পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহিদ ও ছেলে চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান সরাফাতের ১৮টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে। ফ্ল্যাটগুলোর অবস্থান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে।
মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন।
ফ্ল্যাট বাদে নাফিজ সরাফাত ও আঞ্জুমান আরা শহিদের নামে থাকা জমিসহ বাড়ি এবং প্লটও ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, ক্রোক করা সম্পদের মধ্যে নাফিজ সরাফাতের নামে গুলশানের ২০ তলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি, গুলশানের একটি, ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট বাজারের চারটি, নিকুঞ্জ উত্তর আবাসিক এলাকায় একটি ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাটের ৫০ শতাংশ, নিকুঞ্জের দুইটি প্লট, বাড্ডার কাঠালদিয়ার আড়াই কাটা, গাজীপুরের কালিয়াকৈরের দুই ১০ কাঠা করে ২০ কাঠা, গাজীপুর সদরে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ জমি, নিকুঞ্জরের জোয়ার সাহারায় ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ জমি, নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জের রাজউক পূর্বাচল প্লটে সাড়ে ৭ কাঠা জমি রয়েছে।
আঞ্জুমান আরা শহিদের নামে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সাড়ে সাত কাঠা জমির ওপর চারতলা বাড়িসহ জমি, পান্থপথে একটি, গুলশান লিংক রোডে একটি, মিরপুর ডিওএইচএস এ একটি, শাহজাদপুরে একটি ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি ফ্ল্যাটের ৫০ শতাংশ, নিকুঞ্জে তিন কাঠা জমি, বাড্ডার কাঠালদিয়া আড়াই কাঠা নাল জমি ও গাজীপুর সদরে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ চালা জমি রয়েছে।
রাহিব সাফওয়ান সারাফাতের নামে বনানীতে থাকা তিনটি ও বারিধারায় থাকা চারটি ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ দিয়েছে আদালত।
দুদকের অনুসন্ধান টিমের প্রধান কমিশনের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান এসব স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, নাফিজ সরাফাত ও অন্যদের বিরুদ্ধে ঘুস, দুর্নীতি, জালিয়াতি, ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা ও নিজেরা যোগসাজশ করে প্রায় ৮৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগের ওপর অনুসন্ধান চলছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায়, চৌধুরী নাফিজ সরাফত, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহিদ এবং তাদের ছেলে চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান সারাফতের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে এবং তারা পলাতক।
প্রাথমিকভাবে পাওয়া এসব স্থাবর সম্পত্তি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে সম্পৃক্ত অপরাধ তথা দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত/বৈধ আয় বহির্ভূতভাবে অর্জন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টদের নামে সম্পদ অর্জনের বিষয়টি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও (৩) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান শুরুর পর থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা স্থাবর সম্পত্তি অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর, বন্ধক বা বেহাত করার জন্য বিভিন্ন চেষ্টা করছেন বলে জানা যায়। তাই সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এসব স্থাবর সম্পত্তি অবিলম্বে ক্রোক করা প্রয়োজন বলেও দুদক মনে করে।
গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর নাফিজ সরাফাতকে প্রকাশ্যে আসতে দেখা যায়নি।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর নাফিজ শরাফতের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আদালত।
তার বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার বর্ণিত পদের অপব্যবহার করে ও রাজনৈতিক পরিচয়ের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও কানাডাতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন বলেও পেয়েছে দুদক।