Beta
শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৫
একান্ত সাক্ষাৎকারে নাসের শাহরিয়ার জাহেদী

ফুটবলের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কটা হারিয়ে গেছে নব্বইয়ের মাঝামাঝিতে

বাফুফে সহ-সভাপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। ছবি: সকাল সন্ধ্যা
বাফুফে সহ-সভাপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। ছবি: সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

তিনি ছিলেন নিভৃতে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে যশোরে গড়েছেন শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমি। সম্ভবত সবচেয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলা এই একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা নাসের শাহরিয়ার জাহেদী নির্বাচন জিতে হয়েছেন বাফুফে সহ সভাপতি। ফুটবল নিয়ে এই ব্যবসায়ী-ক্রীড়া সংগঠকের আছে কিছু নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা। সেগুলো তিনি সবিস্তারে বলেছেন সকাল সন্ধ্যার ক্রীড়া সম্পাদক সনৎ বাবলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে।    

প্রশ্ন : ফুটবলের সুবাদে আপনি প্রথমবারের মতো জাতীয় ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। নতুন জায়গা বাফুফে কেমন উপভোগ করছেন?

নাসের শাহরিয়ার জাহেদী : খুব ভালো। কারণ হলো, এখানে আমার অন্তর্ভুক্তিটা ক্রীড়াঙ্গনে কাজ করার এবং কিছু অবদান রাখার সুযোগ করে দিয়েছে। এই সুযোগটাকে আমি যতদূর সম্ভব কাজে লাগাব এবং সেই মতো কাজ করার চেষ্টা করছি।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে ইতিমধ্যে আপনি কয়েকটা সভা করেছেন, ভেতরকার অবস্থা দেখেছেন। বর্তমানে দেশের ফুটবলের অবস্থা কী রকম মনে হচ্ছে আপনার?

নাসের শাহরিয়ার : ফুটবলের ভেতরে কিছু তো অগোছালো ব্যাপার আছে। কিন্তু একইভাবে সম্ভাবনাটাও আছে। আমরা অতীত নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া না করে ভবিষ্যতটা কীভাবে গড়ে তুলতে পারি সেদিকে নজর রাখছি বেশি।

প্রশ্ন : ফুটবলের সম্ভাবনার জায়গাটা যদি একটু বিস্তারিত বলেন…

নাসের শাহরিয়ার : ফুটবলের সম্ভাবনার সব থেকে বড় দিক হলো, এ দেশের মানুষ ফুটবলকে চায়। বাংলাদেশের মানুষ ফুটবল খেলে, দেখে এবং ভালোবাসে। ফুটবলের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার জন্য এটাই সবচেয়ে বড় উপাদান। সেটার সঙ্গে আমরা যদি সংগঠকদেরকে সম্পৃক্ত করতে পারি এবং অন্যান্য যে স্টেক হোল্ডার যেমন- ফুটবল ক্লাব, স্পন্সর এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে আমি বাংলাদেশে ফুটবলের অনেক সম্ভাবনা দেখি।

প্রশ্ন : ফুটবলের প্রতি মানুষের আগ্রহ, উন্মাদনা তো সবসময় সত্য ছিল। কিন্তু সেই সম্ভাবনা অনুযায়ী ফুটবল এতদিনে সামনের দিকে এগোতে পারেনি…

নাসের শাহরিয়ার : না। সবসময় ফুটবলে আগ্রহ সমান ছিল না। সত্তর-আশির দশকটা ফুটবলের একটা সময় গিয়েছে। তখন ফুটবলের সঙ্গে জনগনের যে সংযোগ বা সম্পর্কটা ছিল তা নব্বইয়ের মাঝামাঝি থেকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। এরপরে নতুন করে ওইরকম আগ্রহটা আর দেখা যায়নি। আমাদের সেই ব্যাপারটা ফিরিয়ে আনতে হবে। জেলায় খেলা হলে প্রচুর দর্শক হয়। কিন্তু ঢাকায় ফুটবলের প্রতি রেসপন্সটা কম। ঢাকার বাইরে যেসব জায়গায় ফুটবল টুর্নামেন্ট বা লিগ হচ্ছে, সেখানে কিন্তু দর্শকের অভাব হচ্ছে না। ঢাকায় আমরা সেই জিনিসটা পাচ্ছি না শুধুমাত্র সময়ের কারণে।

