Beta
শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

‘রাতের ভোটের’ এসপিদেরও অবসরে পাঠানো হবে : আসিফ মাহমুদ

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
[publishpress_authors_box]

২০১৮ সালের ‘রাতের ভোটের’ নির্বাচনে দেশের ৬৪ জেলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপারদেরও (এসপি) অবসরে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ।

শুক্রবার নিজের ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে এ কথা জানিয়েছেন তিনি।

এর আগের দিন বৃহস্পতিবার বড় এক সিদ্ধান্তে সরকার তিনজন সচিব, ১৭ জন অতিরিক্ত সচিবসহ ২২ কর্মকর্তাকে অবসর দেয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের সাজা দেওয়ার শেষ পর্বে এসে সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়।

এর আগে বুধবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরে কর্মরত যুগ্ম সচিব ও সমপর্যায়ের প্রশাসনের ৩৩ কর্মকর্তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওএসডি করা হয়। এরা ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টার পদে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। বর্তমানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টার পাশাপাশি যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার পদ সামলাচ্ছেন তিনি।

ফেইসবুক পোস্টে আসিফ মাহমুদ লিখেছেন, “২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনে ৬৪ জেলার দায়িত্বে থাকা এসপিদেরও ওএসডি/বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে।”

তিন সচিব, ১৭ অতিরিক্ত সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসর

বৃহস্পতিবার যে ২২ কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে একজন যুগ্ম সচিব ও একজন উপসচিব রয়েছেন। তাদের মধ্যে চারজন ২০১৪ সালের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন। এর সবাই ১৭তম ও ১৮তম বিসিএসের কর্মকর্তা।

এদের মধ্যে বৃহস্পতিবার চাকরির বয়স ২৫ বছর হওয়া ২২ সাবেক ডিসিকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে বলে সেদিন জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।

১৯৮২ বিসিএস এর কর্মকর্তা মো. মোখলেস উর রহমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় অবসর থাকাকালে জ্যেষ্ঠ সচিব পদে নিয়োগ পান।

বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো তিন সচিব হলেন- শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান, জনপ্রশাসন মন্তণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু হেনা মোরশেদ জামান।

মোখলেস উর রহমান বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, “জনপ্রশাসন–সংক্রান্ত কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন তারা নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছিলেন। তাদের মধ্যে এরই মধ্যে ৪৩ জনকে ওএসডি করা হয়েছে।

“এক্ষেত্রে ওএসডি করা হয়েছে তাদের যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম। আর যারা ২৫ বছরের বেশি সময় চাকরি করেছেন তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে দেওয়া হচ্ছে। আজ এ রকম ২২ জন সাবেক ডিসিকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার আদেশ জারি করা হয়েছে।”

এছাড়া যে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাদের বিষয়গুলো দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হবে বলেও জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব।

সাবেক ডিসিদের বাইরেও অন্য কর্মকর্তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেসব কর্মকর্তার নামে দুর্নীতির অভিযোগ আছে বা যারা আইনের বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন, তারা চাকরিবিধি অনুযায়ী সাজার মুখোমুখি হবেন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ওই নির্বাচনের আগের রাতে অধিকাংশ ভোট হওয়ার অভিযোগ রয়েছে, যে নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ একাই ২৫০টির বেশি আসন পায়।

নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে অংশ নেয় বিএনপি ও সমমনা দলগুলো; পায় মাত্র সাতটি আসন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। সে অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই পরের তিনটি নির্বাচন হয়; জয়ী হয় আওয়ামী লীগ।

এর মাধ্যমে টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে। তারপর ডিসেম্বরে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল করে রায় দিয়েছে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ, তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরার পথ তৈরি হয়েছে।

অবাধ ও নিরপেক্ষতা ‘নিশ্চিত করতে না পারায়’ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত তিন জাতীয় নির্বাচনে ‘জনগণের আস্থা ধ্বংস করা হয়েছে’ বলে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয় ওই রায়ে।

এদিকে গত মাসে ক্ষমতার অপব্যবহার, অপরাধমূলক অসদাচরণ, জালিয়াতি ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট রাতে করার অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

তৎকালীন নির্বাচন কমিশন, প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, ক্ষমতাসীন রাজ‌নৈ‌তিক দ‌ল আওয়ামী লীগ নেতা‌দের বিরু‌দ্ধে এ অনুসন্ধান করা হবে বলে গত ২২ জানুয়ারি জানান দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত