Beta
রবিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
রবিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৫

নতুন পাঠ্যবইয়ে পুলিশের চিত্রায়ন কোন চোখে দেখছে পুলিশ

পুলিশ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোতায়েন পুলিশ। ফাইল ছবি : হারুন অর রশীদ
[publishpress_authors_box]

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় পুলিশ হয়ে উঠেছিল আতঙ্ক; তাই ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জনরোষে পুড়তে থাকে একের পর এক থানা। নিহত হন অনেকে, পালিয়ে বাঁচেন এই বাহিনীর সদস্যরা। ভয়ে কয়েকদিন দায়িত্ব পালন করতেও নামেননি পুলিশ সদস্যরা।

অভ্যুত্থান পরবর্তীকালে সেই ভূমিকার জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন এই বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর আইজিপির দায়িত্ব পাওয়া শেখ বাহারুল ইসলাম সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, পুলিশ ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের লাঠিয়াল’ হয়ে উঠেছিল। এখন জনগণের কাছে পুলিশকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা হবে। পুলিশের ওয়েবসাইটে গেলে এখন স্লোগান ঝুলতে দেখা যায়- ‘বৈষম্যমুক্ত সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পুলিশ আছে জনগণের পাশে’।

জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে, সেই অনেক কিছুর সঙ্গে বদলেছে পাঠ্যবইও, শিক্ষার্থীদের জানার জন্য অভ্যুত্থানের অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। তবে সেখানে পুলিশকে যেভাবে চিত্রিত করা হয়েছে, তা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন এই বাহিনীর সদস্যরা।

তারা বলছেন, যে ভাষায় লেখা হয়েছে, তাতে পুলিশকে ‘ভিলেন’ ভেবে বড় হবে শিশুরা। তাদের মানসে পুলিশ সম্পর্কে যে ধারণা জন্ম নেবে, তাতে পুলিশকে বন্ধু ভাবাটা এই শিশুদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এভাবে পুলিশকে চিত্রায়ন এই বাহিনীকে নিয়ে শিশুদের মনে বিরূপ ধারণা জন্মাবে।

কী আছে বইয়ে

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবই সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। ২০২৫ সালের পাঠ্যবইয়ের অনলাইন সংস্করণ বুধবার প্রকাশিত হয়। সব বই ছাপানো শেষ না হওয়ায় এবার বছরের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছনো যায়নি।

পঞ্চম শ্রেণির সংশোধিত ‘আমার বাংলা বই’তে ‘আমরা তোমাদের ভুলবো না’ শিরোনামে একটি অধ্যায়ে এই দেশের জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রাণ দেওয়া শহীদদের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এই অধ্যায়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমলে ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, ৮৭ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পাশাপাশি ২৪ গণঅভ্যুত্থান ও শহীদদের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

বইটিতে ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান আমলে খুব কাছ থেকে পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ মো. আসাদুজ্জামানের নিহত হওয়ার কথা বলা আছে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে মতিয়ুর, আনোয়ারা বেগম, সার্জেন্ট জহুরুল হক, অধ্যাপক শামসৃুজ্জোহা নিহত হওয়ার কথাও লেখা আছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও অত্যাচার-নির্যাতনের কথা তুলে ধরে এরপর লেখা আছে- “শিক্ষার অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে ১৯৮৩ সালে শহীদ হন ছাত্রনেতা সেলিম-দেলোয়ারসহ অনেকে। গণতন্ত্রের জন্য বুকে-পিঠে স্লোগান লিখে ১৯৮৭ সালে শহীদ হন নুর হোসেন। ১৯৯০ সালে নিহত হন ডা. মিলন ও জেহাদ।”

এরপর বৈষম্যের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কথা তুলে ধরে লেখা হয়েছে- “সরকারি বাহিনী নির্মমভাবে সেই আন্দোলন দমন করতে চায়। পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রংপুরে ছাত্রনেতা আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়ান। পুলিশ তাঁকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। এতে আন্দোলন সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সারা দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বিশাল এক গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়।”

