বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ঢাকার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে সম্পর্ক আরও জোরদার করবে বলে জানিয়েছেন দেশটির শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভ।
সোমবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে এসব কথা জানান তিনি।
সাক্ষাতে হেলেন লাফেভ বলেন, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে অভিনন্দন জানাতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র আনন্দিত। আগামীতে দিনগুলোয় ঢাকা ও ওয়াশিংটন আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারবে বলে প্রত্যাশা করছি।”
অন্তর্বর্তী সরকার আমূল সংস্কার কার্যক্রম সম্পাদনের দায়িত্ব নিয়েছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের এই কূটনীতিককে বলেন, “একটি যৌক্তিক সময় পরে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
এসময় যুক্তরাষ্ট্রের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি এবং সংখ্যালঘুদের বিষয় নিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানান।
জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক ‘সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত’ এবং অন্তর্বর্তী সরকার সকল নাগরিকের মানবাধিকার সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তীব্র ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনার সরকারের। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ৮ আগস্ট দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা দেখা করছেন প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে। জানাচ্ছেন নতুন সরকারের সঙ্গে সংহতি ও কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশার কথা।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স।
তিনি বলেন, ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস চলতি সপ্তাহে কনস্যুলার সেবা আবারও চালু করবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের হাজারো শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শ্রম, আইনের শাসন এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতেও বাংলাদেশকে ঘনিষ্ঠভাবে সহায়তা করতে চায় তার দেশ।
এসময় হেলেন লাফেভ রোহিঙ্গা পুনর্বাসন সম্পর্কেও কথা বলেন।
রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় দাতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর ফলে রোহিঙ্গাদের মাসিক খাদ্য সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।”
তিনি রোহিঙ্গাদের জীবিকার সুযোগ তৈরি করারও আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ওয়াশিংটনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বহুমাত্রিক সহায়তার ক্ষেত্রে কক্সবাজারের ক্যাম্পে বসবাসরত ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করার মত।
ড. ইউনূস বাংলাদেশে বন্যাদুগর্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে দাতাগোষ্ঠীকে একটি ‘কমন প্ল্যাটফর্ম’ গঠন এবং সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
সাক্ষাৎকালে মানবাধিকার ইস্যু, সাইবার সিকিউরিটি আইন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বিভিন্ন পারস্পারিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।