যিনি গান বাঁধেন, তিনিই আবার বিরিয়ানি রাঁধেন। তারপর নিজ কণ্ঠে খেয়াল পরিবেশনের মতো সেই বিরিয়ানি নিজ হাতে পাতে তুলে দেন সবাইকে। এই রন্ধন এবং ধ্রুপদী শিল্পী হলেন- ওস্তাদ রশিদ খান।
সোশাল মিডিয়াতে তার সঙ্গে পুরনো একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন ‘মীরাক্কেল’ খ্যাত সঞ্চালক মীর আফসার আলী। টিভি চ্যানেল কালার্স বাংলার ‘সঙ্গীতের মহাযুদ্ধ’ রিয়ালিটি শোতেও সঞ্চালক ছিলেন মীর। সেদিন শুটিংয়ের ফাঁকে গ্রিনরুমে খাওয়াদাওয়া চলছিল। হাঁড়ি থেকে তুলে বিরিয়ানি থালায় বেড়ে দিচ্ছিলেন রশিদ খান; মীরের জন্য।
মীর তখন মজা করে বলছিলেন, “ওস্তাদ রশিদ খান… নিজে খান আর অন্যদের খাওয়ান। বিরিয়ানি কাল রাত আড়াইটের সময় বানিয়েছিলেন। এবং তিনি এখন সার্ভ করছেন।”
সবাই যখন শোকে তখন স্মৃতি থেকে তুলে এনে রশিদ খানের সাথে কাটানো ওই মুহূর্তকে সামনে নিয়ে এসে শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানান মীর।
শত বছরে একজন রশিদ খান আসেন
মোটে এগারো বছর বয়সে মঞ্চে উঠে গান গেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন রশিদ খান।
তবে জয়পুর-আত্রৌলি ঘরানার খেয়াল শৈলীর ভারতীয় শাস্ত্রীয় গায়িকা বিদুষী শ্রুতি সাদোলিকার কাটকার একবার বলেছিলেন, “রশিদ খানের মঞ্চে অভিষেক হয় নয় বছর বয়সে।
”অল্প বয়সী ছেলেটি বড্ড সাবলীলভাবে সরগম গেয়ে বোদ্ধাদের নির্বাক করে দিয়েছিল। সেদিন তার গায়ে ছিল শেরওয়ানি। মাথায় উলের টুপি। গানে মগ্ন রশিদ মাথা নাড়লেই টুপির গোছা দুলে উঠত।”
এরপর তো কয়েক যুগ ধরে তার কণ্ঠে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে রয়েছেন শ্রোতারা।
৯ জানুয়ারি বিকেলে তার মারা যাওয়ার খবর জানাজানি হতে আরও একবার হতবাক হলো সবাই। বেঁচে থাকলে এ বছর জুলাই মাসে ৫৬ বছর বয়স হতো রশিদ খানের।
“ওস্তাদ রশিদ খানের এই অসময়ে চলে যাওয়াটা লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি সংগীতপ্রেমীর কাছে একটা অপূরণীয় ক্ষতি।”
সকাল সন্ধ্যার কাছে এ কথা বলছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রান্তর বাংলা ব্যান্ডের লিড ভোকাল অর্নব সেন। এই মৃত্যু সংবাদ তাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে দুই দশক আগে।
প্রথমবার রশিদ খানকে শোনার স্মৃতি মনে করে অর্নব সেন বলেন, “২০০৪ সাল তখন। আমার এক দাদা একদিন একটা ক্যাসেট হাতে দিয়ে বললেন গানগুলো শুনতে।
“ক্যাসেটে লাল রঙের প্রচ্ছদে ‘নেয়না পিয়া সে’ অ্যালবামটা রিলিজ হয়েছিল-২০০৩ সালে। আমি শুনলাম এর পরের বছর। ওস্তাদ রশিদ খানের গান শুনে মনে হলো গানবাজনা বারবার নতুন করে শুরু করতে হয়, শিখতে হয়, কারণ এটা প্রতি মুহূর্তে রূপ বদলায়।”
রশিদ খানের সেই অ্যালবামের ‘এরি সখি’ গানটি ‘ভীষণ প্রিয়’ অর্নব সেনের।
“উনার এরকম কত যে গান আমরা সামনে শুনতে পেতাম… মানে কত যে গান আমরা হারালাম! উনার থেকে আমরা যা যা পেয়েছি যা যা শুনেছি প্রত্যেকটা গানই একেকটি কোহিনূর হিরে।”
ওপার বাংলার সংগীত শিল্পী অর্নব সেনের কাছে ওস্তাদ রশিদ খান ’আরেকজন শিল্পী গড়ার মানুষ’।
“উনার কারণে ক্লাসিকাল মিউজিক ভীষণভাবে ছড়িয়ে গেছে। শিল্পী তো হাজারো-লাখো হয়। কিন্তু ওস্তাদ রশিদ খানের মত শিল্পী গড়ার কারিগর প্রতি একশ বছরে একজনই জন্মায়।”
রামপুর-সাহসওয়ান ঘরানার রশিদ খানের গায়কী প্রসঙ্গে একই মনোভাব বাংলাদেশি শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী অসিত দে-র।
“উনি নিজের একটি গায়কীও গড়ে তুলেছিলেন। এই গায়কী আসলে ব্যক্তিত্বেরও বিষয়। এমন গায়কী ধারণ করার ক্ষমতা, কণ্ঠ আর মেধা … খুব মুশকিল; কিন্তু ওস্তাদ রশিদ খানের তা ছিল।”
শুরুতে ওস্তাদ নিসার হুসাইন খানের কাছেই তালিম নিয়েছিলেন রশিদ খান। মামা নিসার হুসাইন কলকাতায় এসআরএ অর্থাৎ আইটিসি সংগীত রিসার্চ একাডেমিতে যোগ দিলে তিনিও এখানে চলে আসেন।
এসআরএ প্রশিক্ষক শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী ওমকার দাদারকার একবার বলেছিলেন, “রশিদ যখন দুই একর জায়গার এসআরএ ক্যাম্পাসে পা রাখেন, তখন তার বয়স ছয় বছর।”
ছায়ানটের শাস্ত্রীয় সংগীত প্রশিক্ষক অসিত দে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “উনাকে নিয়ে এক কথায় বলতে হয়, উপমহাদেশীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের ইতিহাসে টপ কয়েকজন ভোকাল পারফরমারদের মধ্যে ওস্তাদ রশিদ খান একজন।
“উনার সুরের দখল, উনার গায়কীতে সংগীতের রসের কমতি ছিল না। মিউজিশিয়ান বা ভোকালিস্ট হিসেবে শাস্ত্রীয় সংগীত গায়কীতে যা যা থাকতে হয় সব উনার ছিল। এরকম আর্টিস্ট আগামী একশ বছরেও আসবে কি না জানি না! খুব মুশকিল হবে এরকম মানুষ পাওয়া।”
রশিদের গানে ঈশ্বর দর্শন
হিন্দুস্তান শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রাচীন ঘরানা হলো গোয়ালিয়র ঘরানা। এই ঘরানার একজন সংগীতজ্ঞ ৯০ বছর ছুঁইছুঁই পণ্ডিত লক্ষণ কৃষ্ণরাও পণ্ডিত। তিনি রশিদ খানের গায়কী নিয়ে কী ভাবতেন সে কথা জানালেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের অতিথি শিক্ষক সোহানা আহমেদ।
ভারতে ‘গুরু-শিষ্য পরম্পরায় গান শিখতে যাওয়ার’ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, “দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ের একটা ঘটনা বলি।
“একদিন ক্লাসে আমাদের শিক্ষক গোয়ালিয়র ঘরানার পণ্ডিত এলকে পণ্ডিত বলেছিলেন, ওর (রশিদ খান) গান শুনলে আমার মনে হয় ভগবানের দর্শন পাওয়ার জন্য মন্দিরে যাওয়ার প্রয়োজন নাই। ওর গান শুনলেই ভগবান দর্শন হয়ে যায়।”
রশিদ খান শাস্ত্রীয় সংগীতের খেয়ালের ধারাকে ‘অনন্য উচ্চতায়’ নিয়ে গিয়েছেন। তাই এই শিল্পীর গান শুনে ‘অন্যরকম আনন্দ’ পেতেন সোহানা আহমেদ।
“তার (রশিদ খান) গায়কীতে কখনও ইন্দোর ঘরানার প্রতিষ্ঠাতা ওস্তাদ আমির খানের জলদ সপাট ও কূটতানের ছায়া; কখনও কিরানা ঘরানার প্রতিষ্ঠাতা আবদুল করিম খানের সপাট ও মীড়ের কাজ। আবার কখনও ওস্তাদ নিসার হুসাইন খানের আঁকাবাঁকা চলনের জটিল পারমুটেশন ও কম্বিনেশন।”
একজন ‘জাতশিল্পী’ রশিদ খানের গায়কীকে এভাবেই উপলব্ধি করেন সোহানা আহমেদ।
রশিদ খানের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বলা আছে, রামপুর-সাহসওয়ান ঘরানা আর গোয়ালিয়র ঘরানা অনেকখানি মিল রাখে। এই দুই ঘরানাই মধ্যম থেকে ধীর লয়, দরাজ গলা এবং জটিল ছন্দে গান এগিয়ে নিয়ে যায়।
বিলম্বিত খেয়াল পরিবেশনে রশিদ খানের ছিল ব্যতিক্রমী দক্ষতা।
ওস্তাদ ফুলঝুরি খানের ছেলে তবলা বাদক ইলিয়াস খান এই প্রসঙ্গে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বিলম্বিত লয় মানে একতাল সাধারণত… অনেক ধীর লয়ে গাওয়ার ধরন আসলে। বিলম্বিত লয়ে গেয়ে গলার কারুকাজ দিতেন ওস্তাদ রশিদ খান।“
স্মৃতিতে রশিদজী’র আশীর্বাদ
জীবনের প্রথম মঞ্চ পরিবেশনার পরপরই রশিদ খানের আশীর্বাদ পেয়েছিলেন ইলিয়াস খানের ছোট মেয়ে ইসরা ফুলঝুরি খান।
২০১৬ সালে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে বসেছিল বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব। তখন মোটে সাড়ে পাঁচ কি ছয় বছর বয়স ইসরা ফুলঝুরি খানের। ওই বয়সেই মঞ্চে দলীয় পরিবেশনায় সরোদ বাজান তিনি।
“ওটা আমার প্রথম পরিবেশনা ছিল। আমি, বাবা আর বড় বোন ছিলাম। আমরা রাগ কাফীর উপরে দলীয় পরিবেশনা করেছিলাম মঞ্চে। তো স্টেজ থেকে নামার পর একদম সামনেই ছিলেন রশিদ জী আর আমাদের গুরুজী।”
ভারতীয় সরোদ বাদক পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদারের কাছে তালিম নিয়েছিলেন ইসরা। তার ‘গুরুজী আর রশিদ জী দুজন বন্ধুর মতো’ বলেও জানালেন সকাল সন্ধ্যাকে।
“আমি স্টেজ থেকে নেমে আসার পর গুরুজী আর তার পাশে রশিদ জীকে পাই। উনাকে সালাম দেব এই বুদ্ধিটুকু আমার ছিল না তখন। গুরুজী বলে দিতে সাথে সাথে আমি সালাম করি। রশিদ জী আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, খুব ভালো বাজিয়েছো। রশিদ জী বলেছিলেন, আরও প্র্যাকটিস করো; তোমার জন্য দোয়া রইল।”
তবে রশিদ জীর সাথে তখনকার কোনো ছবি তুলে রাখা নেই বলে এখন আফসোস করলেন ইসরা।
ইলিয়াস খানের বড় মেয়ে সরোদ বাদক ইলহাম ফুলঝুরি খানের রয়েছে মজার এক স্মৃতি।
২০১৭ সালে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব হয় আবাহনী মাঠে। সেবার যে খুব শীত পড়েছিল তা এখনও মনে রেখেছেন ইলহাম। তখন তিনি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তেন।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বললেন, “আসরের শেষ দিন ছিল আমাদের পরিবেশনা। সেবার আমরা রাগ ভূপালী বাজিয়েছিলাম। আমাদের পরেই মঞ্চে উঠবেন রশিদজী। সেদিন রশিদজীর অনুরোধে তার ছেলেও মঞ্চে ওঠে।”
ওই দিনটি যেন চোখের সামনে আবারও ভেসে উঠেছে এমনভাবে ইলহাম বলে গেলেন।
“ওটা ৩০ ডিসেম্বর ছিল। ওইদিন এতো বেশি কুয়াশা ছিল যে ঠিক মত দেখাও যাচ্ছিল না। মাঝে মাঝেই ঘন কুয়াশায় ঘিরে যাচ্ছিল সব। সময়টা রাত ছিল। এরমধ্যে রশিদজীর ছেলে পিংক কি হালকা রঙের কুর্তা পরেছিলেন। তাতে আর শীত মানছিল না তার।”
“সেদিন আমি কুর্তার উপর কোটি পরেছিলাম। এক সাইজ বড়ই ছিল আমার গায়ের কোটি। তো বেঙ্গলের তুষার মামা বললেন, রশিদজীর ছেলে তো স্টেজে উঠবে। কিন্তু বেচারার অনেক শীত করছে। তোমার কোটিটা দেওয়া যাবে? তো আমি গায়ের কোটিটা খুলে তুষার মামাকে দেই। রশিদজীর ছেলে তখন একটু সামনেই ছিল।”
পরে ওই কোটি রশিদ খানের ছেলের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছিলেন তো?
এ প্রশ্নের জবাবে হাসতে হাসতে ইলহাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ না না, আমি চাইতে যাইনি। অনুষ্ঠান শেষে আমি তুষার মামার কাছ থেকে আমার ওই কোটি ফেরত পাই। তবে গত বছর ইনস্টাগ্রামে রশিদজীর ছেলে টেক্সট করেন। টুকটাক কথার মাঝে কোটি নিয়ে তখন আবার কথা তুললে উনি অনেক ধন্যবাদ জানান আমাকে।”
প্রথা ভেঙ্গে মঞ্চে রশিদ কন্যারা
ভারতীয় সংগীতে সুর সম্রাট মিয়া তানসেনের ৩১তম প্রজন্ম রশিদ খান। সংগীত জগতের একজন জয়িতা বসু খান তার স্ত্রী। এই যুগলের তিন সন্তান- দুই মেয়ে সুহা খান ও শাওনা খান এবং এক ছেলে আরমান খান।
আরমান খান বাবার কাছেই তালিম পেয়েছেন। কিন্তু পরিবারের মেয়েদের জনসম্মুখে গাওয়ার নজির ছিল না।
“কিন্তু ওরা যখন গাইতে চাইল, আমি চেয়েছিলাম ওদের এই স্বপ্ন বেঁচে থাকুক”; মেয়েদের গান নিয়ে এ কথা বলেছিলেন বাবা রশিদ খান।
প্রথা ভেঙ্গে দুই মেয়েকে গান শেখাতে শুরু করেন তিনি। সুফি গানে ১৫ বছর বয়সে প্রথম সবার সামনে গান করেন সুহা খান এরপর ২০১৫ সালে রশিদ খান তার দুই মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে মঞ্চে সবার তুমুল প্রশংসা কুড়ান।
রশিদ খানের কন্যা সুহা খান সুফি গানে নিজেকে খুঁজে পান। আর ছোট কালে রেওয়াজে বসতে ফাঁকি দিলেও তরুণ বয়সে নিজের ব্যান্ড ‘এশিয়ান হিট’ গড়ে নেন কন্যা শাওনা।
রশিদ খানের প্রিয় গান ‘মুন্নি বদনাম হুয়ি’!
