ঢাকার হাজারীবাগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত বৃটিশ নাগরিক ডা. এ কে এম আব্দুর রশিদকে তার বাড়ির ভাড়াটিয়ারাই হত্যা করেছে বলে দাবি পুলিশের।
এই হত্যার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানানোর পাশাপাশি কারণও উদঘাটনের দাবি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি)। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বাড়িভাড়া নিয়ে দ্বন্দ্বের কথা।
শনিবার ডিএমপিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম জানান, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ, ঘটনার আগে ওই বাসায় বিভিন্ন সময়ে মেস করে বসবাস করা ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার তিন ব্যক্তি হলেন, মো. নাইম খান (২২), মো. জাহিদুর রহমান রিফাত (২০) ও মো. আবু তাহের শিকদার ওরফে শাওন (২২)। এদের মধ্যে থেকে নাইম খানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি ছুরি বা চাকুও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গত ১৫ নভেম্বর হাজারীবাগ থানার পশ্চিম ধানমণ্ডির ৮/এ নম্বর রোডের ২৯৪/১ নম্বর বাসার দ্বিতীয় তলায় রাত আড়াইটার দিকে নিহত হন ডা. এ কে এম আব্দুর রশিদ। বছরের বেশিরভাগ সময় তিনি যুক্তরাজ্যেই থাকতেন, মাঝেমধ্যে বাংলাদেশে আসতেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে হাজারীবাগ থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুস্কৃতকারীরা বাসায় প্রবেশের পর ডা. এ কে এম আব্দুর রশিদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। শব্দ শুনে তার স্ত্রী সুফিয়া রশিদ পাশের কক্ষ থেকে এগিয়ে আসার চেষ্টা করলে একজন দুস্কৃতকারী তার মুখ চেপে ধরে। একপর্যায়ে দুস্কৃতকারীরা ধারালো চাকু দিয়ে ডা. এ কে এম আব্দুর রশিদের বুকে একাধিকবার আঘাত করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। এসময় তার স্ত্রীর চিৎকারে দুস্কৃতকারীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়।
পরে গুরুতর আহত ডা. আব্দুর রশিদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় তার চাচাতো ভাই মো. রেজাউল করিম বাদী হয়ে মামলা করেন।
শুক্রবার আলাদা অভিযান চালিয়ে খুলনার ডুমুরিয়া ও ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে এই হত্যায় জড়িত অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে ডিসি মো. মাসুদ আলম আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “গ্রেপ্তার নাইম খান ও জাহিদুর ভিকটিমের বাসার একটি ফ্ল্যাট মেস হিসেবে ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। বকেয়া ভাড়া নিয়ে ভিকটিমের স্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন সময় তাদের মনোমালিন্য হতো। এতে তারা ভিকটিম ও তার স্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হন। নাইম খান ও জাহিদুর রহমান রিফাত বাড়ির মালিকের বাসায় প্রবেশ করে টাকা পয়সা লুট করে সেই টাকায় রেস্টুরেন্ট ব্যবসার পরিকল্পনা করেন।
“পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১৫ নভেম্বর গভীর রাতে আবু তাহের শিকদার ওরফে শাওনকে সঙ্গে নিয়ে ভিকটিমের বাসার সীমানা প্রাচীর টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন। এসময় ভিকটিম ডা. আব্দুর রশিদ তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য উঠলে তাদের উপস্থিতি টের পান। ডা. আব্দুর রশিদ তাদের বাধা দিতে গেলে তার সঙ্গে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে ধারালো চাকুর আঘাতে গুরুতর আঘাত পেয়ে তিনি নিহত হন।”