Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে বোঝার উপায় নেই ৫ দিন বাদে ভোট

ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়াগো শহর ঘুরে ভোটের আমেজ পাওয়া গেল না।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়াগো শহর ঘুরে ভোটের আমেজ পাওয়া গেল না।
[publishpress_authors_box]
যুক্তরাষ্ট্র থেকে
যুক্তরাষ্ট্র থেকে
যুক্তরাষ্ট্র থেকে

যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের সান ডিয়াগোর পর পূর্ব উপকূলের ফ্লোরিডায়ও সাগরের ঢেউয়ের যে গর্জন শোনা গেল, নির্বাচন তার কাছে-ধারেও যেতে পারল না। অথচ ভোটের বাকি মোটে পাঁচ দিন!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে পুরো বিশ্বই তাকিয়ে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিরবেন, না কি কমলা হ্যারিস ইতিহাস গড়বেন, তা নিয়ে অন্য সব দেশে চায়ের টেবিলে ঝড় বইছে। কৌতূহলের এমন ঢেউ বরাবরের মতো আছড়ে পড়েছে বাংলাদেশেও।

ঠিক এই সময়ে ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোয় থেকে বোঝার চেষ্টা করছিলাম, নির্বাচনটি কেমন হচ্ছে। কিন্তু না, তেমন কিছুই চোখে পড়ল না। বাংলাদেশে ভোটের যে চিত্র, তার সঙ্গে তুলনা করা বোকামিই বলল প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

অলিগলিতে মিছিল নেই,  মাইকের শব্দ নেই, সদলবলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়ার নমুনাও নেই। অরল্যান্ডোর রাস্তায় কোনও পোস্টারও চোখে পড়ল না।

ফ্লোরিডার ক্লিয়ারওয়াটার বিচ।

টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বেইলর ইউনিভার্সিটিতে জনস্বাস্থ্য নিয়ে পিএইচডি করছেন বাংলাদেশি তানভীর আহমেদ। এক বছর হয়েছে দেশ ছেড়েছেন।

তার সঙ্গে কথা হলো যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের আবহ নিয়ে। তিনি বলেন, “এমন নির্বাচন প্রথম দেখছি। নির্বাচনী আমেজ বলতে আমরা যেটার সঙ্গে পরিচিত, তা এখানে নেই। ভার্সিটিতে কোনও পোস্টার নেই। মিছিল নেই। মিটিং নেই।”

বিশাল এই রাষ্ট্রের পূর্ব প্রান্তের অর‌ল্যান্ডো আসার পাঁচ দিন আগে পশ্চিম প্রান্তের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়াগোতে থেকেও ভোটের আঁচ টের পাওয়া গেল না।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনী আমেজ এমনই। বাংলাদেশের সঙ্গে মিলবে না। এখানে প্রার্থীদের প্রচার মূলত ইন্টারনেট ও টেলিভিশনকেন্দ্রিক।

টেলিভিশনগুলো প্রধান দুই দল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীর মধ্যে বিতর্কের আয়োজন করে। বিতর্কে প্রতিপক্ষের প্রশ্নের জবাবে কী বলা হচ্ছে, নির্বাচিত হলে দেশে কী কী পরিবর্তন আনা হবে, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ঘটনাবলী নিয়ে প্রার্থীরা কী ভাবছে, তাদের দলের ভাবনাই বা কী-এসব দেখে-শুনে ভোটাররা সিদ্ধান্ত নেয়, কাকে ভোট দেবে।

তবে এ হিসাব-নিকাশ সচরাচর দেখা যায় দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর বেলায়। আরিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভেনিয়া ও উইসকনসিন- এই সাত দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যই ৫ নভেম্বর ঠিক করে দেবে, তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে?