ঢাকায় বেশিরভাগ স্পোর্টসের কোনোটাকে আমরা সন্ধ্যার পরে নিতে পারি না। শুধু বসুন্ধরা কিংসের মাঠে সেই সুযোগটা আছে। আমাদের জাতীয় স্টেডিয়ামে কয়েক বছর ধরে ফ্লাডলাইট কাজ করছে না। আশা করছি, কয়েক মাসের মধ্যে এ জিনিসটা ঠিক হবে। আপনি যদি রাতে অথবা ছুটির দিনে বিকেলে খেলাটা না নিতে পারেন, তাহলে মাঠে দর্শক আনতে পারবেন না। আর দর্শক না এলে খেলাটা প্রাণবন্ত হয় না। সুতরাং আমাদের এদিকটা নিয়ে কাজ করতে হবে। এই সুযোগগুলো সৃষ্টি হলে আমরা ফুটবলকে অনেক প্রাণবন্ত করে তুলতে পারব।

প্রশ্ন : আপনি বাফুফে নির্বাচনের আগে বলেছিলেন- জেলার ফুটবল চাঙ্গা না হলে, জেলায় খেলা না হলে সামগ্রিকভাবে ফুটবলকে বাঁচানো যাবে না। এখনও কি আপনি সেটি বিশ্বাস করেন?

নাসের শাহরিয়ার : অবশ্যই। জেলা শহরগুলোতে সমস্যা কোথায়, সেটা আপনাকে বুঝতে হবে। জেলা-উপজেলায় মাঠ নাই। ফুটবল খেলতে হলে মাঠ লাগবে। স্টেডিয়াম নাই, যেখানে দর্শকরা খেলা দেখবে। জেলা শহরগুলোতে হয়তো একটা করে স্টেডিয়াম আছে। একটাতে ২০-২৫টা ক্রীড়ার (খেলার) জায়গায় করে দিতে হয়। জেলা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন চাইলেও ফুটবলের জন্য যতটা দরকার ততটা জায়গা দিতে পারবে না। কারণ তাদেরকে সমস্ত খেলার প্রতিযোগিতা ওই একটা স্টেডিয়ামেই করতে হচ্ছে সময় ভাগ করে।

ফুটবলের জন্য যদি প্রথমে জেলা পর্যায়ে এবং পরে উপজেলা পর্যায়ে নির্দিষ্ট মাঠ পাওয়া যায়, তখন ফুটবলের চেহারা বদলে যেতে পারে। ডিএফএ (জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন) আছে কিন্তু তার সঙ্গে যদি একটি করে মাঠ না থাকে তাহলে ডিএফএ’র ফুটবল অনুশীলন, খেলা, লিগ বা কার্যক্রম কোথায় করবে। আমার কাছে মাঠটা অগ্রাধিকার।

প্রশ্ন : মাঠের পাশাপাশি স্থানীয় সংগঠককেও বড় ভূমিকা রাখতে হবে। অনেক ডিএফএ সংগঠক খেলামুখী নন, রাজনৈতিক পরিচয়ে চেয়ার আঁকড়ে বসে থাকেন। আবার বিভিন্ন জায়গা থেকে বড় অভিযোগ ছিল, বাফুফে কোনোরকমের সহযোগিতা করে না ডিএফএকে। এটা কীভাবে দেখছেন?

নাসের শাহরিয়ার : ডিএফএ বা ডিস্ট্রিক্ট ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে আমি দু-ভাবে দেখি। একটা হলো- সেখানে কোনও কার্যক্রম নেই, ফুটবল খেলা ও টুর্নামেন্ট নেই। কিন্তু সেসব ডিএফএ অক্ষত রয়ে গেল, এটা তো কোনও কথা হলো না। দ্বিতীয়টি হলো- ডিএফএ’র জন্য ফেডারেশন থেকে যে ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা বা সমর্থন প্রয়োজন সেটা ছিল না। যেমন যশোর, ঝিনাইদহ ফুটবলের সঙ্গে আমার কিছুটা সম্পৃক্ততা ছিল। সেখানে ফুটবল ফেডারেশন থেকে মফস্বলের ফুটবলকে এগিয়ে নেওয়া বা তাদের (সংগঠকদের) খেলাধুলার দিকে নিয়ে আসার জন্য আমি উল্লেখযোগ্য কিছু দেখি নাই। সুতরাং দুটো জিনিসই একসঙ্গে করতে হবে।

