সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসন সংকট মোকাবিলায় ঢাকার শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের পাশের প্লটে ১ হাজার ৫১২টি ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
১০ তলা বিশিষ্ট ৪২টি ভবনে এসব ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য প্রায় ৪ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব নিয়ে ‘ঢাকাস্থ শেরেবাংলা নগরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসন নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প তৈরি করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
প্রস্তাবটি ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে বলে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবারের পিইসি সভায় প্রাথমিক মূল্যায়নের জন্য প্রকল্পটি তোলা হয়েছিল। বৈঠকে প্রকল্পটির কিছু অংশে ব্যয় বিশ্লেষণ এবং যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আরও বিশ্লেষণ চাওয়া হয়। ব্যয় বিশ্লেষণ ও যৌক্তিকতা তুলে ধরার জন্য প্রকল্পটি পরে আবারও পিইসি সভায় তোলা হবে। এরপর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় সুইমিং পুল, বোট হাউজ, আধুনিক লেক প্লাজাসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
অথচ দেশে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে গত ৫ জুলাই অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা এক পরিপত্রে অর্থনৈতিক কৃচ্ছ্র সাধনের জন্য “শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ছাড়া নতুন আবাসিক, অনাবাসিক বা অন্যান্য ভবন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ থাকবে” বলে বলা হয়েছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, শেরেবাংলা নগরে ৪৩ একর জায়গায় মোট ৪২টি ১০ তলা ভবনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরে শুরু করে ২০২৭ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন কাজ শেষ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে এলাকাটিতে এক ও দুই তলার ৪৭টি আবাসিক ভবন রয়েছে, যা ১৯৬০-এর দশকে নির্মাণ করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বিশেষ করে রাজধানীর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা প্রকট। এই সমস্যা সমাধানে আমরা বড় পরিসরে একটা প্রকল্প প্রস্তাব করেছি।”
তিনি বলেন, “সম্প্রতি প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনের পিইসি সভায়ও তোলা হয়েছিল। সভায় ব্যয় যৌক্তিকীকরণে বিশ্লেষণের কথা বলা হয়েছে। এরপর আবারও প্রকল্পটি পিইসি সভায় তোলা হতে পারে।”
এক প্রশ্নের জবাবে এই প্রকৌশলী বলেন, “এখন প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া বা না দেওয়া সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ইচ্ছা।”
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “শেরেবাংলা নগর এলাকার জাতীয় সংসদসহ আগারগাঁও পর্যন্ত লুই কানের নকশায় আবাসন রয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য ৪৩ একরের এই প্লটে লুই কানের নকশা মেনেই আবাসনের ভবন নির্মাণ করা হবে।”
জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো অনুবিভাগের সদস্য এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, “পিইসি সভায় প্রকল্পটির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য কী পরিমাণ আবাসন চাহিদা রয়েছে, তা পর্যালোচনা করে প্রকল্প প্রস্তাব পুনর্গঠন করতে বলা হয়েছে।”
“এছাড়াও সরকারের কৃচ্ছ্র সাধনের পদক্ষেপের সঙ্গে এই প্রস্তাব সাংঘর্ষিক কিনা তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছি”, বলেন তিনি।
কী আছে প্রকল্প প্রস্তাবে
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রস্তবনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে রাজধানীতে প্রায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯১৫ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের বসবাসের জন্য আবাসন ফ্ল্যাট রয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ বা ১৩ হাজার ৫২টি। এই কারণে সরকারের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরকারি বাসা না পেয়ে বেশি ভাড়ার বেসরকারি বাসায় থাকতে হয়। এতে তারা আর্থিক অসুবিধায় পড়ছেন।
আবাসন সমস্যার সমাধানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা ৮ ভাগ থেকে ৪০ ভাগে উন্নীতকরণে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন রয়েছে বলেও প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রস্তাবনায় বলা হয়, এই প্রকল্পে ১২৫০ বর্গফুট, ১৫০০ বর্গফুট ও ১৮০০ বর্গফুট– এই তিন ক্যাটাগরির ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ১২৫০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটের জন্য ১০ তলা বিশিষ্ট ২০টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১৮১ কোটি টাকা।
১৫০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটের জন্য ১০ তলা বিশিষ্ট ভবন হবে ১১টি, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮৫ কোটি টাকা।
এবং ১৮০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটের জন্য ১০ তলা বিশিষ্ট ১১টি ভবন নির্মাণ করা হবে, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫৪ কোটি টাকা।
এছাড়া প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ২২০ কোটি টাকায় একটি কমিউনিটি ফ্যাসিলিটি জোন তৈরি করা হবে। ছয় তলা পাঁচটি ভবনে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, শপিংমল ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
কমিউনিটি সেন্টারের ছাদে ২ কোটি ৮২ লাখ টাকায় তৈরি করা হবে সুইমিং পুল। আর ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে লেকপাড় ওয়াকওয়ে নির্মাণের প্রস্তাবও রয়েছে এই প্রকল্পে। এছাড়াও ৮২ লাখ টাকায় নির্মাণ করা হবে দুটি বোট হাউজ। আর ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে লেকপ্লাজা।