শেষ পর্যন্ত ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে ব্লকবাস্টার পাকিস্তানি সিনেমা ‘দ্য লেজেন্ড অব মাওলা জাট’- এর প্রদর্শন আটকে দিয়েছে দিল্লি।
১৯৭৯ সালের পাঞ্জাবি সিনেমার রিমেইক এই পাকিস্তানি সিনেমাটি ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ পাঞ্জাবের হলে বুধবারই মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল।
বুধবার ভারতে এই সিনেমা পরিবেশক জি স্টুডিওসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার বরাতে বিবিসি এ খবর নিশ্চিত করেছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, পাকিস্তানি এই সুপার হিট সিনেমাটি প্রদর্শন না করার জন্য সরাসরি দিল্লির তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ এসেছে। তবে নির্দেশনা নিষেধাজ্ঞার কোনও কারণ উল্লেখ করা হয়নি।
‘দ্য লেজেন্ড অব মাওলা জাট’ সিনেমাটি ছাড় পেলে এক যুগের মধ্যে প্রথম পাকিস্তানি সিনেমা হিসেবে সেটি ভারতের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হতো।
আয়ের দিক থেকে পাকিস্তানি সিনে জগতে সর্বকালের রেকর্ড ভাঙা ‘দ্য লেজেন্ড অব মাওলা জাট’ দেশটির প্রেক্ষাগৃহে ২০২২ সালে মুক্তি পায়।
পাকিস্তানের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির দুই মহাতারকা ফাওয়াদ খান এবং মাহিরা খান অভিনীত চলচ্চিত্রটি কাহিনী আবর্তিত হয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক যুবকের সঙ্গে শত্রুপ্রতিম এক গোত্র নেতার দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিয়ে।
পাকিস্তানে মুক্তির বছরই সিনেমাটির ভারতের প্রেক্ষাগৃহেও চলার কথা ছিল। কিন্তু তখনও ভারত এটি প্রদর্শনে অজ্ঞাত কারণে নিষেধাজ্ঞা দেয়। গত মাসে সিনেমাটির নির্মাতা বিলাল লাসাহারি বলেছিলেন, শিগগিরই এটি ভারতে মুক্তি পাবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে লিখেন, “দুই বছর হলো, তারপরও পাকিস্তানে এখনও সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় এ সিনেমাটি প্রদর্শনের সময় হলগুলো কানায় কানায় পূর্ণ থাকে! আর তাই আমি আমাদের ভারতে থাকা পাঞ্জাবি দর্শকদের এ সিনেমার পেছনে ভালোবাসাপূর্ণ পরিশ্রমের ম্যাজিক দেখানোর তর সইতে পারছি না।”
যদিও এ সিনেমা মুক্তির খবরে পশ্চিমাঞ্চলীয় মহারাষ্ট্র প্রদেশে বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানকার স্থানীয় রাজনৈতিক দল মহারাষ্ট্র নাভিরমান সেনা ‘কোনও অবস্থাতেই’ এ সিনেমার মুক্তি দেওয়া চলবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল।
ভারতের সবচেয়ে বড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির শহর মুম্বাই, এ প্রদেশেই অবস্থিত।
প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক সম্পর্কে তিক্ততা থাকলেও, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-সিনেমার আদান-প্রদানের সম্পর্ক দুই দেশের মধ্যে ভালোই ছিল।
কাঁটাতারের বেড়া ও রাজনৈতিক বৈরিতাকে উপেক্ষা করেই ভারত ও পাকিস্তানে তৈরি সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজ দুই দেশের মানুষকেই বিনোদন দিয়ে এসেছে। ভারতের বলিউড এবং বিশেষ করে পাঞ্জাবি মুভি পাকিস্তানে খুবই জনপ্রিয়। এর বিপরীতে পাকিস্তানের ওয়েব সিরিজগুলো ভারতের দর্শকদের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে।
দুই দেশের শিল্পীদেরই সিনেমা ও সংগীতে একে অপরের সঙ্গে যৌথ ও বন্ধুত্বপূর্ণভাবে কাজ করার ধারাবাহিকতাও ছিল।
কিন্তু ২০১৬ সালে সামরিক সংঘাতকে কেন্দ্র বলিউডে পাকিস্তানি অভিনেতাদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে একই কারণে পাকিস্তানও বলিউড সিনেমার সেই দেশে প্রদর্শন নিষিদ্ধ করে।
গত কয়েক মাসে ভারতের তৈরি কিছু পাঞ্জাবি মুভি পাকিস্তানের প্রেক্ষাগৃহে অবশ্য চলেছে।
২০২৩ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পাকিস্তানি পারফর্মারদের সেই দেশের নিষিদ্ধ করে দেয়ার বিষয়ে এক পিটিশন খারিজ করে বলেছিল, ‘এত সঙ্কীর্ণ চিন্তার উর্ধ্বে আসতে’।
ভারতীয় আদালতের ওই রায়কে বরফ গলার ইঙ্গিত হিসেবে নিয়েছিল মাওলা জাট সিনেমার নির্মাতা ও প্রযোজকরা। তারা আশা করেছিল, সিনেমাটি ভারতে প্রদর্শিত হলে সেখানেও দর্শকের মন জয় করবে।
মাওলা জাট সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ভারতের দর্শকদের কাছেও পাকিস্তানি নাটক ও ওয়েব সিরিজের কারণে বিপুল জনপ্রিয়। তাদের অনেকেই এর আগে বড় বাজেটের বলিউড সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন।