বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমার ভূখণ্ড থেকে ক্রমাগত ভেসে আসা গোলাগুলির শব্দের মধ্যে বন্ধ রাখা হয়েছে ঘুমধুমের পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সোমবার সকালে এসব স্কুল একদিনের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেয় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে স্কুল খোলা রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
এর আগে ২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেল বিস্ফোরণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় এক রোহিঙ্গা যুবক নিহত ও চার বাংলাদেশি আহত হয়েছিলেন। সেসময় মর্টারের মোট চারটি গোলা এসে পড়ে। যার মধ্যে তিনটি শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ও একটি বাংলাদেশের সীমানার ভেতর পড়েছিল। এ ঘটনার পর এক সপ্তাহ বন্ধ রাখা হয়েছিল স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
সোমবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা জানান, সকাল থেকে মিয়ানমার থেকে ভেসে আসা গোলাগুলির আওয়াজের কারণে ঘুমধুম সীমান্ত এলাকার বাইশ ফাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজা বনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কুল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
গোলাগুলির আওয়াজের পাশাপাশি সোমবার সীমান্ত পেরিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের ৩৪ নম্বর পিলারের কাছে উড়ে এসেছে আরও একটি মর্টারের গোলা। এনিয়ে গত তিনদিনে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এসে পড়ল ১৪টি গোলা, এসেছে বুলেটও।
সীমান্তের ওপার থেকে উড়ে আসা এসব গোলা ও বুলেটে কেউ হতাহত না হলেও সীমান্তজুড়ে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সকাল থেকেই ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের ওপার থেকে গোলাগুলির শব্দ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ।
তিনি বলেন, “মাঝখানে কিছুদিন গোলাগুলি বন্ধ ছিল। কিন্তু শনিবার থেকে আবারও মিয়ানমারের ভেতরে থেমে থেমে গোলাগুলি ও বোমার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। কোনও হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও এলাকার মানুষ আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছে।”
এর মধ্যে ৩৩ নম্বর সীমানা পিলার এলাকা অর্থাৎ ঘুমধুমের ১ নম্বর ওয়ার্ড অংশে গোলাগুলির বিকট আওয়াজ শোনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউনিয়নের ৫ নম্বর ইউপি সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন।
উখিয়া-টেকনাফের সীমান্তে মিয়ানমারের ওপারের সোমবার সকালেও উড়তে দেখা গেছে হেলিকপ্টার।
সব মিলিয়ে সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী।
মিয়ানমারে গোলাগুলি : সীমান্তবাসী আতঙ্কিত, পরিদর্শনে বিজিবি প্রধান
পরিস্থিতি দেখতে রবিবার (২৮ জানুয়ারি) সংশ্লিষ্ট সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান।
বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, শনিবার (২৭ জানুয়ারি) থেকে রবিবার পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে ছোড়া ১৩টি মর্টার শেল ও একটি বুলেট বাংলাদেশের মাটিতে এসে পড়েছে।
তিনি জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে শেল ও বুলেট বাংলাদেশে পতিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিজিবির পক্ষ হতে বিজিপিকে প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছে।