অভ্যুত্থানের পর জনরোষে পড়া পুলিশ সদস্যরা বর্তমান পোশাকে কাজে ফিরতে তুলেছিল আপত্তি; তখন তাদের আশ্বাস দিয়ে কাজে ফিরিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
পাঁচ মাস পর সোমবার এক্ষেত্রে অগ্রগতির খবর পাওয়া গেল আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকের পর।
সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেন, পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনীর পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে তার পাশে ছিলেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, সাবেক পুলিশ প্রধান খোদা বখস চৌধুরী।
তাদের পেছনে সম্ভাব্য নতুন পোশাক পরে দাঁড়িয়ে ছিলেন পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনীর একদল সদস্য। সেখানে এই তিনটি বাহিনীর ১৮টি পোশাক পরে সদস্যরা দাঁড়িয়েছিলেন।
তার মধ্য থেকে তিনটি পোশাক নির্বাচিত হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
“পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। পুলিশের জন্য, র্যাবের জন্য এবং আনসারের জন্য। তিনটা সিলেক্ট করা হয়েছে,” বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
পুলিশের বর্তমান পোশাক নীল রঙের; তা বদলে হবে আয়রন (লোহা) রঙের। মহানগর পুলিশের পোশাক বর্তমানে ভিন্ন রঙের। তা কী হবে, তা জানানো হয়নি। পুলিশের পোশাক এর আগেও বদলেছে।
পুলিশের একটি শাখা হিসাবে ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কালো পোশাক পরে আসছিল র্যাব সদস্যরা। তাদের পোশাক বদলে এখন হবে হালকা জলপাই রঙের।
পুলিশের মতোই আলাদা বাহিনী আনসারের পোশাক হবে সোনালি গম রঙের। বর্তমানে আনসার বাহিনীর পোশাক জলপাই রঙের।
কবে থেকে বাহিনীগুলো নতুন পোশাক পরবে- সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এটা ইমপ্লিমেন্ট হবে আস্তে আস্তে। একসাথে সব করা যাবে না।”
তার আগে নতুন পোশাকের নকশা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেখিয়ে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
“আজকে পোশাক সিলেক্ট করা হয়েছে। এটা হয়ত প্রধান উপদেষ্টাকেও দেখানো হতে পারে।”
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কঠোরভাবে দমনের সিদ্ধান্ত নিয়ে গত জুলাইয়ে পুলিশসহ বাহিনীগুলোকে নামিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। পুলিশ তখন আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এই আন্দোলনে হাজারের মতো মানুষ প্রাণ হারায়।
পুলিশসহ সরকারি বাহিনীকে আগের ভাবমূর্তি থেকে বের করে নতুন করে সাজানোর অংশ হিসাবে পোশাকের পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “পোশাকের সঙ্গে আমাদের সবার মন মানসিকতারও পরিবর্তন হতে হবে। তাহলেই অনেক কিছুই পরিবর্তন হবে। গত ১৫ বছর তাদের যে ট্রেনিং ছিল, সেই ট্রেনিংও পরিবর্তন করতে হবে, তাদের মানবিক হতে হবে।”
বিজিবি পাবে সাউন্ড গ্রেনেড-কাঁদানে গ্যাস
সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পোশাক ২০০৯ সালে রক্তাক্ত বিদ্রোহের পরই পরিবর্তন করা হয়েছিল।
এই দফায় এই আধা সামরিক বাহিনীর পোশাকে পরিবর্তন হচ্ছে না। তবে বিজিবির ব্যবহারের জন্য সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান।
কয়েকদিন আগেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফকে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে দেখা গিয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবিকেও এখন এই অস্ত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর বলেন, “দেখা যাচ্ছে, বিএসএফ কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করছে। বিজিবির কাছে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নেই। তাদের কাছে শুধু প্রাণঘাতী অস্ত্র আছে।
“এমন বাস্তবতায় বিজিবির জন্য কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী তারা ব্যবহার করবে।”
তবে সীমান্ত পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।