ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ‘ফ্যাসিবাদী’ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বললেন দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের মামলায় দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার আদালতে হাজিরা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার জ্বালানি উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকা মাহমুদুর বলেন, “শেখ হাসিনার বিদায় হয়েছে। তবে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে দেশের যে লড়াই, সম্পাদক হিসাবে আমার যে লড়াই, তা অব্যাহত থাকবে।”
আওয়ামী লীগ আমলে করা এই মামলায় ২০২৩ সালে দেওয়া বিচারিক আদালতের রায়ে সাত বছর কারাদণ্ড হয়েছিল মাহমুদুরের। তার সঙ্গে সাজা হয়েছিল সম্পাদক শফিক রেহমানসহ আরও চারজনের।
মাহমুদুর ও শফিক রেহমান বিদেশে থাকার মধ্যেই ওই রায় হয়। গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দুজনই দেশে ফেরেন।
মাহমুদুর বলেন, “যখন মামলা করা হয়, তখন আমি বন্দি। মামলার সঙ্গে আমার কোনোরকম সংশ্লিষ্টতা নেই। এই মামলা করার সময় আমি পত্রিকা অফিসে বন্দি ছিলাম। পুরো অফিস পুলিশ, র্যাব ঘিরে রেখেছিল। এতে প্রমাণিত হয়, মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করতে একটা রাষ্ট্র কতটা নির্মম হতে পারে।
“এই মামলাটি হয়েছিল শেখ হাসিনার পুত্রকে নিয়ে, এমন শতাধিক মামলা আছে আমার বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপকে নিয়ে ৩৬টি মামলা রয়েছে।”
যুক্তরাষ্ট্রে জয়কে হত্যার ষড়যন্ত্রের এই মামলায় সাজার বিরুদ্ধে মাহমুদুরের আপিল শুনানি হয় ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শেখ তারেক এজাজের আদালতে। বিচারক আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি আপিলের রায় দেবেন।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন মাহমুদুর।
তার আইনজীবী তানভীর আহমেদ আল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, “এ মামলায় কোনও সাক্ষ্য প্রমাণ প্রসিকিউশন দেখাতে পারেনি। সাক্ষ্য প্রমাণ বাদেই বিচারক ৭ বছরের কারাদণ্ডের রায় দেন। কোন চাপে পড়ে বিচারক এ রায় দিয়েছেন তার উত্তর দিতে হবে।
“সাক্ষ্যের দিন বিচারক সাক্ষী জয়কে গাড়ি করে পৌঁছে দিয়েছেন। এতে বুঝতে বাকি থাকে না, এটা পক্ষপাতমূলক মামলা।”
আওয়ামী লীগের শাসনামলকে ফ্যাসিবাদী আখ্যায়িত করে মাহমুদুর বলেন, “আমরা যদি প্রথম দিন থেকে প্রতিবাদ করতাম, তাহলে ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী সরকারের হাতে এত জুলুম, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হতো না। এভাবে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিল্লির কাছে বিসর্জন দেওয়া হতো না। জনগণের কাছে আমার আহ্বান, আর কোনও ফ্যাসিবাদী সরকারকে দেশে জায়গায দেবেন না। সকল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই যেন অব্যাহত থাকে।”
শেখ হাসিনার শাসনকালে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পাশাপাশি কুষ্টিয়ায় এক মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার কথাও বলেন মাহমুদুর।
তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে জয়কে হত্যার ষড়যন্দ্রের মামলাটি হয় ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট। মামলাটি করেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় একত্রিত হয়ে জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন।
২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মাহমুদুর, শফিক রেহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা পড়ে। সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১২ জনের সাক্ষ্য নিয়ে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট রায় দেন ঢাকার তৎকালীন অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর।
রায়ে পাঁচ আসামিকিই দুই ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডিত অন্য আসামিরা হলেন- জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ, তার ছেলে রিজভী আহমেদ সিজার ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মিজানুর রহমান ভুঁইয়া।
ছয় বছর বিদেশে কাটানোর পর গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরেন মাহমুদুর। ঢাকার আদালতে আত্মসমর্পণ করে দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করার শর্তে তিনি জামিন চেয়েছিলেন। সেদিন জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন বিচারক। পাঁচ দিন কারাবাসের পর ওই বছরের ৩ অক্টোবর তিনি মুক্তি পান। এরপর গত ১২ ডিসেম্বর সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেন মাহমুদুর।