চট্টগ্রাম বন্দর বেসরকারিকরণ অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয় বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বন্দর সংযুক্ত শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের নেতারা। তারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়মিত কাজ সম্পাদন, দেশের সবচেয়ে বড় এই বন্দর কীভাবে চলবে তার সিদ্দান্ত নেবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার।
এই ফেডারেশনটি মূলত বিএনপিপন্থী শ্রমিকদের; যা দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় ছিল।
শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান চট্টগ্রাম বন্দর সংযুক্ত শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ হারুন।
তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চট্টগ্রাম বন্দরকে বেসরকারিকরণের জন্য যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এটি তাদের কাজ নয়। অন্তর্বর্তী সরকার রুটিন কাজ করবে। বন্দর কীভাবে পরিচালিত হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবে দেশের নির্বাচিত সরকার। বন্দরকে বেসরকারিকরণের যেকোনো প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট। একতরফা কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে আমরা শ্রমিক-কর্মচারীরা কোনোভাবেই মেনে নেব না।”
দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা এই শ্রমিক ফেডারেশনটি সক্রিয় হয়েছে ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে। ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত ওয়ান ইলেভেন সরকার ক্ষমতায় এলে বন্দর সংস্কারের অংশ হিসেবে একটি শ্রমিক সংগঠন থাকার বাধ্যবাধকতা দেয়। এর ফলে বাকি সব শ্রমিক সংগঠন বিলুপ্ত হয়, ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন।
দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিএনপিপন্থী এই শ্রমিক ফেডারেশনের ব্যানারে বন্দরে বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কিছু সমাবেশে চট্টগ্রাম বন্দরকে বেসরকারিকরণ বিশেষ করে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ করে তা ঠেকাতে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বিএনপিপন্থী শ্রমিক নেতারা।
প্রেসক্লাবে শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে যে ব্যানার টানানো হয়েছিল তার একপাশে ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি এবং অন্যপাশে ছিল দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছবি।
লিখিত বক্তব্যে সভাপতি মোহাম্মদ হারুন আরও বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিসিটি (নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল) ও সিসিটি (চিটাগং কনটেইনার টার্মিনাল) দুবাইভিত্তিক বন্দর পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য রূপরেখা প্রণয়ন করেছিল পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তাদের পতনের পর সেই রূপরেখা বাস্তবায়নের তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছে তাদেরই নিয়োগ করা দোসররা। আমরা কিছুতেই এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হতে দেব না।
“আমরা মনে করি, এ ধরনের অপতৎপরতা চট্টগ্রাম বন্দর, দেশের অর্থনীতি এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে। দেশের স্বার্থে, বন্দরকে রক্ষার স্বার্থে এ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে হবে।”
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যানের ঘোষিত বিভিন্ন টার্মিনালের বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদও জানায় ফেডারেশন।
এসময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার বলেন, “বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য সৌদিআরবের প্রতিষ্ঠান রেড সী গেটওয়ের সাথে করা চুক্তি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।”
বন্দরের বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে ২২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলেও সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়।