শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ছে বাজারে। একটু একটু করে কমে আসছে এসব মৌসুমী সবজির দাম। অন্যদিকে, বাড়তি দাম দিয়ে খেতে হচ্ছে বারোমাসি সবজি। বিশেষ করে লাউ ও মিষ্টিকুমড়ার মতো বারোমাসি সবজির দাম এখন শীতকালীন সবজির চেয়ে বেশি বলে মনে করছেন ভোক্তারা।
রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোয় মৌসুমের শুরুতে ফুলকপি ও বাঁধাকপির আকার ছিল ছোট। শুক্রবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন কিছুটা বড় আকৃতির ফুলকপি ও বাঁধাকপি পাওয়া যাচ্ছে। দাম পড়ছে একই, ৪৫-৫০ টাকা পিস। মূলার কেজি পড়ছে ৫০-৬০ টাকা।
অন্যদিকে মাঝারি আকারের লাউ কিনতে হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। মিষ্টি কুমড়া ফালি আকারে বিক্রি হলেও এক কেজি পড়ছে ৬০-৭০ টাকা। শীত মৌসুম শুরুর আগে এসব সবজির দাম ছিল ৫০-৬০ টাকা।
অন্যান্য সবজির মধ্যে টমেটো ১২০-১৫০ টাকা, শিম ১০০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০-১০০ টাকা, ধনেপাতা ৬০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাল শাক, কলমি শাক ২০ থেকে ৩০ টাকা আটি পড়ছে। লাউ শাক, মূলা শাক, পুঁই শাক ও মিষ্টি কুমড়ার শাক বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা আটি।
পেঁপে মানভেদে ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি। এছাড়া ঝিঙা, পটল, বরবটি, করলা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, কচুরমুখী, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি দরে। কাঁকরোল পড়ছে ৮০-৯০ টাকা।
নর্দা বাজারের ক্রেতা মো. বেলাল হোসেন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “শীতকালীন সবজির দাম কিছুটা কম আছে। কিন্তু বারোমাসি সবজির দাম উল্টোদিকে বাড়ছে। একটি মাঝারি আকারের লাউ কিনতে হলো ৮০ টাকায়। অথচ এই লাউ এক মাস আগেও কিনেছি ৫০-৬০ টাকার মধ্যে। বড় আকারের তিনটি বেগুন কিনেছি ১০০ টাকায়, এক কেজি।”
টানা দুসপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী থাকা আলুর দর এ সপ্তাহে আরও বেড়েছে। মানভেদে আলুর দাম কেজিতে তিন-পাঁচ টাকা বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মদ রব সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আলু আমরা ৭২-৭৫ টাকা বিক্রি করছি। কিছু কিছু দোকানে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।”
নতুন লাল আলুর দাম পুরোনো আলুর দ্বিগুণ বলে অভিযোগ করেন ওই ক্রেতা।
বেলাল হোসেন বলেন, “নতুন আলু এক কেজি ১৪০ টাকা। কেনার সাহসও করিনি। আমাদের চলতে বেশি কষ্ট হচ্ছে। শীতকালে সবজির দাম হওয়ার কথা ২০ টাকা, ৩০ টাকা।”
পেঁয়াজের দর দুই সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও এ সপ্তাহে বাড়েনি। দেশি পেঁয়াজ এখন বাজারে নেই বললেই চলে। ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি পাকিস্তানি পেঁয়াজ পড়ছে ১১০ টাকা ও মিশরের পেঁয়াজ ১০০ টাকা। এ হিসাবে পাকিস্তানি ও মিশরের পেঁয়াজের দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা কমেছে। তবে এসব পেঁয়াজের খুব বেশি চাহিদা নেই ভোক্তাদের কাছে। দেশে নতুন উৎপাদিত পাতাওয়ালা পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজের আড়তদার মো. ইব্রাহিম বলেন, “বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ নেই। দেশি পেঁয়াজ আসতে অন্তত এক মাসের বেশি সময় লাগবে।”
ব্রয়লার মুরগির দাম গত সপ্তাহের মতোই আছে। শুক্রবার ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৯০-২০০ টাকা কেজি দরে। সোনালি মুরগির দাম কেজিতে অন্তত ৫০ টাকা কমে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি কক মুরগি পড়ছে ২৮০-৩০০ টাকা কেজি। দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে এদিন।
ইলিশের দাম পড়ছে ওজন ভেদে। প্রতিকেজি ছোট আকারের ইলিশ (জাটকা) বিক্রি হয়েছে ৬৮০-৮০০ টাকা, ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা, ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১২০০ টাকা ও ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার টাকার বেশি।
প্রতিকেজি রুই ও কাতলা মাছ পড়ছে ২৮০ থেকে ৬০০ টাকা; চিংড়ি ৮০০ থেকে ১৪০০ টাকা। বড় আকারের চাষের কই পাওয়া গেছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজিতে। এছাড়া প্রতিকেজি শিং ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, টেংরা ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, পাবদা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, চিতল ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা ও রূপচাঁদা ৪৫০ থেকে ৯০০ টাকা পড়েছে।
শুক্রবার দেশি রসুন ২৪০ থেকে ২৪৫ টাকা, চায়না রসুন ২৬০ টাকা, চায়না আদা ৩২০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ছোট মসুরের ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১২০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৫৫ টাকা ও ছোলা ১৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।