চট্টগ্রামে সহকারী সরকারি কৌঁসুলি সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী।
মঙ্গলবার রাতে নগরীর সেবক কলোনি, হাজারি গলি, পাথরঘাটা, সদরঘাট ও আন্দরকিল্লা এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী। তবে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
রাতভর এই অভিযানের মধ্যেই নগরীর কয়েকটি মন্দিরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে হিন্দু অধ্যুষিত কয়েকটি এলাকায় হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় রাতভর আতঙ্কে ছিলেন এসব এলাকার মানুষ।
সোমবার ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের নেতা ও হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
পরদিন তাকে চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম আদালতে তোলা হলে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম।
এর প্রতিবাদে আদালত প্রাঙ্গণে আগে থেকে জড়ো হওয়া চিন্ময়ের অনুসারীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা চিন্ময়কে কারাগারে নিতে চাওয়া প্রিজন ভ্যানের সামনে অবস্থান নেয়।
তাদের ছত্রভঙ্গ করতে একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডে ছোড়ে পুলিশ ও বিজিবি। সেসময় পুলিশকে লক্ষ্য করেও ইট-পাটকেল ছোড়েন চিন্ময়ের অনুসারীরা। সংঘর্ষ আদালত প্রাঙ্গণ পেরিয়ে আশপাশের এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে অংশ নেয় স্থানীয়রাও।
সংঘর্ষের পর সেবক কলোনি এলাকায় সাইফুল ইসলামের লাশ পাওয়া যায়। পরে তা উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
যৌথ অভিযান সম্পর্কে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আইনজীবী খুনের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে ৩০ জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। তাদের সবার পরিচয় এখনই বলা যাচ্ছে না। যাচাই-বাছাই শেষে নিশ্চিত করে বলা যাবে।
“হত্যার ঘটনায় দুটি মামলা হতে পারে। একটি আইনজীবীকে হত্যা মামলা এবং আরেকটি পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার মামলা। আইনজীবী হত্যা মামলা তার পরিবার করবে বলে জেনেছি।”
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে জড়ো হয়ে ইসকন নিষিদ্ধের স্লোগান দিতে থাকে।
রাতেই হামলা করা হয় ফিরিঙ্গি বাজারের লোকনাথ ব্রহ্মচারী মন্দিরে। ভাঙচুর করা হয় হাজারি গলির কালী মন্দিরের সামনের অংশ। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় সেবক কলোনির প্রধান মন্দির।
হাজারি গলিতে একটি সোনার দোকানে ডাকাতিরও চেষ্টা করে একদল দুর্বৃত্ত। পরে স্থানীয়রা সেনাবাহিনীকে খবর দিলে তারা পালিয়ে যায়।