‘অচেনা সাগরে ডিঙ্গা’ ভাসালেন দুই বাংলার গণমানুষের শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়। ‘বাংলায় গান গাওয়ার গর্ব’ নিয়ে ৮৩ বছর বয়স্ক এই শিল্পীর প্রয়াণ হলো ভারতের কলকাতার একটি হাসপাতালে।
শনিবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবর জানিয়ে বলে, এসএসকেএম হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে গুরুতর অসুস্থ হয়ে বছরের শুরু থেকেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, নাক-কান-গলার জটিলতা নিয়ে ভর্তির পর এক পর্যায়ে তার জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বোর্ড প্রতুলের অস্ত্রপচারের সিদ্ধান্ত নেয়। অস্ত্রোপচারের পর হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। এর পাশাপাশি নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত হন তিনি। কাজ করছিল না অ্যান্টিবায়োটিক।
১৯৪২ সালে বাংলাদেশের বরিশালে জন্ম নেন প্রতুল মুখোপাধ্যায় । দেশ বিভাগের সময় পরিবারের সঙ্গেই চলে যান ভারতে। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চুঁচুড়ায় কাটে শৈশবের বাকিটা।
ছোটবেলা থেকেই প্রতুল ঠিক করে নিয়েছিলেন সুরের জগতে হাঁটবেন তিনি। মাত্র ১২ বছর বয়সে কবি মঙ্গলচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ধান কাটার গান গাই’ কবিতায় প্রথম সুর দেন তিনি ।
গায়কী ও সুরে প্রতুল তৈরি করেছিলেন ভিন্ন ঘরানা। নিজে লিরিকস লিখে তাতে সুর-সংযোজন ঘটিয়েছেন তিনি অনেকবারই। তবে সংখ্যার নিরিখে আরও বেশি সুরারোপ করেছেন অন্যদের কবিতায়। এমন এমন কবিতায় তিনি সুর দিয়েছেন, যেগুলোর নিবিড় পাঠে গান হয়ে ওঠার সামান্য সম্ভাবনাও একসময় কল্পনার অতীত বলেই মনে হতো। তিনি সুর দিয়েছেন- বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অরুণ মিত্র, মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ- এর মতো কবিদের কবিতায়।
প্রতুল মনে করতেন, সৃষ্টির মুহূর্তে লেখক-শিল্পীকে একা হতে হয়। তারপর সেই সৃষ্টিকে যদি মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যায়, তাহলেই সেই একাকিত্বের সার্থকতা। আর তখনই সেই একক সাধনা সকলের হয়ে ওঠে।
গান পরিবেশনে হারমোনিয়াম, তবলা এমনকি কোনও বাদ্যযন্ত্রেরই প্রয়োজন হতো না প্রতুলের। খালি গলায় ‘টেনর-কণ্ঠের’ ‘অসাধারণ পরিবেশন-নৈপুণ্য’ প্রতুলকে ভিন্ন মাত্রা। তিনি মঞ্চে গাইলে পুরো মঞ্চই গাইতো, রাজপথে গাইলে পুরো রাজপথ।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে প্রতুল মুখোপাধ্যায় তার ‘আমি বাংলার গান গাই’ গানটি দিয়ে পরিচিত।
কিন্তু সংগীত ও অধিকার সচেতন রাজনৈতিক কর্মীরা অনেক আগে থেকেই প্রতুলকে চেনেন। ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’, ‘তোমাকে দেখেছিলাম’, ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’, ‘যেতে হবে’, ‘স্বপনপুরে’, ‘ওঠো হে, ‘অনেক নতুন বন্ধু হোক’, ‘হযবরল’, ‘দুই কানুর উপাখ্যান’, ‘আঁধার নামে’ প্রতুলের গাওয়া এইরকম আরও কিছু গান- সংগীতপ্রেমী ও রাজনৈতিক অধিকারকর্মীদের প্রাণে জায়গা করে নিয়েছে।