অধ্যায়টি পঞ্চম শ্রেণির ইবতেদায়ি স্তরের বইয়েও একইভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

পুলিশ সদস্যরা অস্বস্তিতে

নতুন পাঠ্যবই দেখে পুলিশের বিভিন্ন স্তরে আলোচনা চলছে। তাদের কয়েকজন সকাল সন্ধ্যার সঙ্গে কথাও বলেছেন। তবে তারা কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

এসআই পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এখন এমনিতেই পুলিশকে সহজভাবে নিতে পারছে না মানুষ। পুলিশ সদস্যরা এখনও গালিগালাজ, হামলার শিকার হচ্ছেন।

“এমন অবস্থায় পঞ্চম শ্রেণির বইয়ে পুলিশকে যেভাবে চিত্রায়িত করা হলো, তাতে পুলিশের ভবিষ্যৎও খুবই খারাপ মনে হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মনে বন্ধু নয়, ভিলেন হিসেবে জায়গা করে নেবে পুলিশ।”

এই পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে এবার পঞ্চম শ্রেণীতে উঠেছে। তার বইয়েই পুলিশ নিয়ে অংশটুকু রয়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, “সে (মেয়ে) যখন নিজের পাঠ্যবইয়ে পুলিশ নিয়ে খারাপ কথা পড়বে, তখন সে কি আমাকে ভালো ভাবতে পারবে? পুলিশের মেয়ে হওয়ায় তার সহপাঠীরাও তো তাকে ভিন্ন চোখে দেখবে।”

গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর জনতার হামলার মুখে পড়া থানাগুলোর একটি ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানা।
গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর জনরোষ গিয়ে পড়ে থনার ওপর। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

পুলিশের পরিদর্শক পদমর্যাদার আরেক কর্মকর্তা বলেন, “পাঠ্যবইয়ে সরকারি একটি বাহিনীকে নিয়ে এভাবে কথা বলা দুঃখজনক। শুধু পুলিশই কি নির্যাতন চালিয়েছে? পুলিশের মতো সরকারি অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও তো সরকারের কথামতো কাজ করেছে। তাহলে শুধু পুলিশকে এভাবে শিশুদের সামনে খারাপভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে কেন? 

“অধ্যায়টি পড়লে শিশুদের ধারণা হবে যে শুধু পুলিশই সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে। শহীদ আবু সাঈদ সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। অথচ বইয়ে এমনভাবে লেখা হয়েছে, যেন আবু সাঈদ প্রাণ দিয়েছেন শুধু পুলিশের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে।”

অতিরিক্ত কমিশনার পদপর্যাদার এক কর্মকর্তা আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে বলেন, “পঞ্চম শ্রেণির বইয়ে সরাসরি বলা হয়েছে যে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি এখনও প্রমাণিত নয়। বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।

“এমন অবস্থায় পাঠ্যবইয়ে বিষয়টি অন্যভাবেও উপস্থাপন করা যেত। আমার মনে হয়, শিশুতোষ শব্দচয়নে অন্যভাবে উপস্থাপন করলে ঘটনাটিও উঠে আসত, আবার শিশুদের মনে পুলিশ নিয়ে খারাপ ধারণাও সৃষ্টি হতো না।”

অন্যভাবে কীভাবে দেখানো যেত- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্য আন্দোলনে শহীদদের ক্ষেত্রে যেভাবে লেখা হয়েছে, সেভাবেই লেখা যেত।

সাবেক পুলিশ প্রধানরা যা বলছেন

পাঠ্যবইয়ে পুলিশের এমন চিত্রায়নে শিশু মনে এই বাহিনী নিয়ে বিরূপ মনোভাব জাগবে বলে মনে করেন সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা ও নূর মোহাম্মদ। তদন্তাধীন মৃত্যু নিয়ে পুলিশকে দায়ী করা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।  

