Beta
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

দেশের অর্ধেক জেলায় নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ : আইইডিসিআর

nipa virus19-12-24
[publishpress_authors_box]

দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৪ জেলায় নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। ধীরে ধীরে সংখ্যাটা বাড়ছে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।

গত বছরে আক্রান্ত এক শিশুর প্রসঙ্গ টেনে সংস্থাটি জানিয়েছে, এতদিন শুধু খেঁজুরের রস, পাখির খেয়ে রাখা ফল এবং মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর তথ্য জানা গেছিল। এখন দেখা যাচ্ছে মায়ের বুকের মাধ্যমেও ছড়াচ্ছে নিপা ভাইরাস।

বৃহস্পতিবার নিপা ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকি বিষয়ক মত বিনিময় সভায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসব কথা জানিয়েছে। অনুষ্ঠানে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন নিপা ভাইরাস নিয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।

তাহমিনা শিরীন বলেন, চলতি বছরে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত পাঁচজনই মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের মধ্যে দুজন মানিকগঞ্জের, এছাড়া খুলনার দাকোপ, নওগাঁ এবং শরীয়তপুরের নড়িয়ার আছেন একজন করে। পাঁচজনকেই মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। পরে তাদের লক্ষণ-উপসর্গ শুনে লালা পরীক্ষা করে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে।

২০২৩ সালে দেশে সবচেয়ে বেশি নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে নওগাঁ থেকে পাঁচজন, রাজবাড়ি থেকে চারজন, রাজশাহী, পাবনা, নাটোর ও নরসিংদি থেকে পাওয়া যায় একজন করে। এখন পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩৪ জেলায় নিপার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। ধীরে ধীরে সংখ্যাটা বাড়ছে।

গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে আক্রান্ত এক শিশুর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “সেবার এক মায়ের খেঁজুরের রস খাওয়ার ইতিহাস ছিল। তিনি তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতেন। তারা দুজনই নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। শিশুটি মারা গেছে, মা এখনও বেঁচে আছে।

“অর্থাৎ এখানে দেখা যাচ্ছে নিপা মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমেও ছড়ায়।”, বলেন অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন।

বিশ্বে মালয়েশিয়াতে প্রথম নিপা ভাইরাস শনাক্ত হয়, যা ছড়িয়েছিল শূকরের মাধ্যমে। পরবর্তীতে ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, ভারত এবং বাংলাদেশেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে প্রথম নিপা ভাইরাস শনাক্ত হয় ২০০১ সালে।  ২০০৬ সাল থেকে আইসিডিডিআরবির সহযোগিতায় আইইডিসিআর নিপা নিয়ে কাজ শুরু করে।

তখন থেকে এখন পর্যন্ত দেশে এ রোগে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৩৪৩ জন। এই ভাইরাসে মৃত্যুহার ৭১ শতাংশ। তবে যারা বেঁচে থাকেন তাদেরও দীর্ঘমেয়াদি নানা ধরনের স্নায়ুজনিত রোগ দেখা দেয়।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর অনুষ্ঠানে বলেন, পুরো দেশ এখন নিপার ঝুঁকিতে। এতে মৃত্যুহার অনেক বেশি। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৮৮ জন বেঁচে আছেন। তাদের মধ্যে ৫২ জন আইইডিসিআরের নিয়মিত ফলোআপে রয়েছেন।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এলেও এই ভাইরাস ছড়ায়। তাই নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার সময় অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

স্বাস্থ্যবিধি কী এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার সুবিধা উল্লেখ করে তাহমিনা শিরীন বলেন, “মাস্ক এবং গ্লাভস পরতে হবে, বারবার সাবান পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। শীতের সময়ে অনেকেই খেঁজুরের কাঁচা রস খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু আমাদের দেশে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ এই কাঁচা রস।”

খেঁজুর গাছ যখন রস পাবার জন্য কাটা হয় তখন সেখানে বাদুড় বসে। বাদুড়ের মুখের লালার মাধ্যমে নিপা ভাইরাস রসের সঙ্গে মিশে যায়। সেই রস খেয়ে মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তাই কোনওভাবেই এই রস খাওয়া যাবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত