বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানসহ তার পরিবারের ৮ সদস্যের বিদেশে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে আদালত।
গত ২১ নভেম্বর ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন এ আদেশ দিলেও বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে মঙ্গলবার।
এদিন এ তথ্য নিশ্চিত করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, “গত ২০ নভেম্বর আহমেদ আকবর সোবহানসহ তার পরিবারের ৮ সদস্যের বিদেশের সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক মো. নাজমুল হুসাইন।
“বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট দেশের সংস্থাকে আদালতের আদেশ দেখাতে হয়। তাই ঢাকার আদালতে এ আবেদন করা হয়, যা সংশ্লিষ্ট দেশকে দেখিয়ে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব।
আদালত আদেশে আহমেদ আকবর সোবহানসহ তার পরিবারের ৮ সদস্যের সম্পদ জব্দের আদেশের অনুলিপি সংশ্লিষ্ট দেশ সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্লোভাকিয়া, সাইপ্রাস, ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশ সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস এবং ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসের সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে পাঠাতে নির্দেশ দেয় বলে জানান দুদকের পিপি মীর আহমেদ আলী সালাম।
আদালত আদেশটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুদক ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) পাঠাতে বলেছে বলেও জানান তিনি।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ছাড়া এই আদেশের আওতায় আছেন তার স্ত্রী আফরোজা বেগম, তাদের তিন ছেলে সায়েম সোবহান আনভীর, সাফিয়াত সোবহান ও সাফওয়ান সোবহান এবং তিন পুত্রবধূ সাবরিনা সোবহান, সোনিয়া ফেরদৌসী সোবহান ও ইয়াশা সোবহান।
বিদেশে তাদের সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আবেদনে দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, অনুসন্ধানে জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাদের মালিকানাধীন কোম্পানির নামে বিপুল পরিমাণ ব্যাংকঋণ নিয়েছেন। সেই ঋণের একাংশ বিদেশে পাচার করে সেখানে সম্পত্তি কেনা হয়েছে এবং বিনিয়োগ করা হয়েছে।
বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর ৩০ লাখ ইউরো (বর্তমান মূল্য প্রায় ৩৮ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করে স্লোভাকিয়ার নাগরিকত্ব নেন। তার স্ত্রী ২০ লাখ ইউরো (২৫ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করে নাগরিকত্ব নেন সাইপ্রাসের।
আহমেদ আকবর সোবহান ও তার স্ত্রী আফরোজা বেগম আড়াই লাখ মার্কিন ডলার (প্রায় তিন কোটি টাকা) বিনিয়োগ করে নাগরিকত্ব নেন সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে।
দুদকের আবেদনে আরও বলা হয়, আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারের ৮ সদস্য বিভিন্ন দেশের ১৯টি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। সাফওয়ান সোবহান ও তার স্ত্রী সোনিয়া ফেরদৌসী সোবহান সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাবিব ব্যাংক ও সাইপ্রাসে ব্যাংকে হিসাব খুলে অবৈধ অর্থ লেনদেন করেন।
গত ২১ অক্টোবর আহমেদ আকবর সোবহানসহ তার পরিবারের আট সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। এরপর ৬ অক্টোবর দেশে তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়।