Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

চট্টগ্রামে চিন্ময়ের প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ-সংঘর্ষ, আইনজীবী নিহত

প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে আদালতে নেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে আদালতে নেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার ও তাকে কারাগারে পাঠানো নিয়ে সকাল থেকেই উত্তপ্ত ছিল চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণ। বেলা গড়াতেই গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এরই মধ্যে উদ্ধার করা হয় এক আইনজীবীর রক্তাক্ত লাশ।

সাইফুল ইসলাম নামে এই আইনজীবী কীভাবে মারা গেছেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনও তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, নিহত সাইফুল কিছুদিন আগেই চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর পদে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার জামাল উদ্দিনের ছেলে।

গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রামের আদালতে চিন্ময় ব্রহ্মচারী।

সোমবার বিকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফেরার পথে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চট্টগ্রামে সনাতন জাগরণ মঞ্চ ব্যানারে সমাবেশের দিন জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে গত অক্টোবরে করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। রাতেই চিন্ময়কে সড়কপথে চট্টগ্রামে নেয় পুলিশ।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে চিন্ময়কে চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক তার জামিন নাকচ করে চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এরপর চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নেওয়ার জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলে পুলিশ। কিন্তু তার সমর্থকরা বিকাল ৩টা পর্যন্ত প্রিজন ভ্যান আদালত প্রাঙ্গণেই আটকে রাখে, যারা তাকে ‘চিন্ময় প্রভু’ বলে ডাকেন।

আদালত ভবনের প্রবেশমুখে রঙ্গম কনভেনশন হলের সামনে বিক্ষুব্ধ সমর্থকদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে র‌্যাব ও পুলিশ। লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এরপর উত্তেজনা আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

চিন্ময় কৃষ্ণের অনুসারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করে পুলিশ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
চিন্ময় কৃষ্ণের অনুসারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করে পুলিশ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

চিন্ময় কৃষ্ণের ভক্ত-সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন।

বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর আইনজীবী সাইফুলের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

লাশের সুরতহালের পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সাইফুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে।

বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ ও র‌্যাব। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ ও র‌্যাব। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

সংঘর্ষে আহত অন্তত ২০ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানান হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল মন্নান।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আহতদের মধ্যে কেউ মাথায় আঘাত পেয়েছেন, কেউ হাতে, কেউ শরীরের অন্যান্য জায়গায় আঘাত পেয়ে আহত হয়েছে। তাদেরকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”

আদালত প্রাঙ্গণের এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে নগরজুড়ে আতঙ্ক তৈরি হয়। শহরের নানা সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। পরিস্থিতি সামাল দিতে সন্ধ্যায়ই চট্টগ্রামে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। সেইসঙ্গে টহল দিচ্ছে সেনা সদস্যরাও।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নগরীর চেরাগি পাহাড় মোড়ে জড়ো হচ্ছিলেন।

আইনজীবীদের আদালত বর্জন কর্মসূচি

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার প্রতিবাদে বুধবার আদালত বর্জন কর্মসূচি দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি।

সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন বলেন, “আমরা সমিতির পক্ষ থেকে জরুরি মিটিং ডেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি মহানগর দায়রা জজ, জেলা দায়রা জজ, মহানগর হাকিম এবং মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের সকল কার্যক্রম আমরা বুধবার সাসপেন্ড ঘোষণা করছি। সর্বস্তরের আইনজীবীদের এ প্রতিবাদে শামিল হওয়ার জন্য আমরা অনুরোধ করেছি।”

তিনি আরও জানান, নিহত সাইফুলের জানাজা বুধবার সকালে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত