কক্সবাজারের জেলা পুলিশের উদ্যোগে চালু করা হয়েছে ‘অনলাইন বাস টার্মিনাল’। মূলত সড়কে শৃঙ্খলা আর নিরাপত্তা বাড়াতেই এই উদ্যোগ। জেলা পুলিশের ভাষ্য, এমন উদ্যোগ দেশে প্রথম।
এটি মূলত একটি ওয়েবসাইট, যেটি ব্যবহার করে করে টিকেট বুকিং থেকে শুরু করে বাসের পার্কিং সবই নির্ধারণ করা যাবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী জানালেন, ডিসেম্বরজুড়ে কক্সবাজারের পর্যটকের ভীড় ছিল অনেক বেশি। সেই সময় অনলাইন বাস টার্মিনালে আবেদনের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, ট্রাভেল গ্রুপ, করপোরেট গ্রুপের রিজার্ভ বাস নিয়ে আসা পর্যটকরা বিশেষ সুবিধা নিয়েছেন। ডিসেম্বরে এই অনলাইন সিস্টেমে আবেদন পড়েছিল তিন হাজারের বেশি, যার মধ্যে গৃহিত হয় প্রায় ২ হাজার।
অনলাইনে অনুমতি নেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত রয়েছে। যার মধ্যে একটি হলো বাসগুলোকে যাত্রী নামানোর সঙ্গে সঙ্গে নির্ধারিত পার্কিংয়ে এ চলে যেতে হবে। এছাড়া হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস জোনে বাস পার্কিং করা যাবে না।
অনলাইন আবেদন ফর্মে আবেদনকারীকে পার্কিংয়ের স্থান নির্ধারণ করে দিতে হয়। আবেদন অনুমোদিত হলে নির্দিষ্ট মোবাইল ফোনে নোটিফিকেশন চলে যায়। সেখানে লেখা থাকে আবেদনের নম্বর ও পার্কিংয়ের স্থান।
যদি কোনও বাসের রেজিস্ট্রেশন নম্বর অসম্পূর্ণ বা ভুল থাকে, কিংবা ভুল পার্কিং সিলেক্ট করে তাহলে অনুমতি মেলে না।
বিশেষ এই সাইটের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বেড়েছে বলে জানিয়ে মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনার জন্য প্রধাণত সড়ক ও যানবাহনের ত্রুটি এবং চালকের গাফলতি দায়ী। এই তিনটি প্রধান কারণের মধ্যে চালকের দায় সবচেয়ে বেশি। অনলাইন বাস টার্মিনাল সিস্টেমে রয়েছে যানবাহনের মালিক ও চালকদের তদারকি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কার্যকর ব্যবস্থা।”
এই ডাটাবেসে কক্সবাজারে জেলায় চলাচলরত লোকাল ও আন্তঃজেলা ১২০টি বাস পরিবহনের প্রায় ১৪০০টি বাসের ফিটনেস ও রুট পারমিটের হালনাগাদ তথ্যসহ বিস্তারিত তথ্য, সব চালক ও গাইডের ছবি ও ঠিকানাসহ বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। বাস শিডিউলে বাসের রেজিস্ট্রেশন নাম্বারসহ সংশ্লিষ্ট বাসের চালক ও গাইডের তথ্য প্রদান নিশ্চিতের ব্যবস্থা রয়েছে।
যাত্রীরা বাসে বসেই পরিবহনের সার্ভিস ও চালকের আচরণ, দক্ষতা ও পেশাদারত্ব নিয়ে রেটিং, রিভিউ ও মন্তব্য করতে পারবে। পাশাপাশি জানাতে পারবে অভিযোগঅ যার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবে ট্রাফিক বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট পরিবহন কর্তৃপক্ষ।
যাত্রীর দেওয়া রেটিং ও রিভিউয়ের উপর ভিত্তি করে ওই পরিবহনের সামগ্রিক রেটিং নির্ধারণ করার ব্যবস্থাও রয়েছে অনলাইন বাস টার্মিনালে।
এরই মধ্যে চালকের ফোনে কথা বলা, অতিরিক্ত দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আর অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই গাড়িতে থাকা চালক বা সহকারির সঙ্গে ট্রাফিক বা বাস মালিকদের পক্ষে যোগাযোগ করে সর্তক করা হয়েছে।
www.obtcoxsbazar.com এই ঠিকানা পরিচালনায় নেওয়া হচ্ছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, “অনলাইন বাস টার্মিনাল নামের এই ওয়েব ঠিকানা ব্যবহার করে পর্যটকসহ যে কোনো যাত্রী দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে নিজের পছন্দ মতো বাস, টিকেট সংগ্রহ করে নির্বিঘ্নে যাতায়ত করতে পারবেন। পাশাপাশি বাসের ফিটনেসসহ চালকদের তদারকি এবং মালিকদের জবাবদিহি নিশ্চিত ও মাঝ পথে কোনো যাত্রী হয়রানির শিকার হলে প্রযুক্তির মাধ্যমে ওই বাস ও ড্রাইভার সাথে সাথে শনাক্ত করা যাবে।
“মূলত জেলার পরিবহন খাত ও ট্রাফিক বিভাগে শৃংখলা ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশের এ উদ্যোগ।”
যাত্রীরা যা বলছেন
ঢাকার মিরপুর থেকে আসা পর্যটক দম্পতি রাশেদুল ইসলাম জানান, “ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে দেখতে পাই কখন, কয়টায় বাস আছে। সেইসঙ্গে টিকেটের দাম ও কতটি সিট খালি আছে সেটাও দেখতে পাই। কাউন্টার ঠিকানাও দেওয়া ছিল। ফলে টিকেট নিতে সুবিধা হয়েছে। এই উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। কারণ আগে আমাদের ভোগান্তি হতো। অনেকদূর হেঁটে গিয়ে টিকিট করতে হতো।”
কুমিল্লার কান্দিরপাড় থেকে আসা পর্যটক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “যাত্রীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করার জন্য জেলা পুলিশকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনলাইন বাস টার্মিনাল সেবা চালু করা হাজার হাজার পর্যটক যাত্রী ভোগান্তি থেকে রেহাই পেয়েছে। আমার পরিবারের সবাই এখন থেকে ওই ওয়েবসাইট থেকে টিকিট কেটে যাতায়াত করব।”
বাস রিজার্ভ নিয়ে আসা ঢাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক রফিকুল আনোয়ার জানান, ৪০ জনের গ্রুপ নিয়ে যে আবাসিক হোটেলে কক্ষ ভাড়া নিয়েছিলেন সেটিতে পার্কিং ছিল না। পরে অনলাইনে আবেদন করে পার্কিং সুবিধা পেয়েছিলেন বিনামূল্যে। কোনও জটিলতা হয়নি।