ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের মনিটরে পর্ন ভিডিও প্রচারের ঘটনা অনুসন্ধান করে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে (ডিসিও) জড়িত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানাসহ প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রবিবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. তাজুল ইসলাম সোহাগের আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এসব আদেশ দেন। এই ঘটনাকে দুঃখজনক, আপত্তিকর ও গভীর উদ্বেগের বলেও মন্তব্য করেন বিচারক।
গত ২৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ২টা ১০ মিনিট থেকে ২টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের তথ্য প্রদর্শনের জন্য স্থাপন করা ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডে পর্ন ছবি প্রদর্শন হয়। বিষয়টি যাত্রীদের নজরে এলে তাদের কয়েকজন তা বন্ধের চেষ্টা করেন। কিন্তু বন্ধ করতে না পেরে ইট মেরে ডিসপ্লে বোর্ড ভেঙে দেন এক যাত্রী।
আদালতের স্টেনোগ্রাফার জালিজ মাহমুদ জানান, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০ (১) সি ধারায় স্বতঃপ্রণোদিতভাবে আমলে নিয়ে একটি মিস মামলা রেকর্ড করেন বিচারক। একই সঙ্গে প্রকাশিত ও প্রচারিত সংবাদ সরেজমিনে অনুসন্ধান করে এই আদেশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে জড়িতদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানাসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের ডিসিওকে নির্দেশ দেন।
অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাকে সার্বিক সহায়তা দিতে ঢাকা রেলওয়ে থানা ওসি এবং ঢাকা রেলওয়ে জেলাসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন জমার দিনও ঠিক করে দিয়েছেন বিচারক।
আদালতের আদেশে বলা হয়, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় রেলস্টেশন ও রেলওয়ে জংশন। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী রেলস্টেশন। এই স্টেশনটি প্রতিনিয়ত লাখো মানুষের পদচারণার মুখরিত থাকে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষ রাজধানীসহ বিভিন্ন গন্তব্যস্থলে পৌঁছায়, কোমলমতি শিশুসহ আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা নির্বিশেষে সকলেই সাময়িক সময়ের জন্য এ স্টেশনে অবস্থান করে থাকেন। স্টেশনের বিভিন্ন জায়গায় বেশ বড় আকারে ডিজিটাল ডিসপ্লে বা বোর্ড রয়েছে যেটিতে বিভিন্ন আন্তঃনগর ও লোকাল ট্রেনের সময়সূচি প্রকাশ ও বাণিজ্যিক প্রচারণা চালানো হয়। উক্ত বাণিজ্যিক প্রচারণা নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ করার জন্য একজন বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ওই বিভাগে নিযুক্ত থাকেন।
কমলাপুর রেলস্টেশনের মত স্পর্শকাতর স্থানে পর্ন ভিডিও প্রচারকে অত্যন্ত দুঃখজনক, আপত্তিকর ও গভীর উদ্বেগের জানিয়ে বিচারক বলেন, “উক্ত বিষয়টি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাসহ ব্যর্থতা প্রকাশ করে। এতে আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটসহ দেশে-বিদেশে অবস্থানরত ও বসবাসরত বিভিন্ন মানুষের নিকট ভুল বার্তা প্রেরণ করে। তারপরেও এ পর্যন্ত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনও আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে বা কোনও ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দেখা যায়নি।
“এটি স্পষ্ট যে, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে অপরাধের শামিল অপ্রীতিকর ও আপত্তিকর যে ঘটনা ঘটেছে সেটি একটি অপরাধ।”
এই অপরাধে জড়িত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা আবশ্যক বলে মনে করছে আদালত। সে কারণে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত সংবাদটি আমলযোগ্য অপরাধের সংবাদ হিসেবে বিচারিক বিবেচনায় গ্রহণ করে প্রকৃত তথ্য অনুসন্ধানের আদেশ দেওয়া হয়।