Beta
বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫

টিউলিপ বড় চাপে

লন্ডনে কয়েকটি ফ্ল্যাট নিয়ে চাপে আছেন  টিউলিপ সিদ্দিক।
লন্ডনে কয়েকটি ফ্ল্যাট নিয়ে চাপে আছেন টিউলিপ সিদ্দিক।
[publishpress_authors_box]

একের পর এক অভিযোগের মুখে নিজেকে তদন্তের সামনে দাঁড় করিয়েছেন যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক। তার ওপর পদত্যাগের চাপ বেড়েই চলছে। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এখনও তার পক্ষে থাকলেও তা কতদিন ধরে রাখতে পারবেন, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ গত জুলাই মাসে টানা চতুর্থবার লেবার পার্টি থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর স্টারমারের সরকারে স্থান পান। বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরপরই টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে।

এই সব অভিযোগের সঙ্গে নাম আসছে শেখ হাসিনারও। যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্রগুলোতে টিউলিপের খালা শেখ হাসিনাকে পতিত স্বৈরাশাসক হিসাবেও পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

গত জুলাই মাসে বাংলাদেশে আন্দোলন চলার মধ্যে টিউলিপের বিরুদ্ধে একটি বাড়ির ভাড়ার তথ্য গোপনের অভিযোগ ওঠে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৪০০ কোটি পাউন্ড আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে টিউলিপের বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তের উদ্যোগ নেওয়ার খবর যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্রগুলোতে ফলাও করে প্রচার করা হয়। ২০১৩ সালে মস্কোয় রাশিয়ার সঙ্গে ওই প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে শেখ হাসিনার সঙ্গে টিউলিপের থাকার ছবিও প্রকাশ করা হয় প্রতিবেদনগুলোতে।

এরপর টিউলিপের বিরুদ্ধে সেন্ট্রাল লন্ডনে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগ সামনে আসে, যে ব্যবসায়ী আবার তার খালা শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের সমর্থক।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনের বরাতে দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, টিউলিপ ২০০৪ সালে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় দুই বেডরুমের একটি অ্যাপার্টমেন্ট বুঝে নেন, তবে তার জন্য কোনও অর্থ পরিশোধ করেননি তিনি।

ওই ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটটি টিউলিপকে দিয়েছিলেন আব্দুল মোতালিফ নামে একজন আবাসন ব্যবসায়ী, তিনি আওয়ামী লীগে যুক্ত।

এরপর অন্যের মালিকানায় থাকা একটি বিলাসবহুল বাড়িতে বসবাসের অভিযোগও ওঠে টিউলিপের বিরুদ্ধে। ২১ লাখ পাউন্ড দামের বাড়িটির মালিক আব্দুল করিম নামে বাংলাদেশি এক ধনকুবের। শেখ হাসিনা ওই ব্যবসায়ীকে সিআইপি ঘোষণা করে ভিআইপির মর্যাদা দিয়েছিলেন বাংলাদেশে।

ডেইলি মেইল অনলাইন টিউলিপ সিদ্দিকের কাছে তখন জানতে চেয়েছিল, আব্দুল করিমের বাড়িতে থাকার জন্য তিনি কত টাকা ভাড়া দেন। কিন্তু বারবার প্রশ্ন করা সত্ত্বেও টিউলিপ বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি।

দ্য সানডে টাইমস আরেক প্রতিবেদনে জানায়, লন্ডনের হ্যাম্পস্টেডে যে ফ্ল্যাটে টিউলিপ এক সময় ছিলেন, তা কিনেছিলেন মঈন গনি নামের এক আইনজীবী; যিনি শেখ হাসিনা সরকারের হয়ে কাজ করেন। ফ্ল্যাটটি পরে টিউলিপের বোন আজমিনা সিদ্দিকী রূপন্তীকে দিয়ে দেওয়া হয়।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শেখ হাসিনা ও টিউলিপ সিদ্দিকসহ তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা।

সপ্তাহ দুয়েক আগে টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে রূপুপুর প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে টিউলিপকে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ করেছে বলে খবর দেয়। যদিও টিউলিপ তা অস্বীকার করেন বলেও জানায় সংবাদমাধ্যমটি।

ফ্ল্যাট উপহার নেওয়া সম্পর্কিত অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করছেন টিউলিপ। এছাড়া তার ওই সম্পত্তির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনও ধরনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, লন্ডনের ফ্ল্যাটটি ২০০১ সালের জানুয়ারিতে ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ডে কেনা হয়েছিল, যা এখনও টিউলিপের মালিকানাতেই রয়েছে।

আব্দুল মোতালিফ ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন, ফ্ল্যাটটি তিনিই কিনেছিলেন, তবে এ বিষয়ে আর কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

শুরুতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার টিউলিপের পক্ষে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, সিটি মিনিস্টারের প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে তার।

তবে সিটি মিনিস্টার হিসাবে আর্থিক খাতে দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব যার ওপর, সেই টিউলিপের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ দেখে তার পদত্যাগের দাবি তুলেছেন রক্ষণশীল দলের কয়েকজন এমপি।

টোরি দলের এমপি ম্যাট ভিকার্স ডেইলি মেইলকে বলেন, “এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে কিয়ার স্টারমার তার সরকারের কেলেঙ্কারি ঢেকে রাখতে চায়। টিউলিপ সিদ্দিক সম্পর্কে যে অভিযোগ আসছে, তার স্পষ্ট উত্তর তাকে দিতে হবে।”

আরও কয়েকজন টোরি এমপিও টিউলিপের পদত্যাগ দাবি করে সরব হয়েছেন।

এর মধ্যেই সোমবার খবর আসে, টিউলিপ নিজেকে তদন্তে সমর্পণ করেছেন। যুক্তরাজ্যের সরকারকে দায়িত্বশীল রাখার দায়িত্ব যার ওপর, সেই লরি ম্যাগনেস এখন টিউলিপকে নিয়ে তদন্ত করবেন।

টিউলিপ কোনোভাবে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিপরিষদের নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন কি না, তার স্থাবর সম্পত্তি এবং সেসবের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনও যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখবেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ম্যাগনাস।

টিউলিপ নিজেই তাকে নিয়ে তদন্ত করতে ম্যাগনাসকে চিঠি দিয়েছেন। সেই চিঠিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেই তিনি বলেছেন, “গত কয়েক সপ্তাহে আমাকে নিয়ে অনেক খবর হয়েছে, তার বেশিরভাগই ঠিক নয়। আমি জানি আমি কোনও অন্যায় করিনি। তবে সবার সন্দেহ দূর করতে আমি চাই, স্বাধীনভাবে এর তদন্ত হোক।”

এই তদন্তের কারণে সরকারি প্রতিনিধি দলের হয়ে এ সপ্তাহে চীনে যাওয়াও হচ্ছে না টিউলিপের।

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অর্থমন্ত্রী র‌্যাচেল রিভসের নেতৃত্বে সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিকের চীনে যাওয়ার যে পরিকল্পনা ছিল, তা আপাতত হচ্ছে না। তাকে বরং লন্ডনে থেকে তদন্তে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত