নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগ। দলটি বলছে, এ এম এম নাসির উদ্দীন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন বিএনপি-জামায়াত ঘনিষ্ঠ। নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য কমিশন গঠনের এই নাটক সাজিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে গত ২৪ নভেম্বর শপথ নেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীন। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে শপথ নেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব তাহমিদা আহমদ ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
ছাত্র-জনতার ওই আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়। তারপর গুরুত্বপূর্ণ সব দপ্তরের শীর্ষ পদে আসে পরিবর্তন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারাও সরে দাঁড়ান। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৫ সেপ্টেম্বর বিদায় নেয় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন।
নতুন কমিশন গঠনের দুই দিন পর বুধবার আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে স্ট্যাটাস দিয়ে। সেখানে দলটির দায়িত্বশীল কোনও নেতার স্বাক্ষর নেই। ক্ষমতার পালাবদলের পর আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতারা অপ্রকাশ্যে থেকেই গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের ওই স্ট্যাটাসে বলা হয়েছে, “সম্প্রতি অসাংবিধানিক ও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী, তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকার তাদের কোনও সাংবিধানিক ও আইনি ম্যান্ডেট না থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণরূপে অসাংবিধানিক ও বেআইনিভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে।
“বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে এই অবৈধ নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে দেশের স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠীর অনুকূলে নগ্ন দলীকরণ করা। তারা এই কাজটিই করেছে। সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের সকলেই বিএনপি জামাতের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত।”
আওয়ামী লীগ আমলে নির্বাচন কমিশন গঠনে নিরপেক্ষতা নিয়ে সমালোচনা করত বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।
স্ট্যাটাসে ক্ষমতাচ্যুত দলটি দাবি করছে, “আওয়ামী লীগ সরকারে থাকাকালীন সময় প্রত্যেকবারই নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে ৮২টি উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন। গণতন্ত্রকে টেকসই করার লক্ষ্যে তার এই নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কার্যক্রম দেশে বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।”
স্ট্যাটাসে আওয়ামী লীগ বলেছে, “গণতন্ত্র হত্যার লক্ষ্যে এই ধরনের ঘৃণ্য উদ্যোগকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। দেশের গণতন্ত্র প্রিয় সংগ্রামী মানুষ গণতন্ত্র হত্যার এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।”
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিএনপি-জামায়াতসহ সক্রিয় প্রায় সব রাজনৈতিক দল স্বাগত জানালেও জানায়নি জাতীয় নাগরিক কমিটি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে রাষ্ট্রের সংস্কার, পুনর্গঠন ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে এই কমিটি। তারা বলছে, সংস্কারের আগে ইসি গঠন গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।