ফেডারেশনকে এগিয়ে আসতে হবে ডিএফএকে সমর্থন দিতে। আমাদের (বাফুফে) সভাপতি তাবিথ আউয়াল এ বিষয়ে সক্রিয়ভাবে চিন্তা করছেন। আমাদের সঙ্গে তার কথা হচ্ছে কীভাবে ডিএফএগুলোকে ফুটবলে আরও ভালভাবে নিয়ে আসা বা আরও বেশি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সাপোর্ট করা যায়। সেই সাথে ডিএফএগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে যেন প্রতিবছর অন্তত লিগগুলো ঠিক মতো হয়, পাশাপাশি অন্য টুর্নামেন্টও যেন আয়োজন করে।

এগুলো করতে হলে জেলা পর্যায়ে যে ক্রীড়ামোদি ব্যাবসায়ীগোষ্ঠী আছে তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। প্রতি জেলাতে সেই জেলার ফুটবলকে পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য জেলা থেকেই পৃষ্ঠপোষক আসতে পারে। এভাবে জেলার স্পন্সর এগিয়ে এলে, বাফুফে সহযোগিতা করলে, ডিএফএ নেতৃবৃন্দরা উদ্যোগী হলে ফুটবলটা অনেক প্রাণবন্ত হয়ে উঠেবে।

প্রশ্ন : বাফুফের সাবেক সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন কখনও জেলার ফুটবল নিয়ে সিরিয়াস ছিলেন না। তিনি প্রকাশ্যে বলতেন, জেলা ফুটবলের দায়িত্ব তার নয়। ডিএফএগুলোকে বাফুফে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখা যায় কিনা, সেই চিন্তাও শুরু হয়েছিল ফিফার দোহাই দিয়ে। এই কমিটিও কি ডিএফএগুলোকে বাদ দিয়ে নতুন কিছু ভাবতে পারে?

নাসের শাহরিয়ার : না না। একদমই না। আগে কী হয়েছিল আমি জানি না, ওটা নিয়ে কথা বলতে চাই না। এখন যে কার্যনির্বাহী কমিটি অর্থাৎ ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্ব ফুটবলকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া এবং সারাদেশের ফুটবলকে একসঙ্গে করা রাখা। ফেডারেশন শুধু ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ বা চ্যাম্পিয়নস লিগ চালানোর জন্য নয়। তার দায়িত্ব সারাদেশের ফুটবলকে প্রাণবন্ত করা, খেলাটাকে এগিয়ে নেওয়া এবং বৈশ্বিকভাবেও এর মান উন্নত করা।

আমাদের নারী দল যে সাফ জিতেছে, এটা নিয়ে দেশের মানুষের চমৎকার উৎসাহ ও আগ্রহ সবাই দেখেছে। তেমনিভাবে পুরুষ ফুটবলকেও যদি এগিয়ে নিতে পারি এবং নারী দলকে সাফের পর্যায় পেরিয়ে এএফসি পর্যায়ে নিতে পারি তাহলে ফুটবলের সাফল্যে পুরো দেশ আনন্দিত হবে। এ ব্যাপারে আমরা কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি, আগামী কয়েক মাসে সেগুলো বাস্তবে দেখতে পারবেন।

প্রশ্ন : সাফে মেয়েদের সাফল্যের কথাই যখন তুললেন, তখন একটি বিষয় জানতে চাই- বাফুফে সভাপতির ঘোষিত সাফজয়ী নারীদের দেড় কোটি টাকার পুরস্কার তো এখনও দেওয়া হয়নি। বাফুফের আগের কমিটির বিশাল দেনার কথাও আমরা শুনেছি। বাফুফে কি আর্থিকভাবে চাপে আছে?

নাসের শাহরিয়ার : আর্থিক চাপ তো আছেই। ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটি ও আর্থিক কমিটি কীভাবে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ করা যায়, সেটা দেখছে। আমরা আশাবাদী, যে অবস্থায় আমরা পেয়েছি তার থেকে ভালোর দিকে ফেডারেশনকে নিয়ে যেতে পারব।

প্রশ্ন : এবার আপনার নিজের বিষয়ে কিছু জানতে চাই। আপনার ওপর যশোরের গুনী ক্রীড়া সংগঠক, আপনার শ্বশুর শামস-উল-হুদার ব্যাপক প্রভাব আছে বলে মনে হয়। অন্তত আলাপে-আচরণে সেটা প্রকাশ পায়। উনার কোন গুণটা আপনার খুব ভাল লাগে?

নাসের শাহরিয়ার : আসলে মরহুম শামস-উল-হুদা আমার শ্বশুর হয়েছেন পরে। আগে তো উনি আমার ফুফা, আমার মেজো ফুফুর স্বামী। যার ফলে ছোটবেলা থেকে উনার বাড়িতে আমার যাতায়াত এবং তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। পেশাগতভাবে তিনি ছিলেন পাকিস্তান আমলে মুসলিম ইন্সুরেন্সের খুলনার বিভাগীয় ম্যানেজার। তার জীবনটা চাকরির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এর বাইরে আমি দেখতাম স্টেডিয়াম ছিল তার প্রাণের ভেতর। খেলাধুলা খুব ভালবাসতেন। ১৯৭৬-৭৭ সালে যশোরে জাতীয় অ্যাথলেটিকস হয়েছিল। ওইসময় হতো আন্তজেলা ফুটবল। একবার যশোর জেলা বাংলাদেশে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আমি দেখেছি, ক্রীড়া নিয়ে বিশেষ করে ফুটবলের প্রতি তার অন্যরকম আন্তরিকতা ছিল। এই ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লাগতো।

ওই সময় আমরা যশোরে বসে রুশ ফুটবল ক্লাবের খেলা দেখেছি, মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের খেলা হয়েছিল ওখানে। তখন যশোরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা অতো ভালো ছিল না। তবু বড় বড় আয়োজন হয়েছে ওখানে। এর পেছনে উনারই অবদান ছিল বেশি। সেই সময় থেকে উনাকে দেখে আমার মনে হয়েছে, একজন মানুষের একাগ্রতা ও ইচ্ছা থাকলে অনেক কিছু করা যায়। তার প্রতি শ্রদ্ধা থেকে আমি যশোরে ফুটবল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করি ২০১১ সালে। সেটা আজকে ভাল একটা পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। বলতে পারেন, আমার শ্বশুরের কাছ থেকেই পেয়েছি ক্রীড়া সংগঠক হওয়ার অনুপ্রেরণা।

প্রশ্ন : শামস-উল-হুদার কোন দিকটা আপনি অনুসরণ করেন?

নাসের শাহরিয়ার : উনার সবচেয়ে বড় গুণ হলো, শামস-উল-হুদা সাহেব ভালো মানুষ ছিলেন। উনি দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে পারতেন। তখন যশোর ক্রীড়া সাংবাদিকদের মধ্যে উনাকে নিয়ে কেউ সমালোচনামূলক লেখা লিখলেও তিনি এতটুকু রাগ করতেন না। কেউ হয়তো লিখল- যশোর স্টেডিয়ামের ঘাস ৬ ইঞ্চির বেশি হয়ে গেছে। সেটা দেখে, আগে ওই জিনিসটা ঠিক করে তারপর ওই সাংবাদিককে হাসি মুখে চা খাওয়ার দাওয়াত দিতেন। তিনি সমালোচনাগুলোকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে পারতেন। তার সাংঘাতিক সহ্যশক্তি ছিল।

যশোরে জীবন বোস নামে বিখ্যাত সাংবাদিক ছিলেন। আমরাও তাকে সংবর্ধনা দিয়েছি একাডেমির তরফ থেকে। উনি একদিন বলেছিলেন, “হুদা ভাইকে হুল ফোটাতাম, ফুল ফোটানোর জন্য। তার সমালোচনা আমার মতো কেউ করেনি, আবার তার কাছ থেকে আমার চেয়ে বেশি আদরও কেউ পায়নি।” এই যে জীবন বোসের মতো গঠনমূলক সমালোচনা এবং সেটাকে নেওয়ার ক্ষমতা- এ দুটোই আমাদের বর্তমান ক্রীড়াঙ্গনে খুব দরকার। এটা এখন ক্ষেত্রবিশেষে খুব মিসিং হয়ে যায়।

প্রশ্ন : যাক, আমাদের সৌভাগ্য যে সমালোচনা সহজভাবে নেওয়ার মতো একজন সংগঠককে পেয়েছি ফুটবল ফেডারেশনে…

নাসের শাহরিয়ার : (হাসি)… ফুটবল নিয়ে আমি আরেকটু বিশদ বলতে চাই। এটা শুধুই বিনোদনমূলক খেলাই শুধু নয়, এর অনেক ধরনের উপযোগিতা আছে সমাজে। আমি বারবার বলছি, এই খেলার সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করার কথা। বিশেষ করে তরুণ সমাজকে। দেখবেন, একটা শহরে যদি এক-দুই মাসব্যাপী একটা লিগ চলতে থাকে, তরুণরা বিকেলবেলা স্টেডিয়ামমুখী হয়। ফুটবলটা এভাবে নিয়ম করে মাঠে রাখতে পারলে অনেক সামাজিক সমস্যা, বিশেষ করে টিনএজদের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারি আমরা। এসব কিন্তু পুলিশ দিয়ে শাসন করে সমাধান সম্ভব নয়। তরুণদের সুস্থ বিনোদনে সম্পৃক্ত করতে চাইলে ফুটবল বড় উপাদান হিসেবে কাজ করবে।

ফুটবলকে আমরা সারা দেশব্যাপী, একদম জেলা পর্যায়েও জাগিয়ে তুলতে পারলে, এটা সামাজিক উন্নয়ন এবং সামাজিক কাঠামোতে বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সামাজ সংস্কারের দায়িত্বে যারা আছেন, সরকারের দায়িত্বে যারা আছেন এবং যারা এগুলো নিয়ে ভাবেন; তাদের এই দিকটা বিবেচনা করা প্রয়োজন।

প্রশ্ন : আপনি বাফুফের ডেভেলপমেন্ট কমিটির দায়িত্ব পেয়েছেন। সাব কমিটির প্রধান হিসাবে আপনার কাজের ক্ষেত্র ও লক্ষ্য কী?

নাসের শাহরিয়ার : আমাদের ডেভেলপমেন্ট কমিটির প্রধান দায়িত্ব হলো বয়সভিত্তিক ফুটবলকে এগিয়ে নেওয়া। আমরা কাজ শুরু করেছি। আমাদের একটা এলিট একাডেমি আছে। তাদের বর্তমান অবস্থা উন্নত করতে চাই। কমলাপুরে থাকার জায়গা উন্নত করা, মাঠে অনুশীলনের সমস্যা দূর করা, খাবারের মান উন্নত করা, অনুশীলন সুবিধা দেওয়া- এগুলো নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি, ফেব্রুয়ারি নাগাদ ভাল কিছু করতে পারব। অন্য যেসব দিক আছে, সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করছি। এছাড়া এক্সিকিউটিভ কমিটির সঙ্গে আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করছি। আমাদের দলগত কাজটা ভালো হচ্ছে।

প্রশ্ন : ১৯৮০’র দশকের জাতীয় দল এবং এখনকার জাতীয় দলের মধ্যে কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন?

নাসের শাহরিয়ার : আমাকে যদি জাতীয় দল নিয়ে কথা বলতে হয় তবে আমার আরও একটু পরে কথা বলা উচিত। কারণ নতুন একটা কমিটি দায়িত্ব নিয়েছে। বাফুফে সভাপতি নিজেই জাতীয় দল কমিটির দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমি আশা করছি, অন্তত এক বছর পর একটি শক্তিশালী জাতীয় দল দেখতে পারবেন। আশির দশকে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে খুব ভালো করতাম এমন নয়। কিন্তু দেশের ভেতর ফুটবলের অবস্থা ভাল ছিল।

আমাদের এবার লক্ষ্য থাকবে দুই জায়গায় ভালো করা। আমাদের মেয়েরা সাফে ভালো করেছে। ছেলেরা কেমন করে, সেটা দেখার পালা। আমরা এএফসির টুর্নামেন্টে কখনও দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে পারিনি। সামনের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় বয়সভিত্তিক এএফসি টুর্নামেন্টেগুলোতে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। এভাবে আমরা ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে চাই।

প্রশ্ন : এতক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

নাসের শাহরিয়ার : আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত