Beta
শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৫

এসে গেল বিটা প্রজন্ম, কেমন হবে প্যারেন্টিং

beta-child-and-parenting
[publishpress_authors_box]

ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা ছুঁতেই, নতুন ইংরেজি বছরের উদযাপন শুরু হয়। মূলত ক্যালেন্ডারের একটি পাতা বদল কিংবা আরও একটি নতুন দিন শুরু হওয়া ছাড়া- নতুন বছর হয়তো কিছুই নয়। কোনও কিছুই রাতারাতি বদলে যায় না। তবে এবারের নতুন বছর একটি নতুন প্রজন্ম নিয়েও হাজির হয়েছে।

২০২৫ সাল থেকেই ‘জেনারেশন বিটা’র যাত্রা শুরু, এদের একটি বড় অংশ হবে ২২ শতকের ভোরের সাক্ষী।

জেনারেশন বিটাতে ২০২৫ থেকে ২০৩৯ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারীরা অন্তর্ভুক্ত। ২০৩৫ সালের মধ্যে, মোট বৈশ্বিক জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ হবে এই প্রজন্মের।

কিন্তু তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো কেমন হবে, এবং তারা আগের প্রজন্মগুলো- অর্থাৎ আলফা (২০১৩-২০২৪), জেড (১৯৯৭-২০১২), মিলেনিয়ালস (১৯৮১-১৯৯৬), জেনারেল এক্স (১৯৬৫-১৯৮০) এবং বেবি বুমারস (১৯৪৬-১৯৬৪) থেকে কতটা ব্যতিক্রম হবে?

বিটা প্রজন্মের শিশুরা প্রযুক্তি এবং এআই দ্বারা আধিপত্যপূর্ণ বিশ্বে জন্ম নিতে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাদের জীবনযাপন ধারা পূর্বসূরিদের থেকে আমূল পরিবর্তন হবে।

মনোবিজ্ঞানী এবং মানসিক স্বাস্থ্য কর্মী ডঃ অরবিন্দ ওটার মতে, প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির মধ্য বিটা প্রজন্মের শৈশব কাটবে। এমনকি তাদের শেখার এবং বিনোদনের অভিজ্ঞতার জন্য থাকবে কাস্টমাইজড এআই অ্যাপ্লিকেশন। এই পার্থক্যগুলো বিটা প্রজন্মে জন্মগ্রহণকারীদের অল্প বয়স থেকেই জটিল ডিজিটাল পরিবেশে অভ্যস্ত হতে শেখাবে। ফলে তাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার ওপর প্রযুক্তি বড় ভূমিকা রাখবে। বিটা প্রজন্মের কাছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং মানসিক স্বাস্থ্য আরও গভীরভাবে গুরুত্ব পাবে।

মুম্বাই-ভিত্তিক শিশু মনোবিজ্ঞানী এবং প্যারেন্টিং কাউন্সেলর ঋদ্ধি দোশি প্যাটেলও একই বলেন। তিনি যোগ করেন, “বিটা প্রজন্মের শিক্ষা, বিনোদন এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়া আরও অনলাইনে স্থানান্তরিত হবে।”

জনসংখ্যাবিদ এবং ভবিষ্যতবিদ মার্ক ম্যাকক্রিন্ডলের ব্লগ পোস্ট অনুসারে, “বিটা প্রজন্মের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হবে বড় বড় সামাজিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে যুদ্ধরত এক পৃথিবীতে তাদের আগমন এবং বড় হয়ে ওঠার ব্যাপারটি। জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার পরিবর্তন, এবং দ্রুত বাড়তে থাকা নগরায়নে টিকে থাকার সংগ্রামটি একটি প্রত্যাশায় রূপ নিবে। পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলো তাদের বেড়ে ওঠার বছরগুলোতে সামাজিক মূল্যবোধে রূপ নিবে।”

“এক কথায় বিটা প্রজন্মকে আইপ্যাডের সংস্করণ ২.০ বা ‘শেফোরা কিডস’ হিসেবে দেখা যেতে পারে, যাদের মধ্যে থাকবে ‘এক চিমটি ঔদ্ধত্য’- অর্থাৎ কৌতুক, চঞ্চলতা, অথবা মজার ছলে তিরস্কারের মিশ্রণের ব্যক্তিত্ব।”  

