লম্বা ফরম্যাট মানেই লম্বা ব্যাট করো, লম্বা দলীয় ইনিংস গড়ো। তাতে দলের রান বড় হবে, বাড়বে জয়ের সুযোগ। টেস্টে এ নিয়মেই সফলতা আসে। দলীয় ইনিংস লম্বা করতে ব্যর্থ দলের ভাগ্যে জোটে হার।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের সাফল্য -ব্যর্থতার মাপকাঠিও এটাই। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু চলমান জাতীয় লিগের লম্বা স্কোর কম দেখা গেছে ৮ দল থেকে। শুধু এবার-ই নয়। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে সবসময়ই চারশো-পাঁচশো রানের দলীয় স্কোরের খরা চলে।
চলতি লিগে পাঁচ রাউন্ডের ২০ ম্যাচে হয়েছে ৭০ ইনিংস। এর মধ্যে অল্প রানের টার্গেট পাওয়া পাঁচটি ইনিংস বাদ দিলে থাকে ৬৫টি। এর মধ্যে চারশো ছাড়ানো স্কোর এসেছে মাত্র ৫ ইনিংসে। রাজশাহী, ঢাকা মেট্রো, খুলনা, ঢাকা বিভাগ ও সিলেট একবার করে চারশো ছাড়ানো স্কোর উপহার দিয়েছে।
একমাত্র সিলেট সর্বোচ্চ ৭ উইকেটে ৪৯৬ রানের ইনিংস গড়েছে। সিলেটের জন্য বড় রান করার সুযোগ আরও এসেছে। তবে বিপক্ষের ইনিংস ছোট হওয়ায় রান পাহাড় তৈরি করা লাগেনি দলটির ব্যাটারদের। বোলাররা হাতে হাত রেখে এগিয়ে আসায় সিলেটের জয়ও এসেছে বেশি।
৫ রাউন্ড শেষে সর্বোচ্চ তিন জয় ও ২ ড্র’য়ে ৮ দলের লড়াইয়ে শীর্ষে তারা।
চারশো হওয়া ৫ ইনিংস বাদে বাকি ৬০ ইনিংসের মধ্যে ১০টিতেই তিনশো ছাড়ানো স্কোর এসেছে। চারশো না হওয়া কমতি মেনে তিনশোর ব্যাপারটিকে এগিয়ে রাখছেন তালিকায় শীর্ষে থাকা সিলেট দলের হেড কোচ রাজিন সালেহ।
সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক সকাল সন্ধ্যাকে বলেছেন, “এটা ঠিক ঘরোয়া ক্রিকেটে আমাদের বড় রান হয়না। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের হিসেব ধরলে আমাদের ব্যাটারদের অনেক কমতি আছে। এদিকটায় যদি উন্নতি করতে চাই তাহলে ব্যাটিং উইকেট নয় ঘাসের উইকেটেই খেলা উচিত, যেটা এবার হচ্ছে।”
রাজিন আরও যোগ করেন, “এবার তিনশো রানের বেশ কিছু ম্যাচ হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ হলো ম্যাচগুলোতে ফল এসেছে। ব্যাটারদের উন্নতি করতে হলে ঘাসের উইকেটে খেলিয়ে কম রান হলেও ক্ষতি নেই। তাতে ব্যাটাররা স্পোর্টিং উইকেটে খেলা শিখবে, রান করা শিখবে।”
নিজের অভিজ্ঞতা টেনে রাজিন বলেছেন, “ভারতে আমি খেলেছি এবং কোচিংও করিয়েছি। সেখানে একটিও ব্যাটিং উইকেট করা হয় না। স্পিনিং নয়তো ঘাসের উইকেট। এতে কঠিন উইকেটে ব্যাটাররা রান করা শেখে। আমাদের এখন চারশোর ইনিংস হয়তো হচ্ছে না। কিন্তু এমন উইকেটে খেলা শিখে গেলে এই ব্যাটাররাই সামনে বড় রান পাবে এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ভালো করবে।”
তিনশো রানের ম্যাচগুলোতে ফল হওয়া ভালো খবর। এতে ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রতিযোগীতা বাড়ছে। কিন্তু জাতীয় দল তো টেস্টে তিনশো রান করতে পারছে না!
পাকিস্তান সিরিজের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটের হিসেব বাদ দিলে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের চার টেস্টের আট ইনিংসে তিনশো ছাড়ানো স্কোর মাত্র একটি।
স্পোর্টিং উইকেটে ব্যাটারদের ভালো করার অভ্যাস গড়ার তাগিদ দিয়েছেন রাজিন। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটারদের ঘরোয়া ক্রিকেটে দেখা যায় খুব কম। তাই নিয়মিত তিনশো টেস্ট ইনিংসের অভ্যাসই তৈ হচ্ছে না। চারশোর অভাবটাও সেখান থেকেই।
ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত চারশো হলেই তো টেস্টে চারশো আসবে!