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়াগো শহর।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আলাদা আমেজ নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান ডিয়াগোর নিউরোসায়েন্স বিভাগের গবেষক ড. নাদিম মাহমুদ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ধরন আমাদের দেশের মতো নয়। এখানে দেয়ালে পোস্টার সাঁটানো হয় না। রাস্তা আটকে মিছিল হয় না। স্কুল ছুটি দিয়ে স্কুলের মাঠে জনসমাবেশের আয়োজন করা হয় না।”

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার নিয়ে তিনি বলেন, “এখানে প্রচারণা মূলত ইন্টারনেট ও টেলিভিশনকেন্দ্রিক। টেলিভিশনগুলো প্রার্থীদের মধ্যে বিতর্কের আয়োজন করে। সেখানে তাদের কঠিন কিছু প্রশ্ন করা হয়। সেসব প্রশ্নের উত্তর থেকে ভোটাররা প্রার্থীদের দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ঘিরে চিন্তাভাবনা জানতে পারে। এরপর তারা বেছে নেন, কাকে তারা ক্ষমতায় বসাবে।

“এছাড়া ইন্টারনেটের জরিপগুলো ভোটারদের মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ওইসব জরিপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তারা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়।”

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট হয় না বলে আক্ষেপ ফুটে উঠল তানভীরের কণ্ঠে।  

নাদিম মাহমুদ আরেকটি দিক তুলে ধরে বলেন, “মজার বিষয় হলো, এখানকার প্রার্থীরা প্রচারণার জন্য জনগণের কাছ থেকে চাঁদা তোলে। দলের কোষাগারে সেই অর্থ জমা হয়। অথচ আমাদের দেশে প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন কেনে টাকা দিয়ে। জনগণের পেছনে তারা কাড়ি কাড়ি টাকা ব্যয় করে। ক্ষমতায় গেলে সেই জনগণকে ভুলে গিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে তারা। কী দুর্ভাগ্য আমাদের!”

টিভি বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস।

বাংলাদেশবাংলাদেশিদের ওপর প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটিও এবারের ভোট নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশে মত্ত। কে নির্বাচিত হলে আখেরে তাদের জন্য মঙ্গল হবে, এনিয়ে জোর তর্ক-বিতর্ক চলছে তাদের মধ্যে।   

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন সাংবাদিকতায় ছিলেন মুশফিক ওয়াদুদ। বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বোল্ডারে পিএইচডি করছেন। পাশাপাশি সাংবাদিকতার ইনস্ট্রাক্টর হিসাবে কাজ করছেন।

রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের মধ্যে কে জয় পেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য কল্যাণের হবে-এই প্রশ্নের জবাবে মুশফিক ওয়াদুদ বলেন, “ঐতিহাসিকভাবে অভিবাসীরা ডেমোক্রেট সম‌র্থক। কারণ ডেমোক্রেটদের নীতিগুলো অভিবাসীদের পক্ষে যায়।”

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফল দু’দেশের সম্পর্কে বিশেষ করে বাণিজ্যিক সম্পর্কে কতটা প্রভাব ফেলে- এই প্রশ্ন করা হয় নিউইয়র্কের গবেষণা সংস্থা আইবিএম টমাস জে ওয়াটসন রিসার্চ সেন্টারের তত্ত্বীয় কোয়ান্টাম কম্পিউটার বিজ্ঞানী ওমর শেহাবের কাছে।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বাংলাদেশ আমেরিকা থেকে আমদানি করে বেশি আর আমেরিকাতে রপ্তানি করে কম। কাজেই দিনশেষে বাংলাদেশে থাকা আমেরিকান রাষ্ট্রদূতরা এক একজন সেলসপারসন ছাড়া আর কিছুই নয়।”

উদাহরণ হিসাবে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নামটি উল্লেখ করে বলেন, “রাষ্ট্রদূত পদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই বাংলাদেশে ব্যবসা করে এমন প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন তিনি। আমেরিকান প্রতিষ্ঠানগুলো যতক্ষণ বাংলাদেশে তাদের পণ্য ও সেবা বিক্রি করতে পারছে, ততক্ষণ তারা খুশি।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত