বাংলাদেশ লাগোয়া ভারতের সীমান্ত এলাকায় বিক্ষোভ এবং ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের উপ হাই কমিশনে হামলার প্রেক্ষাপটে সীমান্তে যেকোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি কিংবা অপতৎপরতা রোধে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ও সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছে বিজিবি।
তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলছেন, সীমান্তে এখন কোনও ধরনের উত্তেজনা নেই, পরিস্থিতি আগের মতোই আছে।
বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে ফায়ার সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে আন্তর্জাতিক ভলান্টিয়ার দিবস-২০২৪-এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি একথা জানান।
গত ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশের সাবেক ইসকন পুরোহিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছে ভারত সরকার। দেশটিতে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারাও চিন্ময়ের মুক্তি দাবি করছেন।
এমন পরিস্থিতিতে গত ২ ডিসেম্বর চিন্ময়ের মুক্তি দাবিতে ভারতের বাংলাদেশ লাগোয়া ভারতের রাজ্য ত্রিপুরার আগরতলায় এক সমাবেশ থেকে বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনে হামলা চালানো হয়।
হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামে একটি সংগঠনের প্রতিনিধিদল সেদিন সহকারি হাই কমিশন ঢুকে ভাঙচুর চালায় ও বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে।
পরদিন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি জানায়, দেশের সীমান্তে যেকোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি কিংবা অপতৎপরতা রোধে তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত ও সতর্ক রয়েছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে ভারতে বিক্ষোভের জের ধরে চারটি শুল্ক স্টেশন দিয়ে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “সীমান্তে কোনও উত্তেজনা নেই। সীমান্তে অন্য সময়ের মতো একই অবস্থা চলছে।”
তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ নিয়ে ব্যাপক অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “ভারতীয় মিডিয়া অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এর জবাব কিন্তু আপনারাই দিতে পারেন– সত্যি ঘটনা প্রকাশ করে।
“এরকম একটা নগণ্য প্রচার, একটা মিথ্যা প্রচার– এটা অন্য দেশের প্রতি যে করতে পারে… এটা ভারতের মিডিয়াই শুধু পারে। অন্য কোনও দেশের মিডিয়া মনে হয় এরকম পারে না। এটার প্রতিউত্তর সত্যটা প্রকাশ করে আপনারা দেবেন। আমরা যারা এই দেশে আছি, আমরা সবাই মিলে এটার প্রতিবাদ করব।”
ভারত ইস্যুতে বাংলাদেশের উদ্বেগজনক কোনও আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “কোনও উদ্বেগজনক আশঙ্কা নেই, ওরা বাগযুদ্ধ করে যাচ্ছে।”
সত্য প্রকাশে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা এটার প্রতিবাদ করবেন এবং সত্যি ঘটনা আপনারা প্রকাশ করবেন। তখন ওদের মুখে চুনকালি পড়বে। ওরা যে মিথ্যা ঘটনা প্রকাশ করছে, জনগণ এবং বিশ্ব মিডিয়াও এটা গ্রহণ করবে না।”
‘সময় দিন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে জনতার ক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ। থানা ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-হত্যার পর পুলিশি সেবাশূন্য হয়ে পড়েছিল দেশ। পরিস্থিতি এমনও হয়েছিল যে ভয়ে কাজে আসতে পারছিলেন না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী এই বাহিনীর সদস্যরা।
গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এরপর থেকে নানামুখী প্রচেষ্টা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকে পরিস্থিতি।
এমন প্রেক্ষাপটে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মূল্যায়ন জানতে চাইলে অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “জুলাই বিপ্লবের পর এই যে একটা পরিস্থিতি… একটা দুর্যোগ বা কোনও কিছু হলে কিন্তু সময় দরকার এটা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে। ধরেন কোথাও হয়তো বন্যা হলো বা ফায়ার হলো, একটা বিল্ডিং ধস হলো– সব জায়গায় কিন্তু একটা সময় দিতে হয়। সাথে সাথে কিন্তু আগের অবস্থায় ফিরে আসে না। যেমন আগুনটা নেভানো হলে বিল্ডিংটা কি সাথে সাথে আগের অবস্থায় ফিরে আসবে? আসবে না, এর জন্য কিছুটা সময় দিতে হবে।
তিনি বলেন, “জুলাই বিপ্লবের পর যে পরিস্থিতি ছিল, সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আমাদের কিছু সময় দিতে হবে।”
এ সময় তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে জানতে চান পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো হয়েছে কিনা। জবাবে সাংবাদিকরা বলেন, ভালো হচ্ছে। তখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আপনারাই বলছেন (পরিস্থিতির) উন্নতি হচ্ছে, আস্তে আস্তে আরও উন্নতি হবে।”
‘সবাই একসাথে কাজ করব, খুবই ভালো দিক’
বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার এই উদ্যোগ ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা যখন সবাই একসাথে হব, তখন এটা নিশ্চিতভাবেই একটি ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করবে।
“কোনও সমস্যা হলে আমরা সবাই একসাথে কাজ করব। সবাই একসাথে এটার প্রতিবাদ করব। এটাতো খুবই ভালো দিক।”
‘ভারতেই শান্তিরক্ষী প্রয়োজন’
বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে সম্প্রতি ভারত সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “আমার মনে হয় তার (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) দেশেই শান্তিরক্ষী প্রয়োজন। তার দেশের কথা বলতে গিয়েই মনে হয় ভুলে বাংলাদেশের কথা বলে ফেলেছেন। তার দেশে দেখেন না সংখ্যালঘুরা কীভাবে অত্যাচারিত হচ্ছে, এজন্য তার দেশের জন্যই মনে হয় তিনি সেটা চাচ্ছেন।”
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে কি-না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সার্বভৌমত্ব কোনও ধরনের হুমকির মুখে নেই। আমরা সকলে একসাথে তাদের (ভারতের) মিডিয়ার অপপ্রচারের প্রতিবাদ করব।”