Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ‘গণধোলাই’ দিতে বললেন রাঙ্গুনিয়ার ওসি

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি আহসান হাবিব খান।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি আহসান হাবিব খান।
[publishpress_authors_box]

আগে পেটান, তারপর থানায় দিন- চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার ওসির এমন এক বক্তব্যে চলছে তোলপাড়।

ওসি আহসান হাবিব খান আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার এই বক্তব্য দিয়েছেন রাঙ্গুনিয়ার একটি ক্লাবে বিএনপি নেতা-কর্মী পরিবেষ্টিত অবস্থায়। তারা হাততালি দিয়ে সমর্থনও করছিলেন ওসিকে।

রাষ্ট্রীয় বাহিনীর একজন কর্মকর্তা হিসাবে আহসান হাবিব এমন বক্তব্য দিতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর তিনি বলেছেন, বক্তব্য দেওয়ার সময় মুখ ফসকে ওই কথাগুলো বেরিয়ে গেছে।

আহসান হাবিব সপ্তাহ খানেক আগে রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি হিসাবে যোগ দেন। এরপর ওই সভায় বক্তব্য রেখেছিলেন তিনি। সোমবার তার সেই বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ফেইসবুকে।

স্থানীয় এক বিএনপি নেতার আয়োজনে সেই অনুষ্ঠান হলেও তাতে কোনও ব্যানার ছিল না। তবে মঞ্চ এবং সামনে বিএনপি, যুবদল নেতা-কর্মীদের দেখা গেছে ভিডিওতে।

রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ওসমান গণি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ৫ আগস্টের পর সফরভাটায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির খুব অবনতি হয়েছে। তা নিয়ে আয়োজিত সেই সভায় ওসি বক্তব্য দিয়েছিলেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

ওসি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন যুদ্ধাপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে।

ওই এলাকায় এক সময় সংসদ সদস্য ছিলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সর্বশেষ সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।

ওসি আসহান হাবিব বলেন, “যারা ৫ আগস্টের আগে বিভিন্ন নিরীহ মানুষের বাড়িঘর ভাংচুর করেছে, মারপিট করছে, দখল করেছে, তাদের দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ায় ঠাঁই নেই। তাদেরকে গণধোলাই দিয়ে থানায় নিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঠাঁই হবে না। তাদরকে গণধোলাই দিয়ে থানায় নিয়ে আসতে হবে।”

বক্তব্য দেওয়ার সময় মাথার টুপি সামনের টেবিলে খুলে রাখলেও পুলিশের পোশাক গায়েই ছিল আহসান হাবিবের। ‘গণধোলাই’ বলার সময় তিনি নিজের দুই হাত চেপে জোর দিয়ে বলছিলেন। আর বিএনপি নেতা-কর্মীরা হাততালি দিচ্ছিলেন।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনাদের এই পর্যায়ে যদি আজ আওয়ামী লীগ থাকত, তাহলে আপনাদের ঠ্যাং-ঠোং (হাত-পা) ল্যাংড়া হয়ে যেত।”

ববক্তব্যে নিজেকে ‘বিএনপির লোক’ হিসাবে তুলে ধরেন এই পুলিশ কর্মকর্তা; জানান যে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইলে।

‘খাঁটি’ বিএনপি নেতা-কর্মীদের তালিকা চেয়ে আহসান হাবিব বলেন, “আমাদের কিছু বিএনপির লোক আওয়ামী লীগের সাথে মিশে গেছে। অরিজিনাল ওয়ার্ডভিত্তিক বিএনপি নেতা-কমীর্দের একটা লিস্ট আমি চাই।

“অপরাধ ঘটলে সবকিছু থানার ওসির পক্ষে সম্ভব না। কিছু দায়িত্ব আপনাদেরও নিতে হবে। যে লোকটা সৎ এবং যোগ্য তাকে দিলে সুনাম হবে, বিএনপির সুনাম হবে। সেটা করতে হবে। চাঁদাবাজি করা যাবে না।”

বিএনপি নেতা-কর্মীদের মামলা করতে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, “আমার এক ভাই (বিএনপি) বলেছে, মামলা নিচ্ছে না পুলিশ। আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি একটা সঠিক পরামর্শ দেব। প্রয়োজনবোধে কোর্টে আলাপ করব মামলাটি কীভাবে এস্টাবলিশ করা যায়। তার জন্য আমি চেষ্টা করব।”

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে আহসান হাবিব বলেন, “আওয়ামী লীগের সময়ে ধর্ষণ হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ হয়েছে। বিশ্বের অনেক নজির বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে হয়েছে। যারা সাধারণ মানুষকে ১৬ বছর ঘরছাড়া করেছিল, নির্যাতন করছিল।”

ওসির এমন বক্তব্যের সমালোচনা ওঠার প্রেক্ষাপটে বিএনপি নেতা ওসমান গণিও বলেন, এলাকার পরিস্থিতি সামাল দিতেই তিনি ‘কঠোর ভাষায়’ বক্তব্য দিয়েছেন।

এই বক্তব্যের বিষয়ে সকাল সন্ধ্যা জানতে চাইলে ওসি আহসান হাবিব প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে স্বীকার কলে বলেন, এটা অনিচ্ছাকৃত।

“অনেক বক্তব্যের মধ্যে এটা বলেছি। ভুলবশত, অনিচ্ছাকৃত ছিল।”

এবিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ রেখে তিনি বলেন, “এটা আসলে একটু ইয়ে হয়ে গেছে আর কী। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে একটু দেখবেন।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত