বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরে জান্তা বাহিনীর শেষ ঘাঁটি দখলে নেওয়ার সময় ‘কুখ্যাত’ সামরিক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরিন তুনকে আটক করেছে আরাকান আর্মি। তিনি রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ১৫ নং অপারেশন কমান্ডের অধিনায়ক।
তার পাশাপাশি জান্তা বাহিনী ও রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর কয়েকশো যোদ্ধাকেও আটক করা হয়।
বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করে আরাকান আর্মি বলেছে, গত ৮ ডিসেম্বর মংডুর বাইরে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৫ নম্বর ব্যাটালিয়নের শেষ ঘাঁটি দখলের মধ্য দিয়ে পুরো শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়।
অত্যন্ত সুরক্ষিত ওই ঘাঁটিতে জান্তা বাহিনীর সাতশ’র বেশি পুলিশ কর্মকর্তা ও সেনা ছিলেন। এছাড়া ছিলেন জান্তা সরকারের অনুগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ), আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সদস্যরা।
আরাকান আর্মি জানিয়েছে, জান্তা বাহিনীর অব্যাহত বিমান হামলার মধ্যে দীর্ঘ ৫৫ দিনের লড়াই শেষে গত রবিবার মিয়ানমারের পশ্চিমে কৌশলগত শহর মংডুর শেষ সেনা ঘাঁটি পুরোপুরি তাদের দখলে চলে আসে।
এই মংডুর সঙ্গে বাংলাদেশের ২৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এই শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জান্তা ও তাদের পক্ষের শক্তির সঙ্গে আরাকান আর্মির লড়াইয়ের প্রভাব বাংলাদেশের টেকনাফের বাসিন্দাদের ওপরও পড়ে।
গত প্রায় দুই মাস থেমে থেমে সীমান্তের ওপার থেকে ভেসে আসা বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্কে থাকতে হয় তাদের। কাটাতে হয় নির্ঘুম রাত। বিবদমান পক্ষের ছোড়া গুলি কখনও কখনও বাংলাদেশের সীমানার ভেতরেও এসে পড়ে।
মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর আরাকান আর্মি এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, প্রায় দুই মাসের দীর্ঘ লড়াইয়ে জান্তা বাহিনীর সাড়ে চারশ’র বেশি সদস্য নিহত হয়। জব্দ করা হয় তাদের বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরিন তুন ‘কুখ্যাত’ কেন
২০২১ সালের শুরুতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চিকে আটকের প্রতিবাদে দেশটির হাজারো মানুষ বিক্ষোভে নামে।
গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে তাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে যেসব সেনা কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন, তাদের একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরিন তুন।
তিনি মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়ে বিক্ষোভকারীদের কঠোর হাতে দমনের নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে দেশটির পুলিশ আন্দোলনকারীদের দিকে নির্বিচারে গুলি ছোড়ে। এতে হতাহত হয় অনেকে।
এছাড়া মান্দালয়ে জান্তা সরকারের বন্দিশালায় আটক জান্তাবিরোধীদের নির্যাতনের তদারকিতে সেনা কর্মকর্তা থুরিন তুন ছিলেন বলে অভিযোগ আছে।
একই সঙ্গে জান্তা সরকারের হয়ে লড়তে রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের অস্ত্রও দেন এই সেনা কর্মকর্তা। এসব কারণে মিয়ানমারের জনগণের কাছে তিনি ‘কুখ্যাত’ হিসেবে পরিচিত।