টাইম ম্যাগাজিনের নতুন মুদ্রিত সংখ্যার প্রচ্ছদে টেক জায়ান্ট ইলন মাস্ককে ওভাল অফিসের মূল চেয়ারে বসানো হয়েছে। সম্ভবত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উসকে দিতেই এমনটা করা হয়েছে।
প্রচ্ছদটি এমন এক সময়ে ছাপিয়েছে টাইম ম্যাগাজিন, যখন ইলন মাস্ক ও তার বিভাগকে অভূতপূর্ব ক্ষমতা দিয়েছেন স্বয়ং ট্রাম্প। এই ক্ষমতা দিয়ে ফেডারেল সরকারের কর্মী সংখ্যা কমাতে পারবেন মাস্ক। যদিও সাম্প্রতিক কিছু মামলার কারণে এই প্রক্রিয়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
টাইমের প্রচ্ছদটি দেখতে সরল মনে হলেও, এর ভেতরে গভীর কোনও ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছেন পর্যবেক্ষকরা। প্রচ্ছদে ইলন মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ডেস্ক, দেশটির জাতীয় পতাকা ও প্রেসিডেন্টের পতাকার ঠিক মাঝখানে বসানো হয়েছে। আর তার হাতে রয়েছে কফির কাপ। পুরো প্রচ্ছদের পটভূমি করা হয়েছে লাল রঙ।
আর প্রচ্ছদ প্রতিবেদনটিতে মাস্কের কার্যক্রম নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের কয়েক লাখ কর্মীকে এখন মাস্কের দয়ার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক ইতিহাসে এর আগে এমনটা কখনও দেখা যায়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “এখন পর্যন্ত মাস্ক কেবল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে জবাবদিহি করছেন। ট্রাম্প তার নির্বাচনী সহযোগী মাস্ককে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছেন। ডিওজি (ডিপার্টমেন্ট অব গভমেন্ট এফিসিয়েন্সি এক্সট্রাঅর্ডিনারি) টাইম ম্যাগাজিনের সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার দায়িত্ব হোয়াইট হাউসের ওপর ছেড়ে দেয়। তবে হোয়াইট হাউস কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।”
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এনিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মাস্ক টাইমের প্রচ্ছদে জায়গা পেলেন। গত নভেম্বরে ‘সিটিজেন মাস্ক’ হিসাবে ছিলেন প্রচ্ছদে। সেই প্রতিবেদনে তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা একজন ‘কিংমেকার’ বলা হয়েছিল।
দুটি প্রচ্ছদ ইঙ্গিত দেয় যে, প্রকৃত ক্ষমতার কেন্দ্রে ট্রাম্প নন, বরং মাস্ক । এই ধারণা ট্রাম্পকে বিরক্ত করতে পারে। কারণ তিনি টাইম ম্যাগাজিন নিয়ে বিশেষ আগ্রহী এবং ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে পছন্দ করেন না।
অবশ্য ট্রাম্পকে উসকে দিতেই এমন প্রচ্ছদ করা হয়েছে কি না, এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি টাইম ম্যাগাজিন। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পকে এই প্রচ্ছদ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি মজা করে বলেন, “টাইম ম্যাগাজিন কি এখনও প্রকাশিত হচ্ছে? আমি তো জানতামই না।”
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টাইম ম্যাগাজিনের প্রতি বরাবরই দুর্বল। তার কাছে এটি ক্ষমতা ও মর্যাদার প্রতীক। তিনি দুইবার টাইমের ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হয়েছেন, সর্বশেষ ২০২৪ সালে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরে আসার পরও তিনি এর প্রচ্ছদে জায়গা পেয়েছেন। এর আগে টাইমের প্রচ্ছদে থাকার তার ইচ্ছা এতটাই প্রবল ছিল যে, তিনি নিজের রিয়ালিটি শো ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’ এর প্রশংসায় ভরা একটি নকল টাইম ম্যাগাজিন তৈরি করেছিলেন।
যদি টাইমের প্রচ্ছদটি উসকানিমূলক হয়ে থাকে, তবে এটি প্রথম নয়। এর আগেও ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ ট্রাম্প ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করেছে।
টাইমের নতুন সংখ্যায় মাস্ককে তুলে ধরার ঘটনা ২০১৭ সালের প্রচ্ছদের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেখানে স্টিভ ব্যাননকে দেখানো হয়েছিল। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ব্যানন, মাস্কের মতোই প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা ছিলেন।
তৎকালীন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ব্যাননই রেজোলিউট ডেস্কের আসল নিয়ন্ত্রক। টাইম তাকে ‘দ্য গ্রেট ম্যানিপুলেটর’ নামে অভিহিত করেছিল।
সেই সময় পপ কালচারে স্টিভ ব্যাননকে ‘প্রেসিডেন্ট ব্যানন’ বলা হতো। ‘স্যাটারডে নাইট লাইভ’ অনুষ্ঠানে তাকে এক ভয়ঙ্কর মৃত্যুদূতের মতো দেখানো হয়েছিল, যিনি ট্রাম্পকে নিয়ন্ত্রণ করছেন।
ট্রাম্প কখনোই অন্য কারও ছায়ায় থাকতে পছন্দ করেন না। ব্যাননের ক্রমশ প্রভাব বিস্তার ট্রাম্পকে দুর্বল বলে দেখানোর সুযোগ তৈরি করেছিল। এটি তখন ট্রাম্প নিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত নানা বিরোধের কারণে ব্যাননকে প্রকাশ্যে অপসারণ করা হয় এবং তিনি ট্রাম্পের সমর্থন হারান।
তবে মাস্ক এখনও ভিন্ন অবস্থানে রয়েছেন। তিনি সোশাল মিডিয়া এক্সে সমালোচকদের আক্রমণ করতে পিছপা হন না। তবুও নিজের নতুন অর্জন নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেননি মাস্ক।
ট্রাম্প ফের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফেলার পর মাস্কের কাজ অনেকটা, যেমন তিনি টুইটার (বর্তমান এক্স) কিনে সেখানে কঠোরভাবে কর্মী ছাঁটাই করেছিলেন, তেমনই কিছু করা। তবে সাধারণত ট্রাম্প এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করেন না। কিন্তু এই বিষয়ে মাস্ককে পুরোপুরি স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট গত বুধবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “তিনি (ট্রাম্প) বলেছেন, ইলন মাস্কের কোনও স্বার্থসংশ্লিষ্ট সমস্যা হলে এবং ডিওজির তত্ত্বাবধানে থাকা চুক্তি ও তহবিলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থা হলে ইলন নিজেকে ওই চুক্তিগুলো থেকে দূরে রাখবেন।”
তথ্যসূত্র : সিএনএন