Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

ভোটের ট্রেন চালক পেল, যাত্রীরা কী ভাবছে

নির্বাচন কমিশন
আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবন।
[publishpress_authors_box]

নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে- অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একথা বলার চার দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হলো। সাবেক আমলা এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে এই কমিশনই ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করবে।

নির্বাচন কবে হবে, তার দিনক্ষণ এখনও ঠিক না হলেও ইসি গঠনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলো। সেই সঙ্গে তারা আশা করছে, দ্রুতই নির্বাচন আয়োজনের দিকে এগোবে ইসি।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সাত মাসের মধ্যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাংবিধানিক শূন্যতার মধ্যে ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়।

এর এক মাস বাদে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা সবাই পদত্যাগ করলে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটিও শূন্য হয়ে পড়ে।

সংসদ ভেঙে দেওয়ায় সংবিধান অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন সংস্কার করেই ভোটের পক্ষপাতি।

নির্বাচন সংস্কারে এরই মধ্যে বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। তাদের কাজ শেষের আগেই দুই বছর আগে আওয়ামী লীগ আমলে প্রণীত আইন অনুসরণে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার গঠিত নতুন নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগ আমলে জনগণের হারিয়ে ফেলা ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে বলে আশা করছে বিএনপি।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “কমিশন গঠন হয়েছে। এখন মুখ্য কাজ দ্রুত নির্বাচন দেওয়া। এর কোনও অলটারনেটিভ নেই।”

সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বিএনপি সহযোগিতা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, “জনগণের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করাটা তাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিৎ। আর দীর্ঘ ১৭ বছরের কলঙ্ক মিটিয়ে নতুন ইতিহাস রচনা করার জন্য সর্বোচ্চ তৎপরতা দেখানো উচিৎ। সেজন্য বিএনপি তাদের সহযোগিতা করবে।”

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলোপ করে দলীয় সরকারকে ক্ষমতায় রেখে তিনটি নির্বাচন করে। প্রশ্নবিদ্ধ সেই নির্বাচনের দুটিই বয়কট করেছিল বিএনপি। একটিতে অংশ নিলেও কারচুপির অভিযোগে ভোটের দিন নির্বাচন বর্জন করেছিল।

গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছিল এই ব্যালট বাক্সে। ওই নির্বাচন অধিকাংশ দল বর্জন করেছিল। ফাইল ছবি

নিবন্ধন হারানোয় গত তিনটি নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিতে না পারা জামায়াতে ইসলামী নতুন ইসি নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে সময় নিতে চাইছে।

দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার বিভাগীয় সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত হয় নাই। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে বিস্তারিত জানাব।”

তবে তিনি বলেন, “আমরা দ্রুত নির্বাচন চাই। অতীব অপরিহার্য জরুরি সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন করতে হবে। কারণ এই সরকার তো সব সংস্কার করতে পারবে না।”

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স চাইছেন, নতুন ইসি যেন নির্বাচনের পথে দ্রুত হাঁটে।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “যাদেরকে সরকার নিয়োগ দিয়েছে। তাদের ব্যাপারে নিশ্চয়ই বুঝে-শুনে এই সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছে। আমরা মনে করি, নতুন নির্বাচন কমিশন কাল থেকেই তার কাজ শুরু করবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করবে।”

সদ্য নিবন্ধন পাওয়া আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জুও নবগঠিত ইসির সদস্যের ওপর আস্থা পাওয়ার কথা জানান।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “নির্বাচন কমিশনার যাকে নিযুক্ত করা হয়েছে, তিনি খুবই যোগ্য লোক। বাকি যাদের নেওয়া হয়েছে, নিশ্চয়ই তারাও যোগ্য। আমি মনে করি, তারা প্রোপারলি নির্বাচন পরিচালনা করতে সক্ষম।”

এক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “একটা নির্বাচন কনডাক্ট করার জন্য প্রয়োজন দক্ষ প্রশাসন। কিন্তু আমাদের প্রশাসনের অবস্থা ভালো না। আমার মনে হয়, নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ভোটার লিস্টসহ সকল কাজ ঠিকঠাক করার ব্যবস্থা করতে হবে।”

আওয়ামী লীগ আমলে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা জাতীয় পার্টি নতুন ইসি নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া এখনই জানাতে চায়নি।

দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা দলীয়ভাবে আলোচনা করে দুই-একদিনের মধ্যে আমাদের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাব।”

অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কোনও প্রতিক্রিয়া জানার সুেযাগ ঘটেনি। দলটির ফেইসবুক পাতায় নানা বিষয়ে বক্তব্য-বিবৃতি এলেও ইসি গঠন নিয়ে এখনও কিছু বলা হয়নি।

চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পাই না : সিইসি

সাবেক সচিব নাসির উদ্দীন পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সঙ্কল্পের কথা জানিয়েছেন।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ এবং বিশ্বাসযোগ্য একটি নির্বাচন উপহার দেওয়া আমার মুল লক্ষ্য এবং সেটা করতে গিয়ে আমার যা যা করা লাগবে, তাই আমি করবে। সুন্দর এবং অবাধ নির্বাচন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে আমার।”

নতুন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন।

বর্তমান অবস্থায় কোনও চ্যালেঞ্জ দেখছেন কি না- জানতে চাইলে নতুন সিইসি বলেন, “জীবনে চ্যালেঞ্জ থাকবেই। আমার চাকরির জীবনটাইতো চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গেছে।

“আমি তথ্য মন্ত্রণালয়, জ্বালানি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চালিয়ে এসেছি। আমার তো হাজারো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই আগাইতে হইছে না? সুতরাং চ্যালেঞ্জকে আমি ভয় পাই না।”

“এখন আপনারা যেসব চ্যালেঞ্জ দেখতেছেন, ভবিষ্যতে হয়ত তার চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। কিন্তু যতই চ্যালেঞ্জ আসবে, আমরা মোকাবেলা করব। সকল অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই অভিষ্ঠ লক্ষ্যে এগিয়ে যাব। এই বিশ্বাস আমার আছে,” বলেন তিনি।

বিসিএসের ৭৯ ব্যাচের কর্মকর্তা ২০০৯ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন। তার বাড়ি কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ায়। তিনি পড়াশোনা করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে।

রাষ্ট্রপতি দেশের চতুর্দশ সিইসি পদে নাসির উদ্দীনকে নিয়োগের পাশাপাশি চারজনকে নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ দিয়েছেন।

তারা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব বেগম তহমিদা আহমদ ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

আনোয়ারুল ইসলাম অবসরে যাওয়ার আগে সরকারের টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালকও ছিলেন তিনি।

তাহমিদা আহমেদ চাকরিরত অবস্থায় যুগ্ম সচিব হিসাবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আগে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন।

সেনা কর্মকর্তা মো. সানাউল্লাহ আওয়ামী লীগ সরকার আমলে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ছিলেন।

নির্বাচন কবে?

নির্বাচন নিয়ে গত রবিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, “নির্বাচন কবে হবে- এই প্রশ্ন আপনাদের সবার মনেই আছে। আমাদের মনেও সারাক্ষণ আছে।

“আপনারা লক্ষ্য করেছেন নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছি। কয়েকদিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে যাবে। তারপর থেকে নির্বাচন আয়োজন করার সমস্ত দায়িত্ব তাদের উপর বর্তাবে।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন পূর্তিতে রবিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : পিআইডি

নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ, প্রবাসী বাংলাদেশিদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করবে বলেও জানান তিনি।

নির্বাচনের পাশাপাশি সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে ড. ইউনূস বলেছিলেন, “আমরা মনে করি না যে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিলেই নির্বাচন আয়োজনে আমাদের দায়িত্ব শেষ। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংস্কার আমাদের এই সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। আপনারাই আমাদেরকে এই ম্যান্ডেট দিয়েছেন।

“প্রথম ছয়টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে একটি হলো নির্বাচন সংস্কার কমিশন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এই কমিশনের সুপারিশমালা অত্যন্ত জরুরি। তাদের প্ল্যাটফর্মে যান। আপনার মতামত খোলাখুলিভাবে তুলে ধরুন। নির্বাচন নিয়ে আপনাদের সকল বক্তব্য বিনাদ্বিধায় বলতে থাকুন। নির্বাচনের কথা বলার সঙ্গে নির্বাচন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সংস্কারের কথাটিও বলুন।”

নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে মন্তব্য করার পাশাপাশি তিনি বলেছিলেন, “এটা আর থামবে না। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের অনেকগুলো কাজ সেরে ফেলতে হবে।

“এই ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছাবে, সেটা নির্ভর করবে কত তাড়াতাড়ি আমরা তার জন্য রেল লাইনগুেলা বসিয়ে দিতে পারি। আর তা হবে রাজনৈতিক দলসমূহের ঐক্যমত্যের মাধ্যমে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত