খেলার মাঠ দখল করে বছরজুড়ে মেলা আয়োজন রীতিতে পরিণত হয়েছিল চট্টগ্রামে। ২০২৩ সালে সেই রীতির ইতি টানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ঘোষণা আসে ‘খেলার মাঠে আর মেলা নয়’।
এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সে সময় অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে নগরবাসীর সহযোগিতায় সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে জেলা প্রশাসন। প্রথমে চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে সব ধরনের মেলা আয়োজন বন্ধ করা হয়।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দেখা দেয় আউটার স্টেডিয়ামে বিজয় মেলা আয়োজন নিয়ে। জেলা প্রশাসন অনেক চেষ্টা করে আউটার স্টেডিয়ামে বিজয় মেলা আয়োজন বন্ধ করতে সক্ষম হয়।
কয়েক বছর ধরে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামের পাশের মাঠে বইমেলা আয়োজন করে আসছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। সেখানে জেলা প্রশাসন বইমেলা আয়োজনের অনুমতি না দেওয়ায় আয়োজকরা এখন সিআরবি প্রাঙ্গণে মেলা আয়োজন করছে।
জেলা প্রশাসনের খেলার মাঠ রক্ষার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছিল নগরবাসী। একইসঙ্গে তারা স্বস্তির নিঃশ্বাসও ফেলে। আউটার স্টেডিয়ামে এখন দিনভর খেলাধুলা হয়। জিমনেসিয়াম চত্বরে সকাল-সন্ধ্যা চলে প্রশিক্ষণ।
তবে চট্টগ্রামবাসী সাম্প্রতিক এক ঘটনায় ফের উদ্বিগ্ন। নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম চেম্বারকে ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা’ আয়োজনের অনুমতি দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ, যা চলবে মাসব্যাপী। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই মেলা নিয়ে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে।
এর আগে চট্টগ্রামের আরও দুটি বাণিজ্য সংগঠন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার ও চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দুটি বাণিজ্য মেলা আয়োজন করে।
সেসব মেলার একটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল হালিশহরের আবাহনী ক্লাবের মাঠে। অন্যটি হয়েছিল পাহাড়তলীর শহীদ শাহজাহান মাঠে।
শিশু-কিশোরদের জন্য নির্ধারিত এই মাঠ দখল করে মেলা আয়োজন করা হয়। মাসব্যপী চলে এসব মেলা। সেখানে চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্সকে মেলা করার অনুমতি দিয়েছিল রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। মেলা শেষ হয়ে গেলেও এর ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে শহীদ শাহজাহান মাঠ। এখনও খেলার উপযোগী হয়ে ওঠেনি এটি।
পলোগ্রাউন্ড মাঠের ৪ লাখ বর্গফুট স্থানজুড়ে দুদিন পর শুরু হতে যাওয়া মেলা নিয়ে সকাল সন্ধ্যার সঙ্গে কথা বলেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, “মাঠটিতে মেলা আয়োজন কেন বন্ধ করা সম্ভব হয়নি?”
জবাবে তিনি বলেন, “দেখুন, এই পলোগাউন্ড মাঠ কিন্তু আমাদের মালিকানাধীন নয়। আবার সরকারের এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্তও নয়। এই মাঠের জন্য জেলা প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন হয়নি। এটি সরাসরি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে।”
সরকারি মাঠে আর কোনও মেলা হবে না তার নিশ্চয়তা দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আগেভাগেই বিষয়টি জানাব। তারা যাতে খেলার মাঠকে মেলা হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি না দেয়। সরকারি মাঠে আর কোনও মেলা হবে না—এ নিশ্চয়তা আমরা চট্টগ্রামবাসীকে দিচ্ছি।
“গত বছর পলোগ্রাউন্ড মাঠে মেলা আয়োজনে আপত্তি জানিয়েছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম। তার রেফারেন্স ধরে আমরা খেলার মাঠে মেলার অনুমতি না দিতে বিভিন্ন ফোরামে আবেদন করেছিলাম। আপত্তিও জানিয়েছিলাম।”
পলোগ্রাউন্ড মাঠে মাসব্যাপী মেলা আয়োজনের জন্য চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে ভাড়া হিসেবে ৪৩ লাখ টাকা পেয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। তাহলে এই টাকার জন্যই কি খেলার মাঠে মেলার অনুমতি মিলল?
এ প্রশ্নের জাবাবে চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, “মেলা আয়োজনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমতি দিয়েছে, সেজন্য আমরাও মাঠ বরাদ্দ দিয়েছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সায় না পেলে আমাদের তো অনুমতি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। সরকারিভাবে যদি খেলার মাঠে মেলা না করার নির্দেশনা থাকে, তাহলে আমরা সেটি বাস্তবায়ন করব।”
পলোগ্রাউন্ড মাঠে বাণিজ্য মেলা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধনও করে নগরীর বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন।
গত ২৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাহী সদস্য নাসির মিয়ার সভাপতিত্বে পলোগ্রাউন্ড মাঠের সামনে এ মানববন্ধন হয়।
মানববন্ধনে নাসির মিয়া প্রশ্ন করেন, “খেলার মাঠে মেলা হবে না—এমন সিদ্ধান্ত যদি চট্টগ্রামের বিজয় মেলা কর্তৃপক্ষ মানতে পারে, তাহলে চট্টগ্রাম চেম্বার কেন পারবে না? ব্যবসায়ী সংগঠন বলেই কি তারা আইনের ঊর্ধ্বে?”
এর জবাবে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, “৩০ বছর ধরে আমরা মেলা আয়োজন করে আসছি। আমাদের কাছে তো মেলা আয়োজনে বিকল্প মাঠ নেই। সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম, মেলার জন্য স্থায়ী ভ্যানু বরাদ্দের। সেটি হলে হয়তো সেখানে যাব।”