সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে সম্প্রতি হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র পক্ষের আবেদনের শুনানি মুলতবি করেছে আদালত।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ এই শুনানির বিষয়ে আদেশে বলে ‘নট টুডে’।
আদালত শুনানি মুলতবি করায় কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে এদিন শাহবাগে মোড় অবরোধ করে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে বিক্ষোভ চলে; আন্দোলনরতরা দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন। তারা এই দুই দিনে অনলাইন গণসংযোগ, ক্লাস পরীক্ষা বর্জনসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে শুরু হওয়া এ অবরোধ সন্ধ্যা ৬টায় প্রত্যাহার করা হয়।
দীর্ঘ সময় সড়ক অবরোধ থাকায় শাহবাগ ও আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। আন্দোলনকারীরা সরে যাওয়ার পর সেসব সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।
আগে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।
কোটা সংস্কারে আন্দোলনের পর ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক পরিপত্রে সরকারি চাকরিতে ৯ম ও ১৩ম গ্রেডে (পূর্বতন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
এই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন।
সে রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। সেই রুল যথাযথ ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ বলে গত ৫ জুন রায় দেয় হাইকোর্ট।
এই রায় স্থগিত চেয়ে গত ৯ জুন রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে ৪ জুলাই পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে বিষয়টি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করে দেয় চেম্বার জজ আদালত।
শুনানি মুলতবি করল আদালত
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা নিয়ে ৫ জুন দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র পক্ষের আবেদনের শুনানি বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগে হওয়ার দিন ছিল।
তবে শুনানিতে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে বলে, “আপাতত হাইকোর্টের রায় যেভাবে আছে, সেভাবে থাকুক। রায় প্রকাশ হলে আপনারা নিয়মিত আপিল দায়ের করেন। আমরা শুনব।”
এ-সংক্রান্ত রিট আবেদনের পক্ষে নিযুক্ত সিনিয়র আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী আজ নেই বলে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জহিরুল ইসলাম এই শুনানি ‘নট টুডে’র আবেদন করেন। এদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আর রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু।
শাহবাগে আন্দোলন
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের পর এই ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন পুনরায় শুরু হয়। গত ৯ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে। সেই কর্মসূচি থেকে ৩০ জুনের মধ্যে পরিপত্র পুনর্বহালের দাবি তোলা হয়।
সেই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও গত চার দিন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলন চলছে। বুধবারের পর বৃহস্পতিবারও শাহবাগে সড়ক অবরোধ হয়েছে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও এই ব্যানারে সমাবেশ হয়েছে।
কোটা নিয়ে শুনানি আদালত মুলতবি করায় পুনরায় গণআন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা।
এদিন বেলা ১১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে। আন্দোলনকারীরা নীলক্ষেত, ভিসি চত্বর, টিএসসি রাজু ভাস্কর্য হয়ে অবস্থান নেয় শাহবাগ মোড়ে।
দুপুর ১টা নাগাদ বৃষ্টি শুরু হলেও শাহবাগ ছাড়েনি আন্দোলনকারীরা। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
আন্দোলনকারীদের একজন বলেন, “আমরা হাইকোর্টের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল ছিলাম, কিন্তু আস্থা রাখেনি। এখন আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ কোটা প্রথা বাতিল না করা পর্যন্ত কিছুতেই রাজপথ ছাড়ব না। কারণ, মেধাবীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।”
আরেকজন বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজ মর্মাহত, স্বাধীন দেশে এত বড় বৈষম্যের পথে মেধাবীরা, তা ভাবনারও অতীত।”