দেশের ভলান্টিয়াররা বিনাপয়সায় যেসব সেবা দিয়ে আসছে, সেসব ভালো কাজ জনগণের সামনে তুলে ধরলে অনেকেই এই সেবায় এগিয়ে আসবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ভলান্টিয়ারদের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টিয়ার ডে-২০২৪ উদযাপন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে ফায়ার সার্ভিস মাল্টিপারপাস ট্রেনিং গ্রাউন্ডে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সেখানেই এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ভলান্টিয়ারদের উদ্দেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা বলেন, “সরকারি বাহিনীর সদস্যদের পক্ষে এককভাবে বন্যা, ভূমিকম্প ইত্যাদি দুর্যোগ মোকাবিলা করা দুরূহ। এক্ষেত্রে আপনারা পেশাদার বাহিনীর সাথে কাজ করে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।
“এজন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের কোনও বিকল্প নেই। বিশেষ করে ভূমিকম্পের ন্যায় ভয়াবহ দুর্যোগ মোকাবিলায় সকল স্তরে স্বেচ্ছাসেবক এবং তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এবং প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
ভলান্টিয়াররা বিনাপয়সায় জনগণকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা তাদের এই ভালো কাজটি যদি জনগণের সামনে প্রকাশ করে দেন, তাহলে আরও অনেকেই এতে আগ্রহী হবে, জনগণের সেবায় এগিয়ে আসবে।
“বর্তমানে আমাদের ৫৫ হাজার ভলান্টিয়ার রয়েছে, আপনাদের লেখনির মাধ্যমে আমরা যেন খুব শিগগিরই এই সংখ্যা ৬২ হাজারে উন্নীত করতে পারি। আমরা প্রতিবছরই ভলান্টিয়ারের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।”
উপদেষ্টা বলেন, “দেশের যেকোনো বড় দুর্ঘটনা-দুর্যাগে ভলান্টিয়াররা এগিয়ে আসে। এজন্য তারা সবসময়ই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। যারা এই মহৎ কাজগুলো করছে তারা আমাদেরই ছেলে-মেয়ে। এজন্য আপনারা সবাই তাদের আরও উৎসাহিত করবেন।”
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল।
তিনি ভলান্টিয়ারদের অবদান স্মরণ করে বলেন, “২০১৩ সালে রানা প্লাজা ভবন ধস, ২০১৯ সালে চুড়িহাট্টা কেমিক্যাল দুর্ঘটনা, এফআর টাওয়ার অগ্নি দুর্ঘটনা, ২০২২ সালে বিএম কন্টেইনার ডিপোর অগ্নিদুর্ঘটনা এবং ২০২৩ সালে বঙ্গবাজার ও খাজা টাওয়ার অগ্নিদুর্ঘটনায় আপনাদের সাহসী অংশগ্রহণ আমরা দেখেছি।
“আপনাদের স্বেচ্ছাসেবী মনোভাব ও নির্ভয় অংশগ্রহণ দেশ ও জাতির দুর্যোগকালীন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ জন্য আমি আপনাদের সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।”
অনুষ্ঠান শেষে ভলান্টিয়ার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বর্ণিল শোভাযাত্রায় অংশ নেন উপদেষ্ট। শোভাযাত্রাটি পূর্বাচল ট্রেনিং গ্রাউন্ড থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন স্থান ঘুরে পুনরায় ট্রেনিং গ্রাউন্ডে এসে শেষ হয়।
এরপর অনুষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপণ ও অপারেশনাল কার্যক্রমে সহযোগিতার স্বীকৃতি হিসাবে ২২ জন ভলান্টিয়ারের হাতে স্বীকৃতি সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল।
সবশেষে ভলান্টিয়ারদের অংশগ্রহণে সাজ-সরঞ্জামের বাস্তব ব্যবহার ভিত্তিক অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার বিষয়ে প্রশিক্ষণ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে সকাল ৭টায় বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভলান্টিয়ারদের রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়।