গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সিলেটের বিশ্বনাথ থানায় অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ।
বিশ্বনাথ থানায় করা এ মামলায় অজ্ঞাতনামা দুই থেকে আড়াই হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
থানার উপপরিদর্শক জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে রবিবার এ মামলা করেন।
বিশ্বনাথ থানার ওসি রুবেল মিয়া বুধবার সাংবাদিকদের জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট তৎকালীন সরকারের পতনের পর বিশ্বনাথ থানায় অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর ও সরকারি অস্ত্র-গুলিসহ মালামাল লুট এবং থানায় উপস্থিত থাকা পুলিশদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন বিকাল ৩টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তৎকালীন সরকার পতনের খবরে বিশ্বনাথ থানা সংলগ্ন বাসিয়া ব্রিজ ও তার আশপাশের এলাকায় আনুমানিক দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ আনন্দ মিছিল শুরু করে। এক পর্যায়ে মিছিলকারীরা থাানার দিকে অগ্রসর হতে চাইলে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতারা মানবঢাল তৈরি করে থানায় আক্রমন ঠেকানোর চেষ্টা করেন।
বিকাল ৪ টা ৫৫ মিনিটের দিকে থানার প্রধান ফটকে মানবঢাল তৈরি করে থাকা নেতাকর্মীদের হটিয়ে দেয় উচ্ছৃঙ্খল-দুষ্কৃতকারীরা। তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে থানার প্রধান ফটক ভেঙে থানার কম্পাউন্ডে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে।
এ সময় থানার অফিসার-ফোর্সদের ওপরও হামলা করা হয় জানিয়ে বাদী এজাহারে লিখেছেন, হামলায় থানার এসআই আমিরুল ইসলাম, এএসআই লুৎফুর রহমান, কনস্টেবল সেলিমুজ্জামান সেলিম, কয়েছ আহমদ, জরিপ মিয়া, মারাজ মিয়া, পারভীন আক্তার, মোছা. নাছিমা আক্তার ও মোছা. ফারজানা আক্তার আহত হন।
ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চলাকালে একটি ডাবল কেবিন গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া দেয়। ভাঙচুর করা হয় আরও দুটি সরকারি গাড়ি, এতে প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া থানায় কর্মরত পুলিশ অফিসার ও ফোর্সদের ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলের মধ্যে ১২টিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে এবং আরও ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে প্রায় ১৮ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে।
এসময় থানার বিভিন্ন কর্মকর্তার কক্ষসহ অন্যান্য কক্ষে ভাঙচুর, কম্পিউটার, প্রিন্টারসহ নানা সরঞ্জাম ভাঙচুর করে ব্যবহারের অনুপযোগী করে ফেলায় প্রায় ১৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে বলে অভিযোগ করেন বাদী।
এছাড়া ওয়াকি-টকি সেট, ব্যাটারি লুটপাট, অফিসার -ফোর্সদের ব্যবহৃত সরকারি-ব্যক্তিগত মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকি ব্যারাকে থাকা পুলিশ সদস্যদের ট্রাঙ্কের তালা ভেঙে নগদ টাকাসহ খাবারের চাল-ডাল-মাছ-মাংসও লুট করা হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
হামলার সময় অস্ত্র লুটের বর্ণনা দিয়ে এজাহারে আরও বলা হয়েছে, “উচ্ছৃঙ্খল-দুষ্কৃতকারীরা থানার ভিতরে হামলা চালিয়ে কনস্টেবলদের কাছে থাকা ৪টি শর্টগান, ১২ বোর রাবার (শর্টগান) কার্তুজ ৫৫টি, ১২ বোর লিড বোর শর্টগানের শিসা ৫০টি, গ্যাসগান ৩৮ এমএম টিআর গ্যাসশেল (শর্টরেঞ্জ) ১০টি এবং ৭ দশমিক ৬২ এমএম চায়না রাইফেলের গুলি পাঁচ রাউন্ড, হ্যাভারসেক চারটি, অ্যামোনেশন ভেস্ট দুটি, গ্যাস মাস্ক দুটি, বান্ডুলিয়ার আটটি জোর করে নিয়ে যায়। এর পাশাপাশি চারটি চায়না ৭ দশমিক ৬২ রাইফেলের বাট-ম্যাগজিন ও একটি শর্টগানের জয়েন্ট ভেঙে ফেলে।”
এছাড়া থানার বিভিন্ন স্টোর রুমে জমা থাকা সরঞ্জাম লুট করা হয়েছে জানিয়ে তার বিস্তারিতও বাদী অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।
মামলা করতে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে বাদী উল্লেখ করেন “অজ্ঞাতনামা আসামিদের নাম ঠিকানা সংগ্রহের চেষ্টা, থানার কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় এবং দুষ্কৃতিকারীদের অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর-লুটপাটের মালামাল হিসাব করে ও ঘটনার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে অনুমতি নিয়ে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে।”
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিশ্বনাথ থানার এসআই নূর মিয়া বলেন, “ভিডিও ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।”