‘শেফোরা কিডস’ টার্মটি ব্যবহার করা হয়- অল্প বয়সী ছেলে-মেয়েদের (বিশেষ করে টিনএজার বা তারও কম বয়সী) প্রসাধনী বিক্রেতা সেফোরা ব্র্যান্ডের পণ্য বা ব্র্যান্ডের প্রতি ক্রমবর্ধমান আকর্ষণ বোঝাতে।  

ডঃ ওটা বলছেন, অটোমেশন এবং এআই যদি জেনারেল বিটার জন্য জীবনকে সহজ করে তুলতে পারে, সৃজনশীলতা, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং মানসিক বুদ্ধিমত্তার মতো দক্ষতা অনেকটা জোর দিয়েই চর্চার প্রয়োজন হবে। এআই-নির্ভর পরিবেশে এই দক্ষতাগুলোর স্বাভাবিক বিকাশ হয় না।

ঋদ্ধি আরও উল্লেখ করেন, এআই-এর ওপর বিটা প্রজন্মের নির্ভরতা তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ভার্চুয়াল বাস্তবতা এবং মেটাভার্স তাদের জন্য মামুলি একটি ব্যাপার হবে। ভার্চুয়াল পরিবেশে ঘন ঘন নিমজ্জিত হওয়ায় এই প্রজন্মের মানুষদের বাস্তব এবং ভার্চুয়াল জীবনের সীমানা ঝাপসা হতে পারে, যা তাদের মানসিক সুস্থতাকে অবশ্যই প্রভাবিত করবে।

২০২৫ সালের প্রথম মিনিটেই জন্ম নেয়া তিনটি বিটা প্রজন্মের শিশু।

এ প্রসঙ্গে তিনি ছয় বছর বয়সী একটি শিশুর ওপর প্রযুক্তির প্রভাবের ঘটনা বলেন। সেই শিশুটির বাবা-মা তাকে মানসিক চিকিৎসা করাতে নিয়ে এসেছিল। শিশুটির কাছে সুন্দর মানে ‘নীল চোখ এবং ফর্সা ত্বক’কে। প্রযুক্তি তাকে এভাবে ভাবতে শিখিয়েছে বলেই তার ভেতর ‘সুন্দর’ এর এই সংজ্ঞা তৈরি হয়েছে।

এই ধরনের আদর্শিক মনোভাব, যদি এখনই সুরাহা না করা হয়, তাহলে জেনারেল বিটার মধ্যে আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে।

আমাদের অনেকেই বড় হওয়ার পরও মুরুব্বিদের সামনে সেল ফোন বা ল্যান্ডফোন ব্যবহারে কুণ্ঠিত হতাম। কমবয়সী ছেলেমেয়েদের ফোন ব্যবহার বাবা-মায়েরাও খুব ভালো দৃষ্টিতে দেখতেন না। সেই ভাবনায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। জীবনযাপনে টেকনোলজির ব্যবহার প্যারেন্টিং এর ধরনও পাল্টে দিয়েছে।

এখনকার বাবা-মায়েরা আগের প্রজন্মের চেয়ে সন্তানদের প্রতি অনেক বেশি নমনীয়, ইনক্লুসিভ এবং তারা সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করেন।

আধুনিক বাবা-মায়েরাও তাদের সন্তানদের সঙ্গে আবেগ এবং মানসিক সুস্থতা নিয়ে আলোচনা করতে বিব্রত বোধ করেন না। যখন মানুষ খোলামেলা কথা বলে, তখন তারা নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ করতে এবং অন্যের সাথে সহজে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়। খোলা মনোভঙ্গি মানুষকে আরও বেশি সৎ ও আন্তরিক হতে উৎসাহিত করে, যা পারস্পরিক বিশ্বাস ও বোঝাপড়াকে আরও গভীর করে তোলে।

অভিভাবকত্বের এই নতুনত্বের চ্যালেঞ্জে প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে থাকা শিশুদের বড় করার ব্যাপারটিও যোগ হয়েছে।  

