাণের।
সফলও হয়েছিলেন, বদলে দিয়েছিলেন নাটক-সিনেমার ভাষা। কথ্য ভাষায় মুখস্থ ডায়ালগের পরিবর্তে চিত্রনাট্যহীন চলতি ভাষা চালু করেছিলেন তিনি।
তাকেই অনুসরণ করেছেন তার ভাই ব্রাদাররা। সমালোচনার লু হাওয়া সহ্য করে তারা এগিয়ে গেছেন আপন গতিতে। খুঁজে ফিরেছেন স্বকীয় ভাষা। ফলে নির্মিত হয়ে বহুমাত্রিক নাটক, টেলিফিল্ম, সিনেমা ও বিজ্ঞাপন। ফারুকীর ভাই ব্রাদারের হাতেই চলেছে রঙিন পর্দার শাসন।
পঁচিশ বছর পর মোস্তফা সরয়ার ফারুকী যেমন পৌঁছে গেছেন অনন্য উচ্চতায় তেমনি এগিয়েছেন তার ভাই-ব্রাদার নির্মাতারাও। যাদের মধ্যে অন্যতম রেদওয়ান রনি, আশুতোষ সুজন, শরাফ আহমেদ জীবন, আশফাক নিপুণ, ইফতেখার আহমেদ ফাহমী, মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ, আদনান আল রাজীব, নাসির আল মুনিরসহ অনেকেই।
ছবিয়ালের ২৫ বছর পূর্তিতে শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে মিলিত হয়েছিলেন নতুন পুরাতন সকল ছবিয়াল ভাই-ব্রাদাররা।
এ সময় দর্শকদের উদ্দেশে ফারুকী বলেন, “২৫ বছর দর্শকদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বড় হওয়া। আমি তো মনে করি, আমার সিনেমাগুলো সময়ের সঙ্গে যেমন কথা বলে, তেমন দর্শকের সঙ্গেও কথা বলে এবং এই কথা বলার মধ্যে দিয়েই আমরা বড় হচ্ছি, বুড়ো হচ্ছি।
“দর্শকরা আমাদের না ভালোবাসলে প্রথম সিনেমার পরই ছিটকে যেতাম। তারা যেভাবে আমাদের পথটাকে সমর্থন করেছেন, সেজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।”
অনুষ্ঠান শেষে শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ফারুকী ফেসবুকেও লিখেছেন প্রতিক্রিয়া। জানিয়েছেন, এমন আয়োজনের পেছনের মূল কারিগর তার স্ত্রী নন্দিত অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা।
“দর্শকদের প্রতি অনেক বড় কৃতজ্ঞতা যারা আমাদের অক্সিজেন হয়ে ছিলেন, আছেন। আমরা সবাই মিলেই একটা বড় পরিবার আসলে। স্পেশাল থ্যাংকস টু মাই ভাই-ব্রাদারস ফর অরগানাইজিং দিস। অ্যান্ড আ বিগ থ্যাংকস টু তিশা ফর এভরিথিং। এই বৃহৎ পরিবার আগলে রাখার আসল কারিগর। ও জানে আমি একা চলতে পারিনা। ফলে ও সারাক্ষণ উপলক্ষ খোঁজে আমাদের গ্যাদারিংয়ের। আগে এইসব আয়োজনে আমি জড়িত থাকতাম। এখন তিশা আর ভাই-ব্রাদাররা আমাকে ঢুকতে দেয় না।”
“আমি ভাই-ব্রাদারদের প্রাউড ফাদার হয়ে তাকাইয়া থাকি আর আমার চোখ ভিজে আসে। এদের ছেড়ে আমি কবরে যাবো কেমনে একা?”- শেষে যোগ করেন ফারুকী।
ফারুকী ও ছবিয়াল এর প্রতি বরাবরই কৃতজ্ঞ তার ভাই ব্রাদাররা।
তার নমুনা পাওয়া যাবে ‘মহানগর’ খ্যাত আশফাক নিপুনের মন্তব্যে, “আমার নির্মাণে লেখা থেকে বানিয়েছেন আশফাক নিপুন। আর সেই আশফাক নিপুনকে বানিয়েছে ছবিয়াল, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। আজ যা একটু করতে পারি তা ওই দুটি নামের জন্য।”
ছবিয়ালের উল্লেখযোগ্য ফিকশন ও ধারাবাহিক নাটকের মধ্যে রয়েছ ‘আয়শা মঙ্গল’, ‘প্রত্যাবর্তন’, ‘কানামাছি, ‘চড়ুইভাতি, ‘৬৯’, ‘৫১বর্তী, ‘৪২০’। সিনেমার মধ্যে রয়ছে ‘ব্যাচেলর’, ‘টেলিভিশন’, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘ডুব’, ‘পিঁপড়াবিদ্যা’।