কারও হাতে উড়ছে জাতীয় পতাকা, কেউবা বেঁধেছেন মাথায়। আবার কেউ নিজের গালে-কপালে এঁকে নিয়েছেন পতাকার ছবি। কারও আবার পুরো পোশাকেই লাল-সবুজ রঙ। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ঢাকার বিনোদন কেন্দ্রগুলোর চিত্র ছিল এমন।
সোমবার বিজয়ের ৫৩ বছর উদযাপন করছে দেশ। এদিন দিনভর এমনই দৃশ্য চোখে পড়ে ঢাকার আনাচে-কানাচে।
পথে নামলেই দেখা যায়, অনেকেই গাড়ি-বাড়িতে টানিয়েছেন জাতীয় পতাকা। বাদ যায়নি রিকশা-সিএনজি কিংবা মোটরসাইকেলও।
বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার সরকারি ছুটি থাকলেও সড়কে যানবাহনের চাপ দেখে তা বোঝার উপায় নেই। পরিবার-প্রিয়জন নিয়ে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষের ভিড়ে ক্ষণে ক্ষণেই যানজট তৈরি হচ্ছে সড়কে। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে।
আট বছরের মেয়ে ইসরাত জাহানকে নিয়ে সংসদ ভবনের সামনে বেড়াতে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী ইমরান হোসেন চৌধুরী। বাবা-মেয়ে দুজনেই মাথায় বেঁধেছিলেন জাতীয় পতাকা।
সকাল সন্ধ্যাকে ইমরান বলেন, “মানিক মিয়া এভিনিউয়ে বিকালে বিজয় কনসার্ট হবে। কনসার্ট সবার জন্য উন্মুক্ত। সেখানে অংশ নিতেই মেয়েকে নিয়ে এলাম। একসঙ্গে এত মানুষের বিজয় উদযাপন দেখে আনন্দ আরও বেড়ে গেছে।”
এর আগের কোনও বিজয় দিবসে এত মানুষের এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখেননি অনেকে। ইমরান বলেন, “এর আগের কোনও বিজয় দিবসে এত মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখিনি। আগে তো বিজয়ের বেশিরভাগ অনুষ্ঠানই ছিল নানা বেড়াজালে বন্দি। ভিআইপি যানবাহনের চাপে সড়কেও ঠিকমতো চলাচল করা যেত না।”
সংসদ ভবনের পাশে চন্দ্রিমা উদ্যানেও এদিন বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি নজরে পড়বে যে কারোর। রায়েরবাজার থেকে স্ত্রী ও ২ সন্তানকে নিয়ে সেখানে এসেছেন ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “কাজের চাপে পরিবারকে তেমন সময় দিতে পারি না, একটু সুযোগ পেয়ে নিয়ে এলাম। ভেবেছিলাম একটু ঘুরেফিরে বাসায় ফিরব। কিন্তু এখানে আসার পর আনন্দমুখর পরিবেশ দেখে ভালো লাগছে। তাই আরও কিছুক্ষণ থাকব।”
মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানার সামনেও সোমবার দেখা যায় উপচেপড়া ভিড়। দর্শনার্থীর চাপে প্রবেশপথে দীর্ঘ লাইন। ভেতরে প্রতিটি পশু-পাখির খাঁচার সামনেও অনেক মানুষের ভিড়।
ছুটির দিনে দুই সন্তানকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছিলেন গৃহবধু ফারজানা ইয়াসমিন। তিনি জানালেন, গত ঈদের ছুটিতে চিড়িয়াখানায় এসে ভিড়ের কারণে ফিরে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলেন বিজয় দিবসে কিছুটা ফাঁকা পাবেন। কিন্তু আজও অনেক মানুষ।
তারপরও খারাপ লাগছে না এই নারীর। তিনি বলেন, “একসঙ্গে সবার বিজয় উৎসব দেখে ছেলেরা আনন্দ পাচ্ছে। সবাইকে দেখে ছেলে বায়না ধরেছে তাকে জাতীয় পতাকা কিনে দিতে হবে। এভাবেইতো শিশুর মধ্যে দেশপ্রেম তৈরি হবে। তারা আরও আগ্রহী হবে দেশের ইতিহাস জানতে।”