২০০০ সালের ৭ জুন থেকে ২০০১ সালের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব পালন করা নুরুল হুদা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “পাঠ্যবইয়ে পুলিশকে এভাবে উপস্থাপন শিশুদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে। আমার মনে হয়, বিষয়টি অন্যভাবে উপস্থাপন করা যেত।

“আবু সা্ঈদের মৃত্যুর ঘটনা যদিও ভিডিও দেখা গেছে, তারপরও সেটা এখনও তদন্তাধীন। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কোনও বিষয় নিয়ে এভাবে সরাসরি মন্তব্য করাও ঠিক নয়।”

২০০৭ সালের জানুয়ারি ২০১০ সাল পর্যন্ত আইজিপির দায়িত্বে থাকা নূর মোহাম্মদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “পুলিশ ছাড়া সমাজ চলবে না। পুলিশকে এজন্য একটু সন্মান দেওয়া, পুলিশকে ভালো করা, পুলিশকে একটা ভালো অবস্থানে দাঁড় করানো সরকার কিংবা রাষ্ট্র সবারই দায়িত্ব। পুলিশ নিয়ে পাঠ্যপুস্তকে এভাবে লিখলে নেগেটিভ ইমপ্রেশন তো আসবেই।

“তবে আসার মতো কাজও তো পুলিশ করেছে। গত ১৬-১৭ বছরে যা হয়েছে, তাতে পুলিশকে বন্ধু ভাবার কোনও সুযোগও নাই। তারপরও একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানকে এভাবে ছোট করা ঠিক না।”

তিনি বলেন, “পুলিশকে নিয়ে এখন যেভাবে কথাবার্তা হচ্ছে, যেভাবে গালিগালাজ করা হচ্ছে। একটা ভিডিওতে দেখলাম ময়মনসিংহের ডিজিকে অফিসের মধ্যে ধমকাচ্ছে। এসব ঘটনায় পুলিশের যে শৃঙ্খলা সেখানে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিই হবে।

“পুলিশকে ছাত্রদের সামনে ছোট করে কারও কোনও লাভ হবে না, ক্ষতি ছাড়া। মানে পুলিশকে যদি আপনি ছোট করেন, উল্টো সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

পুলিশের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদের ছবি জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়।

আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে নুর মোহাম্মদ বলেন, “আবু সাঈদের মৃত্যুটা এখন পর্যন্ত আনডিসাইডেড একটি বিষয়। তার মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন কথা শোনা যাচ্ছে, এটা পুলিশের গুলি কি না? না কি বাইরে থেকে কেউ গুলি করল?

“আমরা মিডিয়া কাভারেজ থেকে দেখেছি যে পুলিশ খুব শর্ট রেঞ্জ থেকে গুলি চালিয়েছে। তবে কোনও ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন দিক থাকলেও তদন্তকারীরা আসল সত্যটা বের করে আনে। এটা তদন্তেই বেরিয়ে আসবে, আসলে কি পুলিশের গুলি, নাকি বাইরের?”

পাঠ্যবই নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের কোনও বক্তব্য রয়েছে কি না, তা জানতে সকাল সন্ধ্যা যোগাযোগ করেছিল এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগরের সঙ্গে।

তিনি উত্তর দেওয়ার আগে হোয়াটসঅ্যাপে লিখিত প্রশ্ন চেয়ে নেন। তবে পরে আর উত্তর দেননি। কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

সমস্যা দেখছে না এনসিটিবি

বইয়ের তথ্যে গোটা পুলিশ বাহিনীর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন পাঠ্যবই প্রণয়ন ও বিতরণের প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান।

পুলিশ সদস্যদের উদ্বেগ শোনানোর পর তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমি মনে করি না এই বিষয়ে শিশুদের মনে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে।”

তদন্তাধীন বিষয়ক তথ্য নিয়ে সংযোজন নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি খানিকটা উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন, “বিচার পরে, আপনি এই ঘটনার কোনও ভিডিও-টিভিতে দেখেন নাই? ভিডিওতে কী দেখা গেছে?

“পুলিশ গুলি তো আর ১ মাইল দূর থেকে করে নাই, কাছ থেকেই করছে। সবাই দেখছে। তাহলে আর এই ধরনের বিষয় নিয়ে কথা বলেন কেন? যে গুলি করছে, তাকেও অ্যারেস্ট করা হইছে। তাহলে বইয়ে ভুল লিখল কী?”

জুলাইয়ে মাঝামাঝি থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ; এরপর নির্বিচারে গুলি চলে। তাতে হাজার আন্দোলনকারী নিহত হয়। এই পুরো ঘটনায় পুলিশ ছিল জনরোষের মধ্যে। অভ্যুত্থানের পর পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব পাওয়া বাহারুল ইসলাম সম্প্রতি বলেছেন, পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসাবে ব্যবহার করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ; এরপর নির্বিচারে গুলি চলে। তাতে নিহত হয় কয়েকশ মানুষ। ফাইল ছবি : সকাল সন্ধ্যা

‘পুলিশকে বন্ধু ভাবতে পারবে না’

পাঠ্যবইয়ে পুলিশ নিয়ে এমন বর্ণনা শিশুদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, বলছেন একজন মনোবিজ্ঞানী।

তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “পাঠ্যবইয়ে পুলিশ সম্পর্কে এমন ভয়াবহ বিবরণ পড়ে সামনে পুলিশ দেখলে অনেক শিশু আতঙ্কিত হয়ে পড়তে পারে। তাদের মনে ক্ষোভও জন্ম নিতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে তার মনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

“বড় হলেও শিশুটি পুলিশকে আর নিরাপদ ভাবতে পারবে না। আগস্টে মানুষের ক্ষোভের কেন্দ্রে থাকা পুলিশ যখন জনগণের আস্থা ফেরাতে কাজ করছে, তখন বইয়ের এই তথ্য পুলিশকে শিশুমনে স্থায়ীভাবে ভিলেন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।”

মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্সেস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “একটা প্রজন্মকে যদি আমরা একটা বাহিনীর বিরুদ্ধে নেগেটিভ মনোভাব নিয়ে গড়ে তুলি, তাহলে যত ভালো পুলিশই গড়ি না কেন, তাতে কোনও লাভ হবে না।

“ভবিষ্যতে পুলিশ ভালো কাজ করলেও এই প্রজন্ম নেগেটিভ কিছুই খোঁজার চেষ্টা করবে। কারণ তাদের মনোভাবই সেভাবে গড়ে উঠবে। তারা পুলিশকে বন্ধু ভাবতে পারবে না।”

শিশুদের বইয়ে তাই রাষ্ট্রীয় কোনও বাহিনী নিয়ে সরাসরি এভাবে না লেখাই ভালো বলে মত দেন ড. উমর ফারুক।

“এতে সেই বাহিনীটিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, একটা প্রজন্মও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা এখন পুলিশকে যত উন্নতই করি না কেন, এই প্রজন্মের অনেক শিশুর মনে পুলিশ ভিলেন হিসাবেই বদ্ধমূল ধারণা তৈরি করবে।”

আবু সাঈদের মৃত্যুর বর্ণনা নিয়ে তিনি বলেন, “আবু সাঈদ নিঃসন্দেহে এই বিপ্লবের বীর শহীদ। কিন্তু তাকে হত্যার বিষয়টি এখনও বিচারাধীন। যে বিষয়টা এখনও তদন্তধীন আছেন, যেটার এখনও বিচার হয়নি, সেই বিষয় নিয়ে পাঠ্যবইয়ের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় কোনও একটা বাহিনীকে সুস্পষ্ট উল্লেখ করা ঠিক নয়।

“আর উল্লেখ করলেও সেটা আরও পরে করা যেত, বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর। যদিও আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনার অনেক ভিডিও দৃশ্যমান হয়েছে, তারপরও বিষয়টা অন্যভাবে বলা যেত।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত