যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৩১ জন অংশ নিচ্ছেন; যাদের মধ্যে ৯ জনই নারী।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি, লেবার পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টি (লিবডেম), গ্রিন পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন নিয়ে ও স্বতন্ত্র হিসেবে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র ব্যানারে নির্বাচন করলেও প্রার্থীদের বড় একটি অংশ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ভোটারদের ওপর ভরসা রাখছেন। ফিলিস্তিন ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।
৩১ প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র ১১ জন। বাকিদের মধ্যে লেবার পার্টি থেকে ৮ জন, কনজারভেটিভ পার্টি থেকে ২ জন, ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে ৫ জন, গ্রিন পার্টি থেকে ২ জন, লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টি (লিবডেম) থেকে ১ জন, রিফর্ম পার্টি থেকে ১ জন ও স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) থেকে ১ জন লড়ছেন।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের ৬৫০ আসনে আগামী ৪ জুলাই এই নির্বাচন হবে। নির্বাচনে চারটি আসনে বাংলাদেশিদের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশিরাই।
লন্ডনে বাংলাদেশি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসনে ৫ জন, ইলফোর্ড সাউথ আসনে ৫ জন, স্ট্র্যাটফোর্ড অ্যান্ড বো আসনে ৩ জন এবং পপলার এন্ড লাইম হাউস আসনে ২ জন করে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
![](https://www.shokalshondha.com/wp-content/uploads/2024/06/Tulip55-1024x771.jpeg)
দলীয় প্রার্থী যারা
লেবার পার্টির মনোনয়ন পেয়ে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসনে রুশনারা আলী, হ্যাম্পস্টেট অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক, পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসনে আপসানা বেগম, ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে রূপা হক, গর্ডন অ্যান্ড বুচান আসনে নুরুল হক আলী, উইথাম আসনে রুমি চৌধুরী, সাউথ নর্দাম্পটন আসনে রুফিয়া আশরাফ ও ব্রিগ ইম্মিংহাম আসনে নাজমুল হোসেন লড়ছেন।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে এবার ২ জন মনোনয়ন পেয়েছেন। আতিক রহমান টটেনহাম আসনে ও সৈয়দ শামীম আহসান ইলফোর্ড সাউথ থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
ওয়ার্কার্স পার্টির মনোনয়নে ইলফোর্ড সাউথ আসনে গোলাম টিপু, বেডফোর্ড আসনে প্রিন্স ছাদিক চৌধুরী ও হকনি সাউথ সরডিচ আসনে মোহাম্মদ সাহেদ হোসাইন, সেল ওয়েস্ট আসনে ফয়সল কবির ও ম্যানচেস্টার রুসলম আসনে মোহাম্মদ বিলাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গ্রিন পার্টির প্রার্থী হিসেবে ইলফোর্ড সাউথ আসনে সৈয়দ সিদ্দিকী ও ওল্ডহাম ওয়েস্ট রস্টন আসনে সৈয়দ সামসুজ্জামান শামস লড়ছেন। ইলফোর্ড সাউথ আসনে রিফর্ম পার্টির মনোনয়নে নির্বাচন করছেন রাজ ফরহাদ।
লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির (লিবডেম) মনোনয়নে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসনে রাবিনা খান নির্বাচন করছেন। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) মনোনয়নে ডানফার্মলাইন আসনে নির্বাচন করছেন নাজ আনিস মিয়া।
![](https://www.shokalshondha.com/wp-content/uploads/2024/06/Attic4-1024x614.jpg)
স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসনে আজমল মাসরুর, সাম উদ্দিন ও সুমন আহমদ, পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসনে এহতেশাম হক, স্ট্র্যাটফোর্ড অ্যান্ড বো আসনে ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, নিজাম আলী ও হালিমা খাতুন, ইলফোর্ড সাউথে নূর জাহান বেগম, হেলবন অ্যান্ড পেনক্রাস আসনে ওয়াইস ইসলাম, ব্যাক্সহিল অ্যান্ড ব্যাটল আসনে আবুল কালাম আজাদ ও ওল্ডহাম ওয়েস্টে রাজা মিয়া নির্বাচন করছেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী নেতৃত্ব
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার নারী বর্তমানে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তারা হলেন রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক, রুপা হক ও আপসানা বেগম।
এদের মধ্যে রুশনারা আলী টানা চারবার, টিউলিপ ও রুপা হক তিনবার এবং আপসানা একবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবারের নির্বাচনে লেবার পার্টি জয়লাভ করলে রুশনারা বা টিউলিপ যেকোনো একজন যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে বর্তমান এমপি রুশনারা আলীসহ ১১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে রুশনারা আলীকে ৪ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে।
![](https://www.shokalshondha.com/wp-content/uploads/2024/06/Rushanara-ali-60-1024x671.jpg)
২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ হিসেবে রুশনারা আলী বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে নির্বাচনে দাঁড়ান। কেবল সেবার নয়, এর পরের তিন নির্বাচনেও জয়ী হন তিনি। ২০১০ সাল থেকে টানা চারবার নির্বাচিত এই এমপি এবারও একই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসনে বর্তমান এমপি আপসানা তার সাবেক স্বামী স্বতন্ত্র প্রার্থী এহতেশাম হকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করছেন। আপসানা সর্বশেষ নির্বাচনে লেবার পার্টির মনোনয়নে এমপি হয়েছিলেন।
কী বলছেন প্রবাসী ভোটার-প্রার্থীরা
যুক্তরাজ্যের নির্বাচন নিয়ে প্রবাসীদের আগ্রহের শেষ নেই। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচারে অংশ নিচ্ছেন তারা।
লুটন যুক্তরাজ্যের অন্যতম বাংলাদেশি অধ্যুষিত শহর। সেখানে বসবাস করা মেহেদি হাসান খান বলেন, “আমি আগে স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিয়েছি। এবারই প্রথম জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেব।
“যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক মন্দা ও অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন, ফিলিস্তিন ইস্যু, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশদের অংশগ্রহণসহ নানা কারণে প্রবাসীদের কাছে আগ্রহ তৈরি করেছে এবারের নির্বাচন।”
তবে যুক্তরাজ্যের এবারের নির্বাচন নিয়ে আক্ষেপও রয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে।
লন্ডনের বাসিন্দা সরফ রাজ জুবের বলেন, “আমাদের নিজেদের মতবিরোধের কারণে বেশ কয়েকটি আসনে একাধিক বাংলাদেশি প্রার্থী লড়ছেন। কমিউনিটির লোকজন বিভক্ত হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এতে আমাদের ভোট ভাগ হয়ে যাচ্ছে। প্রার্থীদের মধ্যে ছাড় দেওয়ার মনোভাব থাকলে পার্লামেন্টে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপির সংখ্যা আরও বাড়ত।”
নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন জানতে চাইলে সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী বলেন, “আমি রুশনারা আলীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিয়েছি। কারণ তিনি প্রথম বাংলাদেশি এবং প্রথম বাংলাদেশি নারী যিনি এখানে টানা চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এটা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। অন্যদের চেয়ে রুশনারা যোগ্য। তার পাশে দাঁড়াতে হবে। আমাদের কমিউনিটির জন্যই তাকে বিজয়ী করতে হবে।”
যুক্তরাজ্যের এবারের নির্বাচনে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী রাবিনা খান।
লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির (লিবডেম) এই নেতা বলেন, “আমি কয়েকবার নির্বাচনে হেরেছি। কিন্তু সমাজ থেকে, কমিউনিটি থেকে দূরে যাইনি। সবসময় তাদের সঙ্গে ছিলাম। জনগণ আমাকে সবসময় পাবেন। আমি ১২ বছর কাউন্সিলার ছিলাম। আমার অনেক কিছু জানা আছে। ভোটাররাও পরিবর্তন চাচ্ছে এবার।”
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের তালিকায় আছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক এহতেশাম হক। এবারের নির্বাচন নিয়ে লাইম হাউস অ্যান্ড পপলার আসনের এই প্রার্থী বলেন, “দল বা স্বতন্ত্র বড় বিষয় নয়। কে মানুষের জন্য খাটতে পারে, কে পাশে থাকতে পারে- সেটাই বড় বিষয়।”
“আমার যোগ্যতা আছে। নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলাম। কাউন্সিলারের দায়িত্বও পালন করেছি। লাইম হাউস অ্যান্ড পপলার আসনের জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন- কাকে তারা ভোট দেবেন,” যোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এহতেশাম হক।