Beta
সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫

মৃত্যুঞ্জয় বার্তা দিয়ে রাখলেন, নির্বাচকরা কি শুনেছেন?

অবিশ্বাস্য স্পেলে রাজশাহীকে নাটকীয় জয় এনে দেন মৃত্যুঞ্জয়। ছবি : সৌজন্য
অবিশ্বাস্য স্পেলে রাজশাহীকে নাটকীয় জয় এনে দেন মৃত্যুঞ্জয়। ছবি : সৌজন্য
[publishpress_authors_box]

একে তো পারিশ্রমিক ইস্যুতে খবরের শিরোনামে। যে কারণে ‘স্ট্রাইক’ করে বসেন দলের বিদেশি ক্রিকেটাররা। দলে থাকা ১৩ জন নিয়ে রবিবার মাঠে দুর্বার রাজশাহী। তার মধ্যে খেলেলেন ১১ জন। আগে ব্যাট করে বোর্ডে রান মাত্র ১১৯।

সমালোচনা, হতাশা, চাপ – হারের সব উপকরণ যেন তৈরি ছিল দুর্বার রাজশাহীর জন্য। এমন চাপের ম্যাচে একটা দল কি করতে পারে!

দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়াদের কিছুই হারানোর থাকে না। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী যথার্থ বলেছেন পুরষ্কার বিতরণীতে। তাদের হারানোর কিছু ছিল না। শুধু নেওয়ার ছিল হাত তুলে। মৃত্যুঞ্জয় দেখলেন, হাত তুললেন; যেন এক ম্যাচে “মৃত্যু”-কে জয় করিয়ে দিলেন দলের জন্য!

নামের মতোই যথার্থ মৃত্যুঞ্জয়। হারিয়েই গিয়েছিলেন বলা চলে। সেখান থেকে ফিরে আসা। এক ইনজুরি তাকে দূরে ঠেলে দেয় জাতীয় দল থেকে। একটা সুযোগ দরকার ছিল এই তরুণ অলরাউন্ডারের। গত মাসে হওয়া জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টিতে সুযোগটা পেলেন।

খুলনা বিভাগের হয়ে ওই আসরে মাঝারি মানের পারফরম্যান্স করেছিলেন। তবুও আশায় ছিলেন বিপিএল দরজায় কড়া নাড়বে। দুর্বার রাজশাহী তার দরজায় কড়া নাড়ল। মৃত্যুঞ্জয় সাড়া দিয়ে চলে এলেন সেই লিগে যেখানে তার হ্যাটট্রিকের কীর্তি আছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে ২০২২ সালে।

ওই আসরের পারফরম্যান্স তাকে জায়গা এনে দেয় জাতীয় দলে। কিন্তু ২০২৩ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চেমসফোর্ডে মাত্র একটি ম্যাচই সুযোগ দেওয়া হয় এই অলরাউন্ডারকে। এরপর ইনজুরিতে হারিয়ে যান। কঠিন হয়ে পড়ে দলে ফেরার পথ।

রবিবার ম্যাচ শেষে এই তরুণ জানালেন, “আমার জন্য এই পারফরম্যান্সটা অনেক কিছু। আমি ইনজুরির কারণে মাঠ থেকে দূরে ছিলাম। একটা বছর নষ্ট হয় আমার। জাতীয় দলের লাইনে থেকে ছিটকে পড়াটা খুব কষ্টের। আমি খুব করে চেয়েছিলাম যেন এই আসরে ভাল করে নজর কাড়তে পারি। আজ সফল হয়েছি।”

কিন্তু সফলতার পথটা সহজ ছিল না মৃত্যুঞ্জয়ের জন্য। রাজশাহীর হয়ে নিয়মিত ম্যাচ খেলার ‍সুযোগ মিলছিল না। ওদিকে চট্টগ্রাম পর্ব থেকে শুরু নতুন নাটক। দলের পারিশ্রমিক ইস্যুতে সব ক্রিকেটারের মনক্ষুন্ন। স্বভাবত এই তরুণও বিমর্ষ ছিলেন। ডিরেক্ট সাইনিং ক্রিকেটার বলে পারিশ্রমিক ইস্যুটা তার জন্য আর সবার মতো না।

ড্রাফটের ক্রিকেটাররাই পারিশ্রমিক না পাওয়া, মৃত্যুঞ্জয়ের জন্য আর্থিক ব্যাপার আরও জটিল হয়ে উঠেছিল। সেই সঙ্গে দৈনিক ভাতাও না পাওয়ার উপদ্রব। সব মিলিয়ে দুর্নামের চূড়ান্ত হয় রবিবার বিদেশি ক্রিকেটাররা দলের সঙ্গে মাঠে না এলে।

নিজেকে খুঁজে ফেরা এই তরুণ দু-হাতে লুফে নিলেন সুযোগ। সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ১৬ রানে ২ উইকেট নেওয়ার দিনেও অলরাউন্ড পারফরম করেছেন। কিন্তু সবার সামনে থাকতে হলে আরও বড় উপলক্ষ লাগে।

তা ধরা দেয় রবিবার। এদিন মৃত্যুঞ্জয়কে থামানো যাচ্ছিল না। নিরুত্তাপ “নিপুন” (ডাকনাম) এদিন প্রচণ্ড উত্তপ্ত। প্রতি উইকেটের পর বাঁধভাঙ্গা তার উল্লাস। একটি মেডেন ও ১৮ রানে ৪ উইকেট; ৪ ওভারের অবিশ্বাস্য স্পেলে একদম কোমড় ভেঙে দিলেন রংপুরের। সঙ্গে খাদের কিনারায় থাকা দলকেও টেনে তুললেন।

মৃত্যুঞ্জয় দেখলেন, বুঝলেন, এই রবিবারকেই বেছে নিলেন স্পটলাইটের সব আলো সমালোচনার স্তুপ থেকে নিজের দিকে ফেরাতে। তিনি তো জানতেন আজ পারফরম করলেই সবার নজর কাড়া যাবে। সবাইকে বার্তা দেওয়া যাবে। আমি হারিয়ে যাইনি, আমি “মৃত্যুঞ্জয়”।

জাতীয় দলে পেস বোলিং অলরাউন্ডার খুঁজে ফেরা নির্বাচক প্যানেলের নতুন সদস্যরা এই বার্তা হয়তো পেয়েছেন।  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত