রাষ্ট্র ক্ষমতায় পরিবর্তনের পর ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন হয়েছে, তাতে পর্ষদে ফিরেছেন ব্যাংকটির এক সময়ের পরিচালক বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু।
ধুঁকতে থাকা বেসরকারি এই ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ মঙ্গলবার বাতিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সঙ্গে মিন্টুসহ সাতজনকে নতুন পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেয়।
আগের পরিচালনা পর্ষদ বাতিলের কারণ হিসাবে বলা হয়, নীতি নির্ধারণী দুর্বলতার কারণে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি, ব্যাংকিং সুশাসন ও শৃংখলা বিঘ্ন করার মাধ্যমে ব্যাংক ও আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে পর্ষদ সম্পৃক্ত থাকায় তা বাতিল করা হলো।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর স্বাক্ষরিত এই আদেশটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুল আলম খানের কাছে পাঠানো হয়।
নতুন পরিচালকদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মিন্টু এই ব্যাংকে দীর্ঘদিনের শেয়ারধারী। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি।
শেয়ারধারী জাকারিয়া তাহেরও পরিচালক হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন। কুমিল্লায় বিএনপির সাবেক এই সংসদ সদস্যের বাবা এ কে এম আবু তাহের ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন এক সময়।
উদ্যোক্তা শেয়ারধারী মোয়াজ্জেম হোসেনও নতুন করে পরিচালনা পর্ষদে এসেছেন। তিনি হোসাফ গ্রুপের কর্ণধার।
একই সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংকে চারজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. জুলকার নায়েন, সীমান্ত ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুখলেসুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর অধ্যাপক ড. মেলিতা মেহজাবিন এবং চার্টার্ড একাউন্টেন্ট মো. আব্দুস সাত্তার সরকার।
অনিয়মে ধুঁকতে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সব শেষ পরিবর্তন ঘটেছিল গত মে মাসে।
তখন পর্ষদে আগের পর্ষদের সাত সদস্যের মধ্যে চারজনই বাদ পড়েন। নতুন যোগ হন সাতজন। তাদের মধ্যে ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা জয়নুল হক সিকদারের পরিবারের কেউ ছিল না।
ওই পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়েছিল ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালক চট্টগ্রামের কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান। অন্যান্য পরিচালকরাও ছিল চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের ঘনিষ্ঠ।
ওই সময় ইউসিবি পিএলসির সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে বিরোধিতা করায় ব্যাংকের পর্ষদে এমন পরিবর্তন আনা হয়েছিল।
আগের পর্ষদ থেকে ওই সময় নতুন পর্ষদে ঠাই পাওয়া তিনজনের মধ্যে অন্য দুজন হলেন শেয়ারধারী উদ্যোক্তা পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন ও সিকদার ইন্স্যুরেন্সের মনোনীত পরিচালক সফিকুর রহমান।
ওই পর্ষদে যুক্ত হওয়াদের মধ্যে আরও ছিলেন প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক এমডি মোহাম্মদ রিয়াজুল করিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম তফাজ্জল হক, রাঙ্গুনিয়ার ব্যবসায়ী এরশাদ মাহমুদ, আইনজীবী আহসানুল করিম।
স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামী, চট্টগ্রামের চার্টার্ড একাউন্টেন্ট ড. রত্না দত্ত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা।
একদল শিল্পোদ্যোক্তার উদ্যোগে বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক হিসাবে ১৯৮৩ সালে ন্যাশনাল ব্যাংকের যাত্রা শুরু। তবে এক যুগ আগে এর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ চলে যায় জয়নুল হক সিকদারের পরিবারের হাতে।
তিন বছর আগে জয়নুল হক মারা গেলে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হন তার স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার। তখন পরিচালনা পর্ষদে তার ছেলে রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদার, মেয়ে পারভীন হক সিকদার।
সিকদার পরিবারের দাপটে নানা অনিয়মে তার আগ থেকেই ব্যাংকটি দুর্দশায় পড়ে। এর মধ্যে জয়নুল হক সিকদারের মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
এক পর্যায়ে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে নতুন পর্ষদও গঠন করে দেওয়া হয়। ওই পর্ষদে সিকদার পরিবারের অন্য সদস্যদের সরিয়ে দিয়ে শুধু পারভীন হক সিকদারকে রাখা হয়েছিল।