ফ্যাসিবাদ সমূলে উৎপাটনের কাজটিই সরকার করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
জুলাই অভ্যুত্থানের এই ছাত্রনেতা বলেছেন, “অন্তর্বর্তী সরকার ফ্যাসিবাদ সমূলে উৎপাটন করতে বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোর আমূল সংস্কারের ভিত্তি গড়ে দিয়ে যেতে চায়।”
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আয়োজিত ‘জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহত সাংবাদিক এবং অসুস্থ/অসচ্ছল সাংবাদিকদের কল্যাণ অনুদান ও সাংবাদিক সন্তানদের বৃত্তির চেক বিতরণ’ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন বলে বাসস জানিয়েছে।
পদাধিকার বলে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘রাষ্ট্র সংস্কার’র উদ্যোগ নিয়েছে।
বিদ্যমান কাঠামো থেকে গেলে পরবর্তীতে যে সরকারই আসুক, ফ্যাসিবাদ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে বলে সতর্ক করেন নাহিদ।
তিনি বলেন, “আমরা তা হতে দেব না। রাষ্ট্র সংস্কার এজন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এর জন্য সময় লাগবে। সেই কাঠামো তৈরি হওয়ার পর যে সরকারই আসুক, তারা কাঠামোকে ধরে রাখবে।”
জুলাই আন্দোলন যেভাবে ধাপে ধাপে এগিয়ে নেওয়া হয়েছিল রাষ্ট্র সংস্কারের কাজটিও সেভাবে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা।
তিনি বলেন, “কোটা সংস্কার, নির্যাতন ও হত্যার বিচার এবং ফ্যাসিবাদের বিচার করতে হবে। এ সকল ঘটনার আসামি শেখ হাসিনার অবশ্যই বিচার করা হবে। দমন-পীড়ন নয় বরং বিচারের মাধ্যমে দেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা হবে।”
এজন্য দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “গত ১৫ বছরে কার কী ভূমিকা ছিল, তা ভুলে না গিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করতে হবে।
“জুলাই আমাদের ঐক্যের শিক্ষা দেয়, শিক্ষা দেয় যে সমাজে অনেক ভিন্ন মত থাকবে, এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথেও মতের ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু দেশ, জনগণ ও জাতির সংকটের প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব।”
সাংবাদমাধ্যমকেও সচেতন ও বস্তুনিষ্ঠভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “আমরা একটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ সময়ে বাংলাদেশকে নিয়ে বিভিন্নভাবে অনেকে ভ্রান্ত বা ভুল তথ্য দিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
“তারা বলছে আমাদের গণমাধ্যম স্বাধীন নয়। সরকারের ওপর থেকে আপনাদের ওপর কোনো ধরনের চাপ নেই। আপনারা সত্যটা প্রচার করুন।”
“প্রধান উপদেষ্টা সকল সমালোচনাকে স্বাগত জানান। আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে চাই। কিন্তু তাই বলে ফ্যাসিবাদের দোসররা যদি সুযোগ নিতে চায়, ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন করতে চায়, তবে আমরা কঠোর হব,” বলেন তিনি।
জুলাই আন্দোলনের সময় সাংবাদিকদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার বিষয়টি স্মরণ করে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “বিগত সময়ে সকল প্রতিষ্ঠানেই দলীয়করণ ছিল এবং গণমাধ্যমগুলোর অনেকেই তার ব্যতিক্রম ছিল না। তবুও অনেকে ঝুঁকি নিয়ে সত্যের ও ন্যায়ের পক্ষে থেকেছেন।”
নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেও সংবাদ প্রচার করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধাও জানান অভ্যুত্থানের এই ছাত্রনেতা।
তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা উপস্থিত অনুদানপ্রাপ্ত সবার হাতে চেক তুলে দেন।
তিনি বলেন, “পাঁচটি শহীদ পরিবারকে আজকে আমরা একসাথে পেয়েছি, তাদের জন্য ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় কিছু করতে পেরেছি, এটা আমাদের জন্য আনন্দ ও গর্বের বিষয়। আমরা আশা করি, এই বৃত্তি প্রদানের কাজ অব্যাহত থাকবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা ফারজানা।
শুভেচ্ছা বক্তৃতা দেন ট্রাস্ট সদস্য-এখন টিভির সাংবাদিক সাজিদ আরাফাত, বিএফইউজে নির্বাহী সদস্য শাহীন হাসনাত, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ূব ভূঁইয়া, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, ডিইউজের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, অভ্যুত্থানে নিহত সাংবাদিক মো. তাহির জামান প্রিয়র মা শামসি আরা জামান।