বিটা প্রজন্মের শিশুদের প্যারেন্টিং এর জন্য কিছু টিপস বিশেষজ্ঞরা দিয়েছেন।

আত্ম-প্রেম এবং গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করুন

এআই এবং সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের মধ্যে এক ধরনের কৃত্রিম সৌন্দর্যবোধ ও জীবনযাত্রার মান তৈরি করে। বাবা-মায়েদের অবশ্যই তাদের সন্তানদের মধ্যে নিজস্ব মনোজগত তৈরি এবং নিজেকে গুরুত্ব দেয়ার অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে হবে। তাদের অনন্য গুণাবলী গ্রহণ করতে এবং দেখনদারি সুখের চেয়ে প্রকৃত সুখকে অগ্রাধিকার দিতে উৎসাহিত করা উচিত।

ভারসাম্য প্রযুক্তি এবং অফলাইন অভিজ্ঞতা

জেন বিটা জন্ম থেকেই এআই এবং প্রযুক্তি দ্বারা বেষ্টিত থাকবে, যা স্কিন টাইম এবং বাস্তব-বিশ্বের কার্যকলাপের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করাটি সামনের দিনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল জীবনের  বাইরে সৃজনশীলতা এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়াকে লালন করতে খেলাধুলা, শিল্পকলা এবং আউটডোর এর মতো শখের সঙ্গে সন্তানদের পরিচয় ঘটাতে হবে।

ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং সমালোচনামূলক চিন্তা শেখান

শিশুদের দায়িত্বের সঙ্গে ডিজিটাল বিশ্ব  পরিচালনা করতে প্রস্তুত করার রাস্তায় এগোতে হবে। তাদেরকে অনলাইনে থাকা বিভিন্ন কনটেন্ট নিয়ে প্রশ্ন করতে শেখাতে হবে। এআই এর পক্ষপাতিত্ব চিনতে এবং সত্য ও কল্পকাহিনীর মধ্যে পার্থক্য করতে শেখাতে হবে। ভুল তথ্য এড়িয়ে চলা এবং সঠিক তথ্য বেছে নেয়ার ব্যাপারে তাদেরকে সক্ষম করে তোলার ব্যবস্থাটি নিতে হবে।    

মানসিক বুদ্ধিমত্তা এবং আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতার ওপর জোর দিন

সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া বাড়ছে ভার্চুয়ালি। বাবা-মায়ের উচিত তাদের সন্তানের মানসিক বুদ্ধিমত্তা বিকাশের দিকে মনোনিবেশ করা। অর্থপূর্ণ মানব সংযোগ গড়ে তুলতে খোলা কথোপকথন, সহানুভূতি এবং সহযোগিতাকে উৎসাহিত করতে হবে।

সৃজনশীলতা এবং অভিযোজনযোগ্যতাকে উৎসাহিত করুন

যেহেতু অটোমেশন চাকরি এবং জীবনধারায় রূপান্তর আনছে, সে কারণেই সৃজনশীলতা এবং অভিযোজনযোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হয়ে উঠবে। বিটা প্রজন্মের শিশুদের দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে উন্নতি করতে সাহায্য করার জন্য অনুসন্ধানমূলক শিক্ষা, সমস্যা সমাধান এবং নতুন ধারণা নিয়ে পরীক্ষা করার সুযোগ করে দিতে হবে।

বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা তৈরি করুন

সোশ্যাল মিডিয়া বা এআই-চালিত বিষয়বস্তু দ্বারা প্রভাবিত নাগালের বাইরে থাকা জীবনযাত্রাকে এড়িয়ে চলতে হবে। নিজের সন্তানের শক্তির ওপর ফোকাস করে রাতারাতি নিখুঁত করতে চাওয়ার বদলে ধীরে ধীরে অগ্রগতিতে উৎসাহিত করতে হবে। চাপ ছাড়াই তাদের বেড়ে উঠতে সহায়তা করতে হবে।

এছাড়া ডিজিটাল আধিপত্যের বিপরীতে পারিবারিক সংযোগের বন্ধনের ব্যাপারে জোর দিতে হবে। একসঙ্গে মানসম্পন্ন সময় কাটাতে হবে। শিশুদের পারিবারিক ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত করতে হবে। এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেখানে শিশুরা ভার্চুয়ালের চেয়ে মানবিক সংযোগকে বেশি গুরুত্ব দিবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত