ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের করা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর তা নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিলেন চিত্রনায়িকা পরীমনি।
মারধর, হত্যাচেষ্টা, ভাংচুর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগের এই মামলায় রবিবার অভিযোগ গঠন করে পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল ঢাকার আদালত।
তা নিয়ে সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দেয়। আগের দিন টাঙ্গাইলে একটি অনুষ্ঠানে যেতে পরীমনিকে ধর্মীয় গোষ্ঠী বাধা দেওয়ার পর এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার যোগসূত্রও অনেকে খুঁজতে থাকেন।
এই প্রেক্ষাপটে সোমবার ঢাকার আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন পরীমনি। শুনানি শেষে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জুনাইদ এই চিত্রনায়িকাকে জামিন দেন। পরীমনির পক্ষে আইনজীবী ছিলেন নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী।
রবিবার অভিযোগ গঠনের সময় মামলার আসামি পরীমনি ও তার কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ বোগদাদী জিমি আদালতে অনুপস্থিত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছিলেন একই বিচারক।
পরে পরীমনি জানান, অসুস্থতার কারণে তিনি আদালতে যেতে পারেননি।
এই নাসিরের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা করেছিলেন পরীমনি। তখন নাসিরও পাল্টা এই মামলাটি করেন তাকে হুমকি দেওয়া এবং বোট ক্লাবে ভাংচুরের অভিযোগ তুলে।
২০২১ সালের ১৩ জুন আকস্মিক এক সংবাদ সম্মেলনে রীতিমতো বোমা ফাটানো সংবাদ দিয়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন এই চিত্রনায়িকা। তিনি অভিযোগ করেন, তার পাঁচ দিন আগে ৮ জুন তুরাগ নদীর তীরের ঢাকা বোট ক্লাবে গিয়ে ধর্ষণচেষ্টার শিকার হন তিনি।
তার অভিযোগ ছিল, বোট ক্লাবের তখনকার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যবসায়ী নাসিরের বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনি বোট ক্লাবের সভাপতি।
পরদিন পরীমনি মামলা করলে নাসিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে নাসির জামিনে বেরিয়ে আসার পর ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করে দুই বছর বাদে পাল্টা মামলা করেন পরীমনির বিরুদ্ধে।
এর মধ্যে ওই বছরের ৪ আগস্ট ঢাকার বনানীর ১২ নম্বর সড়কে পরীমনির বাসায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, আইস ও এলএসডি উদ্ধারের কথা জানায় র্যাব।
সেদিন মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় পরীমনিকে। দুই দফায় রিমান্ডে নিয়েও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক মাস পর জামিনে মুক্তি পান তিনি।
পরীমনির মামলায় নাসিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি এখনও চলছে।
এদিকে নাসিরের মামলায় গত বছরের ১৮ মার্চ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা জেলার পরিদর্শক মো. মনির হোসেন তদন্ত করে ঢাকা জেলা আদালতে প্রতিবেদন দেন। পরীমণি ও জিমির বিরুদ্ধে মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
পরে আদালত দুই আসামিকে হাজির হতে সমন জারি করলে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন তারা। তবে রবিবার অভিযোগ গঠনের দিন অনুপস্থিত থাকার কারণে জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
এই মামলায় দোষি সাব্যস্ত হলে এই চিত্রনায়িকার সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
এদিকে হেফাজতে ইসলাম ও খেলাফতে মজলিশের বিরোধিতার মুখে টাঙ্গাইলে হারল্যানের শাখা উদ্বোধনে যেতে না পারার পর শনিবার পরীমনি ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন ফেইসবুকে।
তিনি লিখেছিলেন, “এত চুপ করে থাকা যায় নাকি! পরাধীন মনে হচ্ছে। শিল্পীদের এত বাধা কেন আসবে? ইনসিকিউরড ফিল হচ্ছে! এমন স্বাধীন দেশে নিরাপদ নই কেন আমরা!!”
তার ক্ষোভ প্রকাশের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকে।
নড়াইলের মেয়ে শামসুন্নাহার স্মৃতি এক দশক আগে পরীমনি নাম নিয়ে আসেন ঢাকাই চলচ্চিত্রে। মুক্তির আগেই দুই ডজনের বেশি চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হয়ে রীতিমতো শোর ফেলে দিয়েছিলেন তিনি।