পেঁয়াজ কাটতে কাটতে মাঝে মাঝেই গান গাইতেন রশিদ খান; এ কথা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন শাওনা। একজন শিল্পী হরহামেশাই গান করবেন। তবে শাওনা বলেছিলেন, রান্না করতে করতে রশিদ খান খুব করে ‘মুন্নি বদনাম হুয়ি’ গাইতেন।
একবার ‘হেই সেক্সি লেডি’ শুনছিলেন শাওনা। তখন হুট করে গানের তালে তালে নাচ ধরেন রশিদ খান। আর সেই নাচ দেখতে নাকি বাড়িতে লোকজন জমে গিয়েছিল।
শিল্পীর মৃত্যু নেই তবু থাকে আফসোস …
“ওস্তাদজীর মৃত্যু সংবাদে খুব কষ্ট পেয়েছি”, সকাল সন্ধ্যাকে এ কথা বললেন বিজ্ঞাপন-লেখক ও চিত্রনাট্যকার সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন।
শেষ সময়ে মাসখানেক ধরে কলকাতায় হাসপাতলে ভর্তি ছিলেন রশিদ খান।
“উনি যেদিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি হলেন ওদিন থেকেই আমি খোঁজখবরের মধ্যে ছিলাম। রোজ খোঁজ করছিলাম ওস্তাদজীর কী অবস্থা জানতে। ওনার শরীরটা খারাপ হচ্ছিল একটু একটু করে। কিন্তু দুঃখ হচ্ছে যেদিন উনি মারা গেলেন সেদিনই খরবটা নিতে পারিনি। আরেকজনের কাছ থেকে শুনলাম।”
গাউসুল আলম শাওন বাংলাদেশে কোক স্টুডিও বাংলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান গ্রে বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ছিলেন। এই অনুষ্ঠানে গাইতে আসার কথা চলছিল রশিদ খানের সাথে।
“কোক স্টুডিও বাংলার সিজন ওয়ানে আমার মনে আছে আমি অর্ণবকে (সংগীত শিল্পী শায়ান চৌধুরী) বললাম, একটা গান যদি ওস্তাদ রশিদ খানের সাথে আমরা করতে পারি। অর্ণব একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস বলেছিল। যেখান থেকেই আসলে আলাপটা শুরু। আমরা রবীন্দ্র সংগীত করতে চেয়েছিলাম, যেটার সাথে ‘মেঘ রাগে’ উনি আলাপ করবেন। এরপর আমরা কলকাতায় আলাপ করলাম। শুরুতে উনাকে পাওয়া দুষ্কর ছিল। তারপর উনার স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করি আমরা। কথাবার্তা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল।”
কোক স্টুডিও বাংলার প্রথম সিজনে আসার কথা পাকা হলেও কোভিড পরিস্থিতিতে রশিদ খানের আসার পরিকল্পনা বাতিল হলো।
“তবে আমাদের মধ্যে অলিখিত একটা কথা ছিল, পরে গানটা করবো। কিন্তু সেই পরে আর আসেনি”- বলে আফসোস করেন গাউসুল আলম শাওন। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “এরপর সিজন টুতে এসে আসলে আমাদেরই ব্যর্থতা, উনার সাথে কাজ করার কথা ভাবা হয়নি।
“সিজন থ্রি এলে আমরা আবার ভাবি ওস্তাদজীকে আবার আনা যায়। যদিও সেটা আর হয়ে উঠল না…। এই দুঃখ আমাদের আর কখনই যাবে না।”
রবীন্দ্রসংগীত এবং হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় বন্দিশের যুগলবন্দি অ্যালবাম করেছিলেন ওস্তাদ রশিদ খান আর ভারতীয় বাঙালি কণ্ঠশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। ’টেগোর অ্যান্ড রাগাস’ ছিল রশিদ খান আর ড. ইমতিয়াজ আহমেদ যুগলবন্দি।
‘নজরুলের গান করার খুব ইচ্ছে ছিল রশিদ খানের’- সকাল সন্ধ্যাকে জানালেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। এই বিষয়ে দুজনের আলাপও হয়েছিল।
“খুব বেশি আগের কথাও নয়; ২০২১ কি ২০২২ সালেই হয়েছিল”, বললেন সঙ্গীতশিল্পী লুভা নাহিদ চৌধুরী।
“রশিদ ভাইয়ের সাথে আলাপে বলেছিলাম যে, আপনি রেকর্ড শুনে করেন না। বাংলাদেশে যারা সঠিক সুরে নজরুলের গান গাইছে, ওরা মিলে বসলে আপনি কোনগুলো গাইতে চান ঠিক করা যাবে।”
সেই এক সঙ্গে বসা আর হয়ে ওঠেনি তাদের। সেই আফসোস নিয়ে লুভা নাহিদ চৌধুরী বললেন, “এরকম চলে যাবেন সেটা তো আর ভাবিনি। এখন মনে হচ্ছে উনার কণ্ঠে নজরুলের গান তো শুনতে পারলাম না!”
প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন আইরিন সুলতানা এবং সৈয়দ ফরহাদ।
আরও